X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

উল্টো পথে চলছে বিএনপি

বিশেষ প্রতিনিধি
১৫ মে ২০১৬, ২০:০০আপডেট : ১৫ মে ২০১৬, ২০:২১

বিএনপি

কথা ছিলো জাতীয় কাউন্সিলের পর ঘুরে দাঁড়াবে বিএনপি। দলের ৬ষ্ঠ কাউন্সিলকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে আনন্দ-উচ্ছাসেরও কমতি ছিলো না। কিন্তু কী আন্তর্জাতিক ক্ষেত্র, কী অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, ভাগ্য যেন কোনও দিক থেকেই সুপ্রসন্ন নয় বিএনপির। ঘরে-বাইরে একের পর এক দুর্ঘটনায়  বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে দলটি। আর সে কারণেই বিএনপি পিছিয়ে পড়ছে। অনেকের মতে, উল্টো পথে চলছে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ অবশ্য মনে করেন, উল্টো পথে চলছে একথা এখনই পুরোপুরি বলা ঠিক হবে না। তার মতে, হয়তো কাউন্সিলের পর যে গতিতে বিএনপির আগানো বা ঘুরে দাঁড়ানোর কথা ছিলো, সেটি হচ্ছে না। তিনি বলেন, গত দুই মাসে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হলে ভালো হতো। কিন্তু সেটি না হওয়ায় হতাশা বেড়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মহল এদেশে সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। তারা সেই অবস্থানেই অটল আছে। তবে এটি বাস্তবায়নে হয়তো সময় লাগছে বলেই মনে হতে পারে পরিস্থিতি বিএনপির প্রতিকূলে চলে গেছে।

আরও পড়ুন: উল্টো পথে চলছে বিএনপি  বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরী গ্রেফতার

গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি মুক্তিযোদ্ধা ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বিএনপি শুধু উল্টো পথে নয়, আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। কারণ, কোনও কিছুই তারা ঠিকভাবে করতে পারছে না। দল গোছানো কিংবা পররাষ্ট্র নীতি কোনও দিক থেকেই সঠিক অবস্থানে নেই তারা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ারও সিনিয়র নেতাদের আস্থায় নেওয়া উচিৎ। আবার স্থায়ী কমিটির নেতাদেরও সব ইস্যুতে কথা বলা উচিত। কিন্তু এখন যা হচ্ছে সবই আত্মঘাতি। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমানের মতে, সাম্প্রতিককালের কয়েকটি ঘটনা বিএনপির ভেতরে ও বাইরে নাড়া দিয়েছে। হয়তো সে কারণেই বলা হচ্ছে, বিএনপি উল্টো পথে চলছে। এর অর্থ হতে পারে জনগণ যেভাবে বিএনপিকে দেখতে চাইছে বিএনপি সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারছে না

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে মোসাদের বৈঠকের খবর সত্য কিংবা মিথ্যা যেটিই হোক, দলের ভাবমূর্তি এতে চরমভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে।

এটি নিষ্পত্তি হওয়া দরকার। তা না হলে দেশের বাইরে ভুল বার্তা যাবে।   সর্বশেষ দলের যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে নিয়ে বিপাকে পড়েছে বিএনপি। অভিযোগ, তিনি ইসরাইলের লিকুদ পার্টির নেতা মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে দিল্লিতে বৈঠক করেছেন। এ নিয়ে ইসরাইলের শত্রু ফিলিস্তিনের পাশাপাশি বাংলাদেশে সরকারী দলেরও কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছে বিএনপি। এছাড়া মুসলিম  বিশ্বের দেলগুলোর সঙ্গেও ভুল বোঝাবুঝির মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অথচ প্রতিষ্ঠার গত প্রায় ৩৮ বছরে ভারতবিরোধী রাজনীতির বিপরীতে মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক নিয়ে এক ধরনের আত্মতৃপ্তি ছিলো বিএনপির। কিন্তু সেটিতেও চিড় ধরার আশঙ্কায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শেষ পর্যন্ত গত বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিন দূতাবাসে ছুটে গেছেন। তিনি ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়েছেন, ইসরাইলের সঙ্গে বিএনপির কোনও সম্পর্ক নেই।

আরও পড়ুন:  উল্টো পথে চলছে বিএনপি   বৈষম্যমূলক নীতিমালা ও হয়রানি থেকে মুক্তি চান সুপারমার্কেট মালিকরা

মুসলিম বিশ্বকে হারানোর এ আশঙ্কার কারণ, এর আগে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে ঢাকায় তাইওয়ান সেন্টার প্রতিষ্ঠার অনুমতি দিয়ে বিএনপি তার সবচে বড় আন্তর্জাতিক মিত্র চীনকে হারিয়েছে। দলটির নেতারা নিজেদের দলীয় আলোচনায় সুযোগ পেলে এখনও  ওই সময়ের সরকারের সংশ্লিষ্ট ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের এজন্য দায়ী করেন।

দলটির সিনিয়র বেশিরভাগ নেতার মূল্যায়ন, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার কারণেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ক্ষেত্রে ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। অর্থাৎ ভারত একতরফাভাবে এদেশের অনেককিছু নিয়ন্ত্রণের সুযোগ পেয়েছে। (চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হওয়া বিএনপির বিপর্যয়ের অন্যতম একটি কারণ বলে মনে করা হয়) এ কারণে গত সপ্তায় অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে চীনপন্থী বলে পরিচিত নেতা লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান স্পষ্ট করেই বলেছেন, ইসরাইলের সঙ্গে বিএনপি নেতা আসলামের বৈঠকের ঘটনা আরেকটি ‘তাইওয়ান এপিসোড’।    
ভূ-রাজনৈতিক ও কৌশলগত দিক থেকে ইসরাইলের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশ ইসরাইলের শত্রু ফিলিস্তিনের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। বিশ্বে বেশিরভাগ মুসলিম দেশের অবস্থানও ফিলিস্তিনের পক্ষে।

বিএনপি নেতারা মনে করেন, এমনিতেই এক ভারত বিগড়ে যাওয়ায় তারা বিপদে আছেন।  গত কয়েক বছর চেষ্টা করে এখনও পক্ষে দূরে থাক; অন্তত বাংলাদেশ প্রশ্নে ‘নিরপেক্ষ’  অবস্থানে তাদের আনা যায়নি।  দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান কোনও দিক থেকেই সম্পর্ক এখনও জোড়া লাগাতে পারেনি বিএনপি। ওই দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে বিএনপি এখনও মরিয়া। সর্বশেষ ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে দলটি আরও হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। কারণ পররাষ্ট্র সচিব জয়শংকর বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। এর আগে সাক্ষাৎ করেননি বাংলাদেশ সফরে আসা যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই। বিএনপিতে এ নিয়েও হতাশা আছে। কারণ ভারতের দিক থেকে আশাবাদ না থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিকে বিরোধীদলের মর্যাদা দেয় বলে দলটি প্রত্যাশা করে। দলটির নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা যায়, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে সব চেষ্টা অব্যাহত থাকলেও অংশিদারিত্বমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে বিএনপি যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের ওপর বেশি নির্ভরশীল। কিন্তু তাদের সেই প্রত্যাশা কবে এবং কীভাবে পূরণ হবে তা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান।    

আরও পড়ুন:   উল্টো পথে চলছে বিএনপি দুই মাস আগে টার্গেট হন জুলহাজ-তনয়

বিএনপির এই উল্টো পথে চলার কারণ হিসেবে আরও বলা হচ্ছে; বিএনপি নিজেই যেনো সোজা পথে চলছে না। কারণ দলের প্রধান কাণ্ডারী চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াই সবকিছু সঠিকভাবে ‘হ্যান্ডল’ করতে পারছেন না। কাউন্সিল হয়েছে গত ১৯ মার্চ; অর্থাৎ প্রায় দুই মাস হতে চলেছে। অথচ এখনও তিনি সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটিসহ পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করতে পারেননি।  আর এ প্রশ্নে উল্টো সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে এ মুহূর্তে তার দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। কারণ অভিযোগ উঠেছে, গুলশান কার্যালয়ের কর্মকর্তা শিমুল বিশ্বাস এবং নয়াপল্টন কার্যালয়ের দফতরের দায়িত্বে নিয়োজিত সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রিজভী আহমেদ কমিটি গঠনে প্রভাব বিস্তার করছেন। ফলে সিনিয়র নেতারা ওই দুই নেতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। পাশাপাশি লন্ডনে অবস্থানরত দলের সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমানও ওই দুই নেতার ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন। একটি সূত্রের দাবি, তারেক সমর্থক কয়েকজন তরুণ নেতা সম্প্রতি রিজভী আহমেদকে ভয়-ভীতি দেখিয়েছেন।

এদিকে, উপযুক্ত ও আগ্রহী একাধিক প্রার্থী থাকায় স্থায়ী কমিটিতে খালেদা জিয়া কাকে রেখে কাকে বাদ দেবেন বুঝতে পারছেন না। অন্যদিকে যে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে তা নিয়েও দলে ঝড় বইছে। নেতারা একে অন্যের বিরুদ্ধে লেগে আছেন। পরস্পরের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাতেও তারা ছাড়ছেন না।

এমন এক পরিস্থিতির মধ্যেই আবার পৌর ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ নিয়েও দলের মধ্যে ক্ষোভ ও ঝড় বইছে।গত সপ্তায় অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ প্রশ্নে স্থায়ী কমিটির সিনিয়র নেতারা একাট্টা হয়ে ওই ঘটনার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করে সংশ্লিষ্টদের দল থেকে বহিষ্কার করার দাবি তুলেছেন। যদিও খালেদা জিয়া এ পর্যন্ত এ ইস্যুতে দৃশ্যমান কোনও ব্যবস্থা নেননি। ফলে নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ, দলাদলি এমনকি মেরুকরণও চরম আকার ধারণ করেছে। সে কারণে দল চলছে না। সবকিছু স্থবির হয়ে আছে।

এপিএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধে কোন কোন খাবার এড়িয়ে চলবেন?
বিশ্ব যকৃৎ দিবসফ্যাটি লিভার প্রতিরোধে কোন কোন খাবার এড়িয়ে চলবেন?
শিশু হাসপাতালে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না: ফায়ার সার্ভিস
শিশু হাসপাতালে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না: ফায়ার সার্ভিস
ভোট দিতে এসে কেউ উৎফুল্ল, অনেকেই ক্ষুব্ধ!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনভোট দিতে এসে কেউ উৎফুল্ল, অনেকেই ক্ষুব্ধ!
বায়ার্নের নজরে থাকা নাগেলসমানের সঙ্গে জার্মানির নতুন চুক্তি
বায়ার্নের নজরে থাকা নাগেলসমানের সঙ্গে জার্মানির নতুন চুক্তি
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!