দলের নেতাকর্মীদের পদত্যাগের খবরে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘আমাদের পার্টি ঠিক আছে। পার্টি নিয়ে অনেকে অনেক ডিস্টার্ব করতে চাচ্ছে। এগুলো আমরা জানি। তবু কিছুই করতে পারবে না। তবে চেষ্টা করবে।’
বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে জি এম কাদের এসব কথা বলেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের সিনিয়র কয়েকজন নেতার মনোনয়ন না পাওয়া এবং নির্বাচনে অনেক নেতার পরাজয়ের পর দলের ভেতর থেকেই প্রতিবাদ শুরু হয়। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত একটি সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির ঢাকা মহানগরের ১০টি থানার ৬৭১ জন পদত্যাগ করেছেন। কয়েকটি সূত্র জানায়, সংখ্যাটি ৯৬৮ জন।
এই সংবাদ সম্মেলনে মূল নেতৃত্বে ছিলেন দল থেকে বহিষ্কৃত জাতীয় পার্টির সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু ও সুনীল শুভ রায়, ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহিয়া চৌধুরী, আমানত হোসেন প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম পাঠান।
দলত্যাগীদের নিয়ে জানতে চাইলে বাংলা ট্রিবিউনকে জি এম কাদের বলেন, ‘জাতীয় পার্টি যেখানে আছে সেখানেই থাকবে। এটার হওয়ার কিছু নেই। সংবাদমাধ্যম থেকে এটাকে এইভাবে প্রোপাগান্ডা... প্রচার করছে কেন এটা আমার কাছে রহস্য!’
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান প্রশ্ন রাখেন, ‘তারা ৬৭১ জন পদত্যাগ করেছে। সেখানে লোক ছিল কতজন? আর তারা সবাই জাতীয় পার্টির লোক ছিল কিনা? এটা ভ্যারিফাই না করেই কেন নিউজ প্রকাশ করছে?’
জি এম কাদের বলেন, ‘ঢাকা মহানগরের ২১টা ইউনিটের সভাপতি আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন একটা প্রোগ্রামের জন্য। তারা তো গতকাল (বুধবার) আমার সঙ্গেই ছিল। এখন যারা পদত্যাগ করেছে তাদের তালিকা কী? তারা জাতীয় পার্টির লোক কিনা? এগুলো যাচাই করে তারপর না নিউজ করা দরকার ছিল।’
আজ শফিকুল ইসলাম সেন্টু অভিযোগ করেছেন সংবাদ সম্মেলনে– এমন প্রশ্ন করলে প্রতিবেদককে থামিয়ে দিয়ে জি এম কাদের বলেন, ‘কোন ভাই কী করছে সেটা আমি বলবো না। যেসব অভিযোগ করছে এগুলোও তথ্যসমৃদ্ধ না। তারপরও গণমাধ্যম এগুলো গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করছে। এখানে আমার কাছে রহস্যাবৃত মনে হচ্ছে। সংবাদমাধ্যমের একটা এথিকস আছে তো।’
বৃহস্পতিবার বিকালে সংবাদ সম্মেলনে শফিকুল ইসলাম সেন্টু অভিযোগ করেন, ‘জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিব একটি ফাঁদের মধ্যে পড়ে গেছেন। তার আশপাশে এখন যারা আছেন তারা ঘুঘুর ফাঁদ পেতেছে। এই ফাঁদ থেকে তিনি (জি এম কাদের) বেরুতে পারবেন না। এই ফাঁদের সুতা মহাসচিবের হাতে, আর সে সুতায় ঘুরছেন জি এম কাদের।’
এ প্রসঙ্গে জিএম কাদের বলেন, ‘এটা যারা বলে আর যারা শোনে তারা... আমি কি নাবালক নাকি! আমি দায়িত্বজ্ঞানহীন মানুষ নাকি! আমার কি কোনও নলেজ নাই নাকি! আমি কি উপযুক্ত মানুষ না, নাকি যে নাবালকের মতো মানুষ, আমাকে বোঝাবে, আমি বুঝবো।’
বহিষ্কৃত নেতা শফিকুল ইসলাম প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান উল্লেখ করেন, ‘সে তো ইলেকশনই করে নাই। সে দুইটা জায়গা চেয়েছিল, তাকে দুইটা জায়গাই দেওয়া হয়েছিল। ইলেকশনের আগে বলেছে ইলেকশন করবে না। তার চাইতে বড় বিষয়, সে আমাদের লোক হয়ে আওয়ামী লীগের মঞ্চে উঠে আওয়ামী লীগের ফেভারে ইলেকশন করেছে।’
নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টি চ্যালেঞ্জে পড়েছে, এতে কি পার্টি ঠিক থাকবে? এমন প্রশ্নের জবাবে জি এম কাদের বলেন, ‘আমাদের পার্টি ঠিক আছে। পার্টি নিয়ে অনেকে অনেক ধরনের ডিস্টার্ব করতে চাচ্ছে। এগুলো আমরা জানি। তবু কিছুই করতে পারবে না। তবে চেষ্টা করবে আরকি।’
দলত্যাগ নিয়ে জানতে চেয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ও বহিষ্কৃত নেতা শফিকুল ইসলাম সেন্টুকে ফোন করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
আরও পড়ুন-
কাদের-চুন্নুর পদত্যাগ দাবি, জাপা অফিস ঘেরাও
ফিরোজ রশীদ ও সুনীল শুভকে সব পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি