X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

যেভাবে সাব জেলে জন্মদিন কেটেছিল শেখ হাসিনার

আদিত্য রিমন
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১১:০০আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৬:১৭

সুধা সদন থেকে শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার সময় (ছবি: সংগৃহীত) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাজনৈতিক জীবনে বছরের পর বছর কারাগারে কাটিয়েছেন। অনেক জন্মদিনও কেটেছে কারাবন্দি অবস্থায়। তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও রাজনীতির কারণে জেল খাটতে হয়েছে দুই বার। এর মধ্যে ড. ফখরুদ্দীনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে (২০০৭-২০০৮) প্রায় এক বছর তিনি কারাগারে ছিলেন। তখন সাব জেলে বসেই তাকে ৬১ তম জন্মদিন পালন করতে হয়েছে।

সেনা সমর্থিত তত্ত্বাধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই সুধাসদনের বাসা থেকে পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেফতার হন শেখ হাসিনা। তাকে রাখা হয় জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় স্থাপিত অস্থায়ী কারাগারে। তিনি মুক্তি পান ২০০৮ সালের ১১ জুন। এই সময়ে ২০০৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জন্মদিনটি তাকে কাটাতে হয় সাব জেলে। এর আগে আশির দশকে প্রেসিডেন্ট এরশাদের আমলে একবার গ্রেফতার হয়েছিলেন তিনি। 

শেখ হাসিনার ৬১ তম জন্মদিনে কেক কাটা বা অন্য কোনও আনুষ্ঠানিকতা ছিল না। কারণ, ওইদিন ছিল রোজা। যদিও জন্মদিন উপলক্ষে শেখ হাসিনা কেক কাটেন না। জন্মদিনের দিন সাব জেলের সামনে নেতাকর্মীরা প্রিয় নেত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে এলেও তাদের কাউকেই দেখা করতে দেওয়া হয়নি।

জেলের ভেতরে অন্য দিনেগুলোর মতোই শেখ হাসিনার জন্মদিন শুরু হয়েছিল সেহরি খেয়ে ও ফজরের নামাজ আদায়ের মাধ্যমে। এসময় তৎকালীন জিআইজি (প্রিজন) শামসুল হায়দার সিদ্দিকী জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন তাকে।

শেখ হাসিনার ৬১তম জন্মদিনে সাব জেলের সামনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ফুলের তোড়া নিয়ে জড়ো হন। আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, উপ দফতর সম্পাদক মোজাম্মেল হক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ও বিরোধী দলীয় নেতার বিশেষ সহকারী হাছান মাহমুদ, মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী বিশেষ কারাগারের কাঁটা তারের বেস্টনির সামনে জড়ো হন। তারা নেত্রীর জন্য আনা পুষ্পস্তবক ও বই কারা-পুলিশের মাধ্যমে নেত্রীর কাছে পৌঁছে দেন। সাব জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর শেখ হাসিনা (ছবি: সংগৃহীত)

সাব জেলে শেখ হাসিনার ৬১তম জন্মদিনের স্মৃতিচারণ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ওইদিন সকালের দিকে (সময়টা ঠিক মনে নেই) আমরা গিয়েছিলাম নেত্রীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে। কিন্তু আমরা কেউ দেখা করতে পারি নাই। সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, তখনকার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সাবেক উপ-দফতর সম্পাদক মোজাম্মেল হক, তারা নেত্রীর জন্য ফুল নিয়ে গিয়েছিলেন। আর আমিসহ আরও  কয়েকজন নেত্রীর জন্মদিনে উপহার হিসেবে কয়েকটি বই নিয়ে গিয়েছিলাম। পরে কারা-পুলিশের মাধ্যমে এগুলো তাকে পৌঁছে দিয়েছিলাম।’

তিনি আরও  বলেন, ‘পরে নেত্রী সাব জেল থেকে বের হওয়ার পর জানতে পেরেছি, তিনি ফুল ও বই পেয়েছিলেন।’

আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতাকর্মী গিয়েছিলাম নেত্রীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে। কিন্তু আমরা কেউ নেত্রীর সঙ্গে দেখা করতে পারি নাই। সাব জেলের বাইরে জন্মদিনের দোয়া, মিলাদ মাহফিল হয়েছিল।’

খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন,‘আমি ওইদিন নেত্রীর সঙ্গে দেখা করতে পেরেছিলাম কিনা মনে নেই। তবে আমরা নেত্রীর জন্মদিনে শুভেচ্ছা ও ফুলের তোড়া পাঠিয়েছিলাম।’   

কারাগারে শেখ হাসিনার জন্মদিন কাটানোর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সেই সময়ের জিআইজি প্রিজন মেজর (অব.) শামসুল হায়দার সিদ্দিকী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দু’জনই ওই সময় সাব জেলে ছিলেন। তারা দু’জনই নিয়মিত নামাজ ও রোজা রাখতেন। শেখ হাসিনার জন্মদিনের দিন রোজা ছিল। আমিসহ যারা ওখানে কর্মরত ছিলাম সবাই তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছিলাম।’ 

তিনি আরও বলেন,‘পেশাদারিত্বের জায়গা থেকে আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হওয়ার পরও কোনও বাড়তি সুযোগ দেওয়া হয়নি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে। জেল কোড অনুযায়ী যে সুযোগ পাওয়ার সেটাই পেতেন। আমাদের চাকরির সীমাবদ্ধতা জানতেন তিনি। এজন্য কখনও বাড়তি সুবিধা চাননি। আমাদের ওপর চাপ আসতে পারে, এমন কোনও চাওয়া-পাওয়া কখনও প্রকাশ করেননি তিনি।’

এক প্রশ্নের জবাবে শামসুল হায়দার সিদ্দিকী বলেন, ‘জন্মদিনে কেউ শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করছেন কিনা এখন বলতে পারবো না। আসলে অনেক বছর হয়ে গেছে তো। তাই সবকিছু মনে নেই। তবে প্রতি সপ্তাহে অনুমতি নিয়ে অনেকে দেখা করতেন ওনার সঙ্গে।’

প্রসঙ্গত, মধুমতি নদী বিধৌত গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়া। আর এই নিভৃত পল্লীতেই ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান তিনি। শেখ লুৎফর রহমান এবং সাহেরা খাতুনের অতি আদরের নাতনি হাসু। শৈশব- কৈশোর কেটেছে দাদা-দাদির কোলে-পিঠে, বাইগার নদীর তীরে, টুঙ্গীপাড়ায়। বাবার দেখা পেতেন কমই।  কারাগার, জেল-জুলুম ছিল পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের নিত্য সহচর। এ কারণে পুত্র-কন্যারা পিতার সান্নিধ্য পেয়েছে খুবই কম। শেখ হাসিনারা পাঁচ ভাই-বোন। তার অন্য ভাইবোনরা হলেন- শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রেহানা এবং শেখ রাসেল। আগামীকাল ২৮ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনার ৭১তম শুভ জন্মদিন। 

আরও পড়ুন- একজন শেখ হাসিনা

/এএইচআর/এপিএইচ/এফএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জোরে সালাম শুনেই ঘাড় ফিরিয়ে উত্তর দেন খালেদা জিয়া
জোরে সালাম শুনেই ঘাড় ফিরিয়ে উত্তর দেন খালেদা জিয়া
বজ্রাঘাতে প্রাণ গেলো ১০ জনের
বজ্রাঘাতে প্রাণ গেলো ১০ জনের
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ
বাবাকে খাবার পৌঁছে দিতে গিয়ে নিখোঁজ শিশুর লাশ মিললো নদীতে
বাবাকে খাবার পৌঁছে দিতে গিয়ে নিখোঁজ শিশুর লাশ মিললো নদীতে
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
তীব্র তাপপ্রবাহ যেখানে আশীর্বাদ
তীব্র তাপপ্রবাহ যেখানে আশীর্বাদ
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম