X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

কূটনৈতিক-রাজনৈতিক চ্যানেলে বিএনপিকে বার্তা আ.লীগের

মাহফুজ সাদি
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২২:২৬আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২২:৩৯

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছরেরও কম সময় বাকি। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নির্বাচনি পরিবেশের দেখা মিলছে না এখনও। তবে পশ্চিমা কয়েকটি দেশের কূটনীতিকরা সক্রিয় হয়েছেন সম্প্রতি। তাদের দিয়েই বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে ‘কিছু ছাড়’ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে আওয়ামী লীগ। কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক চ্যানেলে সেই বার্তা দেওয়া হচ্ছে।

কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, বিএনপি বেশ কিছু দিন ধরে পশ্চিমা কূটনীতিকদের সঙ্গে প্রকাশ্যে ও গোপন বৈঠকে কিছু বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সঙ্গে কূটনীতিকদের বৈঠকেও সেই বিষয়গুলো উঠে এসেছে। তবে বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার বিষয়ে তাদের (কূটনীতিক) মাধ্যমে প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিএনপিকে ছাড় দেওয়ার বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে—নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা, নির্বাচনি রাজনীতি বা প্রচারে বাধা না দেওয়া, নেতাকর্মীদের নামে থাকা মামলাগুলো প্রত্যাহার বা নিষ্পত্তি করা, নতুন করে মামলা দায়ের বা গ্রেফতার না করা, সংলাপে বসে আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সমাধানে আসা। এসব বিষয়ে সরকারের ছাড় দেওয়ার ব্যাপারে কূটনৈতিক চ্যানেলে প্রস্তাব দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

ক্ষমতাসীন দলের অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বিদেশিদের এবারের সক্রিয়তাকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। সেজন্য কূটনৈতিক চ্যানেলের বাইরে রাজনৈতিক চ্যানেলেও বিএনপি নেতাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করতে পারেন আওয়ামী লীগের হাফ ডজন নেতা।

সূত্রমতে, উভয় চ্যানেলেই নির্বাচন নিয়ে কিংবা প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির সংলাপ আহ্বানের ব্যাপারে বিএনপির মনোভাব বা কৌশল জানার চেষ্টা করছে সরকার ও সরকারি দল। এতে ইতিবাচক সাড়া মিললে আনুষ্ঠানিক আলোচনার দরজা খুলতে পারে। তার আগে চাপ তৈরি করতে বিএনপির কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচি পালন করবে আওয়ামী লীগ।

সবশেষ বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর গুলশানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত এবং ইইউভুক্ত সাতটি দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের একটি বৈঠক হয়। এতে জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, সুইডেনের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে আলোচনায় নেতৃত্ব দেন সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ, দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ ও কার্যনির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাত।

বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে বিপ্লব বড়ুয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বৈঠকে কোনও দলের পক্ষ থেকে কূটনীতিকরা কোনও প্রস্তাব দেননি। আমরাও সুনির্দিষ্ট কোনও প্রস্তাব দেইনি। তারা আমাদের অবস্থান জানার চেষ্টা করেছেন, আমাদের কথাগুলো শুনেছেন। তারা নির্বাচনের প্রিপারেশন জানতে চেয়েছেন, আমরা জানিয়েছি।’

বিপ্লব বড়ুয়া আরও বলেন, ‘গত দুই নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব রাজনৈতিক দলকে সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। নির্বাচন কমিশন গঠনের সময়ও রাষ্ট্রপতি সংলাপের আহ্বান জানিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনেও দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। এগুলোর কোনোটিতে বিএনপি সাড়া দেয়নি, আসেনি। তাদের সঙ্গে আলোচনার, কথা বলার দরজা খোলা রাখেনি তারা। এসব বিষয় আমরা পশ্চিমা কূটনীতিকদের জানিয়েছি।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বলেন, ‘বৈঠকের আলোচনার বিষয়ে তো আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক (ওবায়দুল কাদের) ব্রিফ করেছেন, সেখানে বিস্তারিত রয়েছে। তার বাইরে বিশেষ কিছু আর বলার নেই। ওগুলো নিয়েই আলোচনা হয়েছে।’

ইইউভুক্ত দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকের পর বৃহস্পতিবার ওবায়দুল কাদেরের ব্রিফিংয়ে উঠে আসে—বিএনপি নির্বাচনে যেতে এবং সংলাপে আগ্রহী নয়, তারা ফের সহিংসতার পথে হাঁটতে চাইছে। বিদ্যমান সংবিধানের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই, চাপের কাছে আওয়ামী লীগ নতি স্বীকার করবে না। বিএনপির জনসমর্থন নেই, আওয়ামী লীগের বিকল্প নেই। আগামী নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য, সুষ্ঠু, অবাধ করতে চায় সরকার। নির্বাচন কমিশন স্বাধীন ও কর্তৃত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সরকারের পক্ষ থেকে কোনও ধরনের হস্তক্ষেপ না করা, বরং সব ধরনের সহযোগিতা করা।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য আর আমাদের বক্তব্য ভিন্ন কিছু নেই। উনি যা বলেছেন, তার প্রতিধ্বনি করেছি। কারণ, আমাদের দল একই ধারণা নিয়ে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বৈঠকে কোনও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা তো কারও নির্দেশনা শুনবো না। আমাদের নির্দেশনা হলো—দেশের সংবিধান।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, ‘যে দল (বিএনপি) রাষ্ট্রপতির সংলাপকে উপেক্ষা করে, ইসি তাদের দুইবার সংলাপে আমন্ত্রণ জানিয়েছে, তারা আসেনি। সংলাপের বিষয়ে আমরা যা দেখতে পাচ্ছি, তারা অনাগ্রহী। বিএনপি মনের দিক থেকে নির্বাচনে ইচ্ছুক না।’

বিএনপিও গত কয়েক মাস ধরে এভাবে বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে গিয়ে বৈঠক করে জানিয়েছে—দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। এ বিষয়টি কি আলোচনায় উঠেছে—এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তারা মাঝে মাঝেই আসে। আমরা দেখতে পাই, শুনতে পাই। তারা তো চুপি চুপি আসে। গোপনে গোপনে আসে। জানান না দিয়ে আসে। আমরা কিন্তু কথা বলেই এসেছি, আমাদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। আমরা এসেছি। সাংবাদিকদের কাছেও বিষয়টি গোপন রাখিনি।’

অপরদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, কূটনীতিকদের বাইরে দলীয় নেতাদের মাধ্যমে নিজস্ব চ্যানেলেও বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এই প্রক্রিয়া এখন প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও আগামী এপ্রিল-মে নাগাদ গতি আসতে পারে। এই সময়ে পশ্চিমাদের ভূমিকা পর্যবেক্ষণ করা হবে, বিএনপির মনোভাব বোঝার চেষ্টা করা হবে। নতুন রাষ্ট্রপতি এপ্রিলে দায়িত্ব গ্রহণের পর সংলাপের বিষয়টি সামনে আসতে পারে। তার আগ পর্যন্ত বিএনপির ওপর রাজনৈতিক চাপ অব্যাহত রাখবে আওয়ামী লীগ।

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
অপহৃত ১০ বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়েছে আরাকান আর্মি
অপহৃত ১০ বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়েছে আরাকান আর্মি
ধানমন্ডিতে ছাদ থেকে পড়ে গৃহকর্মী আহত 
ধানমন্ডিতে ছাদ থেকে পড়ে গৃহকর্মী আহত 
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঢাকায় স্বস্তির বৃষ্টি, কমলো তাপমাত্রা
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঢাকায় স্বস্তির বৃষ্টি, কমলো তাপমাত্রা
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা