গত বছর বিএনপির সভা-সমাবেশ বাবদ কোনও ব্যয় নেই, ব্যয় নেই নির্বাচনি খাতেও। তবে সাংগঠনিক কার্যক্রম, বিভিন্ন দিবস পালন ও সেমিনার-ওয়ার্কশপ বাবদ দলটির ব্যয় রয়েছে। এদিকে দলটির স্টাফদের বেতন ভাতা খাতে পাঁচ লাখের অধিক এবং ইউটিলিটি বিল বাবদ ৬০ হাজারের মতো টাকা বকেয়া রয়েছে।
মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) নির্বাচন কমিশনে (ইসি) ২০১৯ সালের দলের আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দিয়েছে বিএনপি। সেই হিসাব পর্যালোচনা করে এই তথ্য পাওয়া গেছে। ইসি সচিব মো. আলমগীরের কাছে এই হিসাব জমা দিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী।
ইসিতে জমা দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, গত পঞ্জিকা (২০১৯) বছরে বিএনপির আয় উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। এর আগের বছর যেখানে দলটির আয় ছিল প্রায় ১০ কোটি টাকার মতো, এবার আয় হয়েছে এক কোটিরও কম। অর্থাৎ ২০১৮ সালের দশ ভাগের একভাগ আয়ও ২০১৯ সালে দলটি করতে পারেনি। অবশ্য ২০১৮ সালে দেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় ওই বছর দলীয় মনোনয়ন ফরম বিতরণ বিএনপির আয়ের একটি বড় উৎস ছিল।
২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দলের আয় ছিল ৮৭ লাখ ৫২ হাজার ৭১০ টাকা। সেখানে দলটির ব্যয় হয়েছে দুই কোটি ৬৬ লাখ ৮৬ হাজার ১৩৭ টাকা। এ বছর দলটির ঘাটতি হয়েছে এক কোটি ৭৯ লাখ ৩৩ হাজার ৪২৭ টাকা। অবশ্য ব্যয়ের মধ্যে ২০১৮ সালের কিছু খাতের বকেয়া পরিশোধ করা হয়েছে। এর আগের বছর (২০১৮) দলটির আয় ছিল ৯ কোটি ৮৬ লাখ ৫৬ হাজার ৩৮০ টাকা। বিপরীতে ব্যয় হয়েছিল ৩ কোটি ৭৩ লাখ ২৯ হাজার ১৪৩ টাকা।
২০১৯ সালে বিএনপির দুই কোটি ৬৬ লাখ ৮৬ হাজার ১৩৭ টাকা ব্যয়ের মধ্যে কর্মচারীদের বেতন-বোনাস বাবদ ব্যয় হয়েছে ৭৫ লাখ ৬ হাজার ১০৭ টাকা। এ খাতে পূর্বের বকেয়া পরিশোধ করেছে তিন লাখ ৪৪ হাজার ৫০০ টাকা। কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ এখনও দলটির বকেয়া রয়েছে পাঁচ লাখ ১৪ হাজার ৯৫০ টাকা।
এ বছর আসবাবপত্র ও প্রশাসনিক খরচ বাবদ ব্যয় হয়েছে ১৬ লাখ ৯৮ হাজার ৪৬৬ টাকা। টেলিফোন, ইন্টারনেট, কুরিয়ার সার্ভিস ও পত্রিকা বিল বাবদ ব্যয় হয়েছে সাত লাখ ১০ হাজার ১৩৭ টাকা। এ খাতে পূর্বের বকেয়া পরিশোধ করেছে ২৯ হাজার ৯২২ টাকা, বকেয়া রয়েছে ২৮ হাজার ১২৪ টাকা।
ইসিতে জমা দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, বিএনপির পথসভা/জনসভা/ঘরোয়া বৈঠক এবং নির্বাচন বাবদ কোনও ব্যয় হয়নি। ব্যয় নেই জাতীয় সম্মেলন বাবদও। এছাড়া দলটির প্রচারণা/পরিবহন বাবদ ২১ লাখ ৮০ হাজার ২০০ টাকা, সাংগঠনিক কার্যক্রম বাবদ ১২ লাখ ৪৩ হাজার ৫৭৫ টাকা, বিজ্ঞাপন বাবদ ১৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা, প্রকাশনা বাবদ ৮ লাখ ১২ হাজার ৭৮৪ টাকা, জাতীয় ও বিভিন্ন দিবস উদযাপন বাবদ ২১ লাখ ৩০ হাজার ৯০০ টাকা, ত্রাণ কার্যক্রম বাবদ ১৮ লাখ ৮৪ হাজার ৭২৯ টাকা, যাতায়াত বাবদ এক লাখ ৩ হাজার ৩৬৭ টাকা, ধর্মীয় অনুষ্ঠান বাবদ ২২ লাখ ৪১ হাজার ৬৪০ টাকা, সেমিনার ওয়ার্কশপ ১২ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, আপ্যায়ন বাবদ প্রায় আট লাখ ৬১ হাজার ৫৬৫ টাকা, স্থায়ী-অস্থায়ী সম্পদ ক্রয় পাঁচ লাখ ৯০ হাজার ৬৯১ টাকা, মেরামত ও সরবরাহ খাতে দুই লাখ ৮৪ হাজার ৩৫ টাকা এবং অন্যান্য ব্যয় হয়েছে সাত লাখ ১০ হাজার ৩২৮ টাকা।
এর আগে, ২০১৭ সালে বিএনপির আয় হয় ৯ কোটি ৪৬ লাখ ২৪ হাজার ৯০২ টাকা, ব্যয় হয় ৪ কোটি ১৯ লাখ ৪১ হাজার ৯৫৪ টাকা। ওই বছর ৫ কোটি ২৬ লাখ ৫২ হাজার ৯৪৮ টাকা তাদের উদ্বৃত্ত ছিল।
২০১৬ সালে দলটির আয় হয়েছিল ৪ কোটি ১৩ লাখ ৬৮ হাজার ৭৩০ টাকা, ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৬৩ হাজার ৭৫২ টাকা। উদ্বৃত্ত ছিল ১৪ লাখ ৪ হাজার ৭৭৮ টাকা।
২০১৫ সালের দাখিল করা আয়-ব্যয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিএনপির ১৪ লাখ ২৬ হাজার ২৮৪ টাকা ঘাটতি ছিল। ওই বছর দলটির আয় ছিল ১ কোটি ৭৩ লাখ ৩ হাজার ৩৬৫ টাকা, ব্যয় ১ কোটি ৮৭ লাখ ২৯ হাজার ৬৪৯ টাকা।
প্রসঙ্গত, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে পূর্ববর্তী পঞ্জিকা বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব (অডিট রিপোর্ট) নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অবশ্য কোনও দল চাইলে নির্ধারিত সময়ের আগে ইসিতে আবেদন করে সময় বাড়াতে পারে। সেই হিসেবে বিএনপি ইসির কাছে এক মাস সময় চেয়েছিল।