নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধনের শর্ত প্রতিপালনের তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নিবন্ধিত ৩৯ দলের মধ্যে নির্ধারিত সময়ে ২৩টি দল ইসিকে সে তথ্য সরবরাহ করেছে। বিএনপিসহ তিনটি দল এসব তথ্য দিতে ইসির কাছে অতিরিক্ত সময় চেয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বাকি ১৩টি দলের কাছ থেকে শেষ দিন বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) বিকাল পর্যন্ত ইসি সচিবালয় কোনও জবাব পায়নি।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত সেপ্টেম্বরে নিজেদের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। এতে রাজনৈতিক দলগুলো নিবন্ধনের শর্ত যথাযথভাবে প্রতিপালন করছে কিনা, তা খতিয়ে দেখার ঘোষণা দেওয়া হয়। ইসি সূত্র জানায়, ইসিতে নিবন্ধিত ৩৯টি দলের কাছ থেকে এ সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে গত ১৩ অক্টোবরে চিঠি দেওয়া হয়। তাদের ৩০ কার্যদিবসের (২৪ নভেম্বর) মধ্যে এসব তথ্য দিতে বলা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার সে সময় শেষ হয়।
ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তথ্য সরবরাহ করেছে সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, এনপিপি, তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশ ইসলামি ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বিএনএফ, মুক্তিজোট, গণফোরাম, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় পার্টি (জেপি) ও এলডিপিসহ ২৩টি দল।
ইসি সূত্র জানায়, ইসির চাওয়া তথ্য দিতে বিএনপি ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চেয়ে আবেদন করেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ কংগ্রেস ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) আরও তিন মাস সময় চেয়ে আবেদন করেছে। বাকিদের কোনও তথ্য বা আবেদন বুধবার পর্যন্ত হাতে পায়নি ইসি সচিবালয়।
ইসি সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তারা ২৩টি দলের কাছ থেকে জবাব পেয়েছেন। এর বাইরে হয়তো কেউ কেউ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বরাবর আবেদন দিয়ে থাকতে পারেন। রবিবার এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে নথি তোলা হবে। কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
২০০৮ সালে রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের নিয়ম আইনে যুক্ত করা হয়। কোনও দল ইসিতে নিবন্ধিত না হলে দলীয়ভাবে কোনও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে না। এই নিবন্ধন পেতে আইনে নির্ধারিত শর্ত পূরণ করতে হয়। আবার নিবন্ধন পাওয়ার পর নির্ধারিত কিছু শর্ত পালন করার বিধান আছে। এগুলো না মানলে ইসি ওই দলের নিবন্ধন বাতিল করে দিতে পারে।
ইসির কর্মপরিকল্পনায় বলা আছে, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ইসি এই তথ্যগুলো সংগ্রহ করবে। কিন্তু সেটি করা যায়নি। এই কাজে কর্মপরিকল্পনার চেয়ে ইতোমধ্যে দুই মাস পিছিয়ে পড়েছে ইসি। দলগুলোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তথ্য সরবরাহ করার জন্য সময় আবারও বাড়ানো হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। ইসির কর্মপরিকল্পনায় বলা আছে, দলগুলো থেকে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে আগামী বছরের মে মাসের মধ্যে দলগুলোর নিবন্ধন বহাল সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এর আগে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, তারা মে মাসের মধ্যে এই কাজ করতে পারবেন বলে আশা করছেন।
তিনটি শর্তের যেকোনও একটি পূরণ করলে কোনও দলকে নিবন্ধন দেওয়া হয়। সেগুলো হলো—১. বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে দলীয় নির্বাচনি প্রতীক নিয়ে কমপক্ষে একটি আসনে জয়। ২. যেকোনও একটি আসনে দলীয় প্রার্থী মোট প্রদত্ত ভোটের ৫ শতাংশ ভোট পাওয়া ৩. কেন্দ্রীয় কমিটিসহ একটি কেন্দ্রীয় কার্যালয়, অন্তত এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর জেলা কার্যালয় এবং অন্তত ১০০টি উপজেলায় কার্যালয় এবং প্রত্যেকটিতে সদস্য হিসেবে অন্তত ২০০ জন ভোটারের তালিকাভুক্তি।
ইসি সূত্র জানায়, এখন নিবন্ধিত দলগুলো এই শর্ত পূরণ করছে কিনা, সে সম্পর্কিত তথ্য তাদের কাছে চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব পর্যায়ে কমিটি নির্বাচন, দলের সব স্তরে নারী প্রতিনিধিত্ব, ছাত্র ও শ্রমিক সংগঠনকে অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠন হিসেবে রাখা, বিভিন্ন নির্বাচনে প্রার্থিতার জন্য তৃণমূলের ভোটে প্যানেল প্রস্তুত করা হচ্ছে কিনা—এসব বিষয়েও তথ্য চাওয়া হয়েছে। সব দলের তথ্য পাওয়ার পর এগুলো মাঠ পর্যায়ে যাচাই বাছাই করে দেখা হবে।
এর আগে কে এম নূরুল হুদা কমিশনও দলগুলো শর্ত পালন করছে কিনা, তা যাচাই করেছিল। শর্ত মেনে না চলায় গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালে ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, ২০২০ সালে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টি-পিডিপি এবং ২০২১ সালে জাগপার নিবন্ধন বাতিল করেছিল ইসি। আর ২০১৩ সালে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেছিল আদালত। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে দলটির নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে ইসি।