X
বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫
১৮ আষাঢ় ১৪৩২

মুক্তি পেলেন খালেদা জিয়া (ভিডিও)

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৫ মার্চ ২০২০, ১৬:০২আপডেট : ২৫ মার্চ ২০২০, ২১:২৬

দুই বছর এক মাস ১৬ দিন পর কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বুধবার (২৫ মার্চ) বিকাল ৪টা ১৫ মিনিটে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে আসেন তিনি। খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাসপাতাল) প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ছোটভাই শামীম ইস্কান্দরের জিম্মায় তাকে হস্তান্তর করা হয়। বাসায় অবস্থান করে চিকিৎসা নেওয়ার শর্তে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেওয়া হলো বিএনপির চেয়ারপারসনকে।

মুক্তি প্রক্রিয়া শেষ করার পর বিকাল সোয়া ৪টার দিকে খালেদা জিয়া লিফটে করে হুইল চেয়ারে নিচে নেমে আসেন। এসময় তার পরিবারের কয়েকজন সদস্য, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও হাসপাতালের নার্স এবং আনসার সদস্যরা ছিলেন। ৪টা ২০ মিনিটে তাকে নিয়ে স্বজনরা হাসপাতাল থেকে রওনা হন। গুলশানে তার বাসভবন ‘ফিরোজা’য়  নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাকে।

বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে বিএনপির নেতাকর্মীরা

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজা হলে খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের কারাগারে নেওয়া হয়। ওই সময় পরিত্যক্ত ওই কারাগারে তিনিই একমাত্র বন্দি হিসেবে ছিলেন। পরে হাইকোর্টে তার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করা হয়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বুধবার সাংবাদিকদের বলেছেন, দুটি শর্তে ভাইয়ের জিম্মায় খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিচ্ছে সরকার।

হাসপাতাল থেকে বেরোনোর পর বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালের মোড়ের একটু আগে গাড়ি থামে খালেদা জিয়ার। তখন তার গাড়িবহরে নেতাকর্মীরা বিপুল উচ্ছ্বাসে অংশগ্রহণ করেন। তবে, করোনাভাইরাসের কারণে নেতাকর্মীদের উপস্থিত না হওয়ার নির্দেশনা থাকলেও তা মানেননি নেতাকর্মীরা।

মুক্তি পেয়ে বাসায় যাচ্ছেন খালেদা জিয়া কারামুক্তি পেয়ে গুলশানে বাসার উদ্দেশে রওনা হন খালেদা জিয়া। গোলাপি শাড়িতে মাথামুখ ঢেকে, চোখে কালো চশমা পরে নিজের ভাই শামীম ইস্কান্দরের গাড়িতে করেই বাসার উদ্দেশে রওনা হন তিনি। তার পাশে পরিবারের একজন নারী সদস্য ছিলেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল জানান, খালেদা জিয়া বাসায় পৌঁছানোর পর তার চিকিৎসকরা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। তার শরীরের বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
দলের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খালেদা জিয়া বাসায় যাওয়ার পর লন্ডনে থাকা তার ছেলে তারেক রহমান ও তার স্ত্রীর সঙ্গে অনলাইনে কথা বলবেন। নিজের শারীরিক বিষয় নিয়ে পুত্রবধূ ডা. জোবায়দা রহমানের সঙ্গে পরামর্শ করবেন।

কারাগার থেকে হাসপাতাল

খালেদা জিয়া কারাগারে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর ২০১৮ সালের ১ এপ্রিল তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিশেষ মেডিক্যাল বোর্ড কারাগারে গিয়ে তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। এরপর ৭ এপ্রিল বেলা ১১টা ২০ মিনিটে নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নেওয়া হয়। ওইদিন কেবিন ব্লকের ৫১২ নম্বর কক্ষে অবস্থান করেন খালেদা জিয়া। ফের ফিরিয়ে নেওয়া হয় কারাগারে। এরপর ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করতে ও চিকিৎসা সেবা শুরু করতে পাঁচ সদস্যের একটি বোর্ড গঠন করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। দুইদিন পর ২০১৮ সালের ৬ অক্টোবর ফের একই হাসপাতালে আনা হয় তাকে। বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে বিএনপির নেতাকর্মীরা

২০১৯ সালের ১ এপ্রিল পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় খালেদা জিয়াকে। তিনি সেখানে ৬২১ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন ছিলেন বলে জানান খালেদা জিয়ার মেডিক্যাল বোর্ডের চেয়ারম্যান ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. জিলন মিয়া সরকার। তার পাশের ৬২২ নম্বর কেবিনটিতে কারা কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীলরা অবস্থান করছিলেন। বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে বিএনপির নেতাকর্মীরা

বিএনপির ও চেয়ারপারসনের পরিবারের পক্ষ থেকে অনেকবার খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতির কথা জানানো হয়। যদিও এই দাবি নিয়ে কয়েক দফায় উচ্চ আদালতে আপিল, রিভিউ আপিল করেও তাকে মুক্ত করতে পারেননি আইনজীবীরা। আর এ নিয়ে বরাবরই আইনজীবীদের সঙ্গে দলের নেতাদের বিরোধ ছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে মুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) বিকালে তার বাসায় সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার ভাই-বোন ও বোনের স্বামী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নির্বাহী আদেশে তাদের পরিবারের স্বজনের মুক্তি কামনা করেন। গতকাল খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে ঘোষণা আসার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারাও বিষয়টিকে প্রধানমন্ত্রীর মানবিক দিক বলে মনোভাব প্রকাশ করেছেন। যদিও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, তাদের নেতাকর্মীরা আপ্লুত। তবে করোনা পরিস্থিতিতে আতঙ্কও আছে বিএনপির। আর সেদিক বিবেচনা করে মির্জা ফখরুল নেতাকর্মীদের ভিড় না জমিয়ে নিরাপদ ও সুস্থ থাকতে বলেছেন।

ছবি: নাসিরুল ইসলাম

আরও পড়ুন-

খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত

যে প্রক্রিয়ায় মুক্তি পাবেন খালেদা জিয়া

মুক্তি পেয়ে ফিরোজাতেই উঠবেন খালেদা জিয়া

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই খালেদা জিয়াকে মুক্তির সিদ্ধান্ত

মুক্তির পর খালেদা জিয়া যা করতে পারবেন, যা পারবেন না

/এসটিএস/এএইচআর/এফএস/টিএন/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সরকার জাতীয় নির্বাচন থেকে মুখ ফিরিয়ে স্থানীয় নির্বাচনের স্বপ্ন দেখছে: শামসুজ্জামান দুদু
বিএনপির বিরুদ্ধে আবারও ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে, তার প্রমাণ হাতপাখার সমাবেশ: ফারুক
‘শুধু সরকার পতন নয়, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাও ছিল বিএনপির দাবি’
সর্বশেষ খবর
ছিন্ন শেকড়ের আত্মগাথা
ছিন্ন শেকড়ের আত্মগাথা
সরকার জাতীয় নির্বাচন থেকে মুখ ফিরিয়ে স্থানীয় নির্বাচনের স্বপ্ন দেখছে: শামসুজ্জামান দুদু
সরকার জাতীয় নির্বাচন থেকে মুখ ফিরিয়ে স্থানীয় নির্বাচনের স্বপ্ন দেখছে: শামসুজ্জামান দুদু
রিমান্ড শেষে কারাগারে সাবেক এমপি তুহিন
রিমান্ড শেষে কারাগারে সাবেক এমপি তুহিন
কুমিল্লায় বাস ও ট্রাকের ধাক্কায় ৩ জন নিহত
কুমিল্লায় বাস ও ট্রাকের ধাক্কায় ৩ জন নিহত
সর্বাধিক পঠিত
অবশেষে রিজার্ভে আইএমএফের লক্ষ্য পূরণ হলো
অবশেষে রিজার্ভে আইএমএফের লক্ষ্য পূরণ হলো
যারা ফেসবুক লাল করেছিল, তাদের জীবন লাল করে দেবে আ.লীগ: পার্থ
যারা ফেসবুক লাল করেছিল, তাদের জীবন লাল করে দেবে আ.লীগ: পার্থ
ক্যাম্পাসে নতুন সভাপতির প্রবেশ ঠেকাতে দুদিন পাঠদান বন্ধ!
ঢাকা সিটি কলেজক্যাম্পাসে নতুন সভাপতির প্রবেশ ঠেকাতে দুদিন পাঠদান বন্ধ!
পরীক্ষার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, তদন্তে কমিটি
পরীক্ষার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, তদন্তে কমিটি
বাসা থেকে বিচারকের স্ত্রীর লাশ উদ্ধার
বাসা থেকে বিচারকের স্ত্রীর লাশ উদ্ধার