X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

কেমন হওয়া উচিত সেহরি-ইফতার

মাওলানা আবু সাঈদ
০৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫:৩৬আপডেট : ০৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫:৩৬

সাওম শব্দের অর্থ ইমসাক। ইমসাক অর্থ সংবরণ, নিবৃত্তি, কোষ্ঠবোধ্যতা, কৃচ্ছ্রতাসাধন ইত্যাদি। সাওম ফরজ করার উদ্দেশ্য বলতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমে বলেছেন, ‘তোমাদের ওপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে যেমনিভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল; যেন তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করো।’ (বাকারা : ১৮৩)

এই তাকওয়া শব্দের অর্থও বেঁচে থাকা, সংযম করা, বিরত থাকা। এই হিসেবে সাওম এবং তাকওয়া শাব্দিক অর্থে প্রায় সমার্থক। যদিও পারিভাষিক অর্থে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট কিছু বিষয় থেকে নিয়তসহ বিরত থাকাকে বলে সাওম। আর সর্বসময়ে সব রকম নিষিদ্ধ, অপছন্দনীয় এমনকি অনুত্তম বিষয় থেকে বিরত থাকাকে বলে তাকওয়া। এই আলোচনা থেকে সাওম ও তাকওয়ার মেলবন্ধন স্পষ্ট হয়ে যায়। আমরা এই ফলাফলে উপনীত হতে পারি যে রমজান মাস তাকওয়া অবলম্বনের মাস, তাকওয়ার প্রশিক্ষণের মাস, নফসের কামনা-বাসনা নিয়ন্ত্রণের ট্রেনিং পিরিয়ড।

মানুষকে পাপ কাজে আহ্বানকারী এবং তাকওয়া পরিপন্থি কাজে উদ্বুদ্ধকারী শক্তি দুটি। এক. শয়তানি শক্তি, দুই. নফসানি শক্তি।  রমজান মাসে সিয়াম সাধনার উদ্দেশ্য নফসের শক্তি বাড়ানো।

সিয়াম সাধনার মাধ্যমে তাকওয়া অবলম্বনের রাস্তা নিষ্কণ্টক ও বাধাহীন করার লক্ষ্যে আল্লাহ তাআলা শয়তানকে এমাসের শুরুতেই বন্দি করে ফেলেন। হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শয়তান এবং দুষ্টু জিনদের রমজানের প্রথম রাতেই শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় ...। (জামে তিরমিযি : ৬৮২)

একইসঙ্গে এই মাসে নফসানি শক্তিকে দমনের জন্য ইমসাক তথা সংযমের কর্মসূচি দিয়েছেন আল্লাহ। নফস যেসব বিষয় প্রবলভাবে কামনা করে, বৈধতার গণ্ডি ছাড়িয়ে অনেক সময় অবৈধ সীমায় প্রবেশে তৎপর হয়ে ওঠে; সিয়াম সাধনার মাধ্যমে বান্দা যেন সেসব বিষয় থেকে নফসকে নিয়ন্ত্রণ করতে শেখে। নফসে আম্মারাকে দুর্বল করে শরিয়তের অধীন করতে পারে। নফসকে নিজের কাবুতে রাখতে পারে। নফসের তাবেদারি না করে বরং আল্লাহর হুকুমের গোলাম যেন বানাতে পারে নফসকে। এই মহৎ উদ্দেশ্যেই সিয়াম সাধনা। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘যে রবের সামনে দাঁড়ানোকে ভয় করে এবং নফসকে কামনা-বাসনার অনুগামী হওয়া থেকে বিরত রাখে; নিশ্চয় জান্নাত তার আশ্রয়স্থল।’ (নাযিআত: ৪০-৪১)

হাদিস শরিফে রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ ততক্ষণ পরিপূর্ণ মুমিন হবে না, যতক্ষণ না তার কামনা-বাসনা শরিয়তের অনুগামী হয়। (মিশকাতুল মাসাবিহ : ১৬৭)

শয়তানি শক্তির অবর্তমানে নফসানি শক্তির নিয়ন্ত্রণই যেহেতু উদ্দেশ্য সিয়াম সাধনার, তাই নফস খুশি হয়, নফস সবল হয় কিংবা নফস প্রলুব্ধ হয় যেসব বিষয়ের প্রতি সেগুলো থেকে যথাসাধ্য সংযম করাই সাওমের দাবি।

খাবার কম খাওয়া বা খাবারে বিলাসিতা বর্জন নফসে আম্মারাকে দুর্বল ও দমন করার একটি কার্যকর প্রক্রিয়া। হাদিস শরীফে এসেছে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে যুব-সমাজ, তোমাদের মধ্যে যে বৈবাহিক জীবনের ব্যয়ভার বহনে সক্ষম সে যেন বিয়ে করে। কারণ তা দৃষ্টিকে নিচু করে দেয় এবং লজ্জাস্থানের হেফাজতে যথেষ্ট সহায়ক। আর যে ভরণপোষণে সমর্থ নয় সে যেন সাওম পালন করে। কেননা সাওম যৌন কামনা দমনকারী। (মুসলিম : ৩২৯১)

ইসলাম জীবনব্যবস্থা বিলাসিতা বর্জন, স্বাভাবিকতা ও মধ্যমপন্থাকে উৎসাহিত করে। নফসকে দমন ও তাকওয়া অর্জনের এই মাসে দিনের বেলায় যেমন সংযম করা হয়, রাতের বেলায়ও আবশ্যক প্রয়োজনের বাইরের বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে সংযম বজায় রাখা। সন্ধ্যা বেলায় বাহারি ইফতারে হুমড়ি খেয়ে পড়া, রাতে ও সেহরিতে রসনাবিলাসী হরেক রকম খাবারের আয়োজন নফসকে দুর্বল না করে আরও লোভাতুর ও শক্তিশালী করে তোলে। ফলে অনেকাংশেই বিঘ্নিত হয় রোজার উদ্দেশ্য।

একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি আরেকটু বোঝা যেতে পারে। ধরুন, ডায়াবেটিকসের কারণে ডাক্তার আপনাকে রাতে আর সকালে একটি করে রুটি খেতে বলেছেন। এখন আপনি এক সংখ্যাটা ঠিক রেখে আধা কেজি আটা/ময়দা দিয়ে একটি রুটি বানিয়ে খেলেন। এতে কি ডাক্তারের পথ্যের ফায়দা পাওয়া যাবে? ডাক্তারের উদ্দেশ্য কি এমন ছিল? অবশ্যই না।

কুরআন ও সুন্নায় রমজান মাসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইবাদতের পরিমাণ বৃদ্ধির কথা আছে। কিন্তু খাবার-দাবারের মান ও পরিমাণ বৃদ্ধির কথা কোথাও পাওয়া যায় না। আহারের মেন্যু রমজানের আগে যা ছিল রমজানেও তাই থাকতো। হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও উঁচু দস্তরখানে (টেবিলে) বসে এবং বিভিন্ন প্রকার চাটনি ও হজমির ছোট ছোট পেয়ালা নিয়ে খাননি। কখনো তাঁর জন্য পাতলা রুটি বানানো হয়নি। (জামে তিরমিযি : ১৭৮৮)

রমজানকেন্দ্রিক ভোজন-বিলাসিতার প্রভাব পড়ে বাজার হাটে। খাদ্য সামগ্রীর দোকানে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় ও সীমাহীন চাহিদার কারণে পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দেয় সুযোগসন্ধানী বিক্রেতারা। ফলে ভোগান্তিতে পড়ে গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ। সংসার চালাতে হিমশিম খায় অনেকেই। রহমত বরকত মাগফিরাতের মাস রমজান হয়ে ওঠে স্বল্প আয়ের অনেক মানুষের জন্য আতঙ্কের মাস। তাই আমাদের উচিত রমজানকেন্দ্রিক বিলাসী আয়োজন পরিহার করা। রমজান মাসেও রমজানপূর্ববর্তী জীবনের স্বাভাবিকতা বজায় রাখা।

একটি ভুল কথা: রোজাদারের খাবারের হিসাব হবে না

কোনও কোনও মানুষকে বলতে শোনা যায়, রোজাদারের খাবারের কোনও হিসাব হবে না। এটি একটি ভুল কথা।

খাবারের হিসাব বলতে সাধারণত খাবারের অপচয় বোঝায়। আর কোরআন-হাদিসে এমন কোনও কথা নেই যে রোজাদার যদি খাবারের অপচয় করে তাহলে তার কোনও হিসাব হবে না। বে ব্যক্তিই খাবার বা যেকোনও বস্তুই অপচয় করুক আল্লাহর দরবারে তাকে এর হিসাব দিতে হবে। সুতরায় রোজাদার হোক বা যেই হোক খাবার বা যেকোনও বস্তুর অপচয় থেকে বেঁচে থাকা জরুরি।

আর পানাহারের ক্ষেত্রে হারাম থেকে বেঁচে থাকা ফরজ, তা তো সবসময় এবং সর্বাবস্থার বিধান। হিসাবের প্রশ্ন আসে হালালের ক্ষেত্রে; নিয়ামতের যথাযথ ব্যবহার হলো কি না। হারামের ওপর তো সরাসরি শাস্তি হয়। তাই প্রচলিত এ বাক্য শুনে এরূপ মনে করা যে, হারাম খেলেও কোনও হিসাব নেই তা আরও ভয়াবহ। (আল কাউসার)

লেখক: শিক্ষক, মাদ্রাসা দারুর রাশাদ।

/এফএস/
সম্পর্কিত
আজ ঈদ
ঈদুল ফিতরে করণীয়
চাঁদ দেখা যায়নি, ঈদ বৃহস্পতিবার
সর্বশেষ খবর
আদালতে ড. ইউনূস
আদালতে ড. ইউনূস
চীনের দক্ষিণাঞ্চলে সড়ক ধসে নিহত ৩৬
চীনের দক্ষিণাঞ্চলে সড়ক ধসে নিহত ৩৬
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
রাশিয়ার বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের
রাশিয়ার বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের
সর্বাধিক পঠিত
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
মিল্টন সমাদ্দার আটক
মিল্টন সমাদ্দার আটক
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
সিয়াম-পরীর গানের ভিউ ১০০ মিলিয়ন!
সিয়াম-পরীর গানের ভিউ ১০০ মিলিয়ন!