X
শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫
২৬ বৈশাখ ১৪৩২

অর্ধশতাধিক আসনে দুঃশ্চিন্তায় নৌকার প্রার্থীরা

মাহফুজ সাদি
০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০১আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০১

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৪টিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী রয়েছেন। দলটির মিত্র হিসেবে পরিচিত সংসদের বিরোধীদল জাতীয় পার্টি (জাপা) ২৮৬টি আসনে প্রার্থী দিলেও ২৫০টিতে লাঙ্গলের প্রার্থী আছেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক দলগুলোও আলাদাভাবে প্রার্থী দিয়েছে। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ১৪ দল ও জাতীয় পার্টিকে নিয়ে অতীতের মতো মহাজোট করে এবার নির্বাচন করবে আওয়ামী লীগ। শরিক দলগুলোকে ছাড় দেওয়া আসনের সংখ্যা ৫০ থেকে ৬০টি হতে পারে। এর বাইরে নির্বাচনে আসা অন্যান্য কয়েকটি দলের নেতাদের নির্বাচিত হয়ে আসার পথ সুগম করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে অর্ধশতাধিক আসনে নৌকার প্রার্থীরা ছাড়ের কারণে শেষ পর্যায়ে ছিটকে পড়ার দুঃশ্চিন্তায় আছেন বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, দীর্ঘদিনের মিত্রতার কারণে ১৪ দলের শরিক দলগুলো এবং জাতীয় পার্টি (জাপা) আওয়ামী লীগের কাছে আসন ছাড় চাইছে। সে কারণে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে আসন ছাড়ের নিশ্চয়তা পেতে দৌড়ঝাঁপ করছেন দলগুলোর নেতারা। প্রধান মিত্র আওয়ামী লীগের ছাড় না পেলে এসব দলের অনেক প্রার্থীর জয়ের মুখ দেখা প্রায় অসম্ভব হওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এমন বাস্তবতায় আওয়ামী লীগ ১৪ দলকে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার কথা জানালেও জাতীয় পার্টির ব্যাপারে এখনও কিছু জানায়নি।

সূত্রমতে, নির্বাচনি বাস্তবতায় আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলকে নিয়ে মহাজোট করে নির্বাচন করতে চাইছে। সে জন্য শরিক দলগুলোর নেতাদের মধ্যে এখন আসন বণ্টন বা সমঝোতা নিয়ে নানা চ্যানেলে আলোচনা চলছে। নানা মাধ্যমে পাওয়া সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, ৫০টির বেশি আসনে শরিকদের ছাড় দিতে পারে আওয়ামী লীগ। জোট গঠন এবং কোন কোন আসনে ছাড় দেওয়া হবে, তা জানতে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত (১৭ ডিসেম্বর) অপেক্ষা করতে হবে।

এবার ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৮টিতে দলীয় প্রার্থী দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তবে আসনে ৩০৩টি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেন দলটির নেতারা। এর মধ্যে পাঁচটি আসনে তাদের দুজন করে প্রার্থী হন। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ৭৪৭টি মনোনয়নপত্র দাখিল করা হয়, যার সিংহভাগই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। মোট ২ হাজার ৭১৬ জন মনোনয়নপত্র জমা দিলেও যাচাই-বাছাই শেষে ৭৩১ জনেরটি বাতিল হওয়ায় ১ হাজার ৯৮৫ জনের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করা হয়। বাতিল হওয়া প্রার্থীদের মধ্যে ৪২৩ জন স্বতন্ত্র এবং ৩০৮ জন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী। ফলে ২৯৮টি আসনের মধ্যে ২৯৪টিতে নৌকার প্রার্থী রয়েছেন।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একাধিক সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ১৪ দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের আদর্শিক জোট রয়েছে। জাতীয় পার্টির সঙ্গেও অতীতে নির্বাচনি জোট হয়েছে। এবারও বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কৌশলগত কারণে মহাজোট গঠন নিয়ে আলোচনা চলছে। জোট হলে আসন ছাড়েরও বিষয় আসবে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে জোটের আসন বণ্টন করা হবে। এ নিয়ে ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হলেও জাতীয় পার্টির সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা হচ্ছে। শিগগিরই জোট ও আসন ছাড়ের বিষয়টি চূড়ান্ত হলেও কৌশলগত কারণে ঘোষণা ১৭ ডিসেম্বরের দিকে আসতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ১৪ দলকে ১০টির মতো আসনে ছাড় দিতে পারে আওয়ামী লীগ। দলটির কাছে জাতীয় পার্টি ছাড় পেতে পারে ৪০টির মতো আসনে। এ ছাড়া তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম ও সুপ্রিম পার্টিসহ সম্ভাব্য বিরোধী জোটসহ আরও কয়েকটি দলকে ‘বেশ কিছু’ আসনে নির্বাচিত হওয়ার পথ সুগম করে দিতে পারে আওয়ামী লীগ। ফলে সব মিলিয়ে ৮০টির মতো আসনে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্যান্য দলের প্রার্থীরা জয় পেতে পারেন। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে দুশ্চিন্তা তো আছেই। মহাজোট গঠনের বিষয়টি সামনে আসায় সম্ভাব্য এসব আসনের নৌকার প্রার্থীরা টেনশনে আছেন বলে জানিয়েছেন। তবে তারা মুখ খুলতে রাজি নন। এমনকি জাতীয় পার্টির শক্তিশালী প্রার্থীদের কয়েকটি আসনে মনোনয়ন বাতিল হওয়া আওয়ামী লীগ নেতাও এ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে চাইছেন না।

সূত্র জানিয়েছে, শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দল ও জাতীয় পার্টি মিলে মহাজোট গঠন করে নির্বাচন করতে পারে। আর নতুন নিবন্ধিত তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম ও সুপ্রিম পার্টিসহ কয়েকটি দল নিয়ে ‘জাতীয়তাবাদী জোট’ নামে বিরোধী জোট গঠিত হতে পারে। শেষ পর্যন্ত এমনটি হলে আগামী জাতীয় সংসদে নতুন বিরোধী দল বা নতুন বিরোধী জোট দেখা যেতে পারে।

জানা গেছে, মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে যান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের, মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ও প্রেসিডিয়াম সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে অতীতের মতো নির্বাচনি মহাজোট গঠন এবং আসন বণ্টন বা সমঝোতা নিয়ে আলোচনা করেন শেখ হাসিনার সঙ্গে। বিষয়টি সরাসরি না বললেও পরোক্ষভাবে স্বীকার করেছে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি।

জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে বুধবার (৬ ডিসেম্বর) সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘রাজনীতির ভিন্নমত থাকাটাই হচ্ছে গণতন্ত্র। একমত হতে না পারাটাও গণতন্ত্র। ১৪ দলের সাথে আলোচনা হয়েছে, দুই-এক দিনের মধ্যে আসনের বিষয়টি ঠিক হবে। আর জাতীয় পার্টি একসময় আমাদের মহাজোটে ছিল। তারা নির্বাচন করছে। সুতরাং আলোচনা হওয়ার আগে কিছু বলা সম্ভব নয়।’

বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের ১৪ দল মিলেমিশে একাকার হওয়ার বিষয়টি উড়িয়ে দিলেও তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি প্রায় ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়েছে। আর আসন ভাগাভাগির ব্যাপারে বাস্তবতা রয়েছে। সেটা আলোচনার বিষয়। সময় হলে বিরোধী দল দাঁড়িয়ে যাবে। তাছাড়া এখানে আরও অনেক দল আছে। তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম, সুপ্রিম পার্টিসহ বিভিন্ন দল রয়েছে।’

এদিকে, বুধবারও জাতীয় পার্টির দুই নেতার সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে কয়েকজন নেতার বৈঠক হয়। রাজধানী একটি অভিজাত এলাকায় হওয়া এ বৈঠকে আরও ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম। এদিন সন্ধ্যার পর আবারও জাতীয় পার্টির কায়েকজন নেতা গণভবনে গিয়েছিলেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘আগামী নির্বাচনকে কীভাবে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। জাতীয় পার্টি প্রার্থী দিয়েছে, তারা তাদের নির্বাচন করবে। আমরা আমাদের প্রার্থী দিয়েছি, আমরা আমাদের নির্বাচন করব।’ তবে জোট গঠন বা আসন বণ্টন নিয়ে আলোচনা কত দূর এগুলো, সে বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি তিনি।

জাতীয় পার্টির সাথে আওয়ামী লীগের বৈঠক সম্পর্কে জানতে চাইলে বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে জাতীয় পার্টির সাথে আমাদের বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে জাতীয় পার্টি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হবে এবং এই নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি সর্বশক্তি দিয়ে অংশগ্রহণ করবে এবং জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে জাতীয় সংসদে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে।

২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দল ও জাতীয় পার্টিকে নিয়ে প্রথমবারের মতো মহাজোট গঠন করে নির্বাচনে অংশ নেয় আওয়ামী লীগ। তখন বিএনপির নেতৃত্বে চার দলীয় জোট নির্বাচন করে। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি জোট বর্জন করায় ১৪ দল নিয়ে ভোট করে আওয়ামী লীগ আর জাতীয় পার্টি আলাদাভাবে নির্বাচন করে। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জোট অংশ নেওয়ায় আবার মহাজোট করে ভোটে করে আওয়ামী লীগ। এবার বিএনপির নেতৃত্বে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলো নির্বাচন বর্জন করায় নতুন কৌশল নিয়েছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন এড়াতে মহাজোট গঠন করছে দলটি, যার বিপরীতে থাকবে নতুন নিবন্ধিত কয়েকটি দলের জোট।

এর আগের দিন মঙ্গলবার জোটগতভাবে নির্বাচনের কথা জানিয়ে ১৪ দলের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু বলেছিলেন, জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে ১৪ দলের শরিকদের আসন ভাগাভাগি নির্ধারিত হবে। জোটের আসনবিন্যাস ও প্রার্থী চূড়ান্ত করতে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’

আরও পড়ুন:

আসন ছাড় বাড়তে পারে ওয়ার্কার্স পার্টি-জাসদের

জোট-মহাজোট নিয়ে আ.লীগে দুই ‘বিকল্প চিন্তা’ 

/এমএস/
সম্পর্কিত
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে সমাবেশ শুরু
আ. লীগ নিষিদ্ধের দাবির সঙ্গে ইলিয়াস কাঞ্চনের জেপিবির একাত্মতা
শেখ হাসিনার সঙ্গে মিটিংয়ের অভিযোগে আ.লীগ নেতা গ্রেফতার
সর্বশেষ খবর
ফরিদপুরে বিস্ফোরক মামলায় আওয়ামী লীগের ৫ নেতাকর্মী গ্রেফতার
ফরিদপুরে বিস্ফোরক মামলায় আওয়ামী লীগের ৫ নেতাকর্মী গ্রেফতার
নির্বাচন বিলম্বিত হলে জনগণ রাস্তায় নামবে: ফারুক
নির্বাচন বিলম্বিত হলে জনগণ রাস্তায় নামবে: ফারুক
রাতেই পাকিস্তান ছাড়বে রিশাদ-নাহিদরা: ফারুক
রাতেই পাকিস্তান ছাড়বে রিশাদ-নাহিদরা: ফারুক
বিক্ষোভকারীদের ওপর ‘ঠান্ডা পানি স্প্রে’ করছে সিটি করপোরেশন 
আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে সমাবেশবিক্ষোভকারীদের ওপর ‘ঠান্ডা পানি স্প্রে’ করছে সিটি করপোরেশন 
সর্বাধিক পঠিত
জার্সি পরেই যমুনার সামনে দায়িত্বে রমনার ডিসি মাসুদ আলম
জার্সি পরেই যমুনার সামনে দায়িত্বে রমনার ডিসি মাসুদ আলম
‘সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগে জড়িতদের শাস্তি দিতে না পারলে আমি চলে যাবো’
‘সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগে জড়িতদের শাস্তি দিতে না পারলে আমি চলে যাবো’
নৌ পুলিশের অভিযানে ২৭৬ জন গ্রেফতার, ১০ মরদেহ উদ্ধার
নৌ পুলিশের অভিযানে ২৭৬ জন গ্রেফতার, ১০ মরদেহ উদ্ধার
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে ৫৬ জনের পদত্যাগ, তুলেছেন দুর্নীতির অভিযোগ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে ৫৬ জনের পদত্যাগ, তুলেছেন দুর্নীতির অভিযোগ
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে পদত্যাগ করলেন স্নিগ্ধ
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে পদত্যাগ করলেন স্নিগ্ধ