গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেছেন, আমরা একতরফা নির্বাচন মানি না। আর এই একতরফা নির্বাচনের জন্য যে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে, আমরা সেটাও মানি না। দেশের জনগণ তার ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, এই রাষ্ট্র ব্যবস্থা সংস্কারের ৩১ দফা বাস্তবায়ন করবেই করবে। সেই লক্ষ্যে আন্দোলন চলবে।
বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) হরতালের সমর্থনে মিছিল শেষে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘একতরফা তফসিল’ ঘোষণার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করছে ছয়টি রাজনৈতিক দলের এই জোট।
জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘এই সরকারের নিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশন যে শেষ পর্যন্ত সরকারেরই তল্পিবাহক থাকবে, সেটি আমরা আগেই বলেছিলাম। কাল তারা সেটির প্রমাণ দিলেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) গতকাল বললেন, নির্বাচন নাকি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। আপনাকে নাকি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতেই হবে। কয়েকদিন আগে বলেছিলেন, নির্বাচনের পরিবেশ নেই। নির্বাচন যেমন একটি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা, তেমনই সংবিধানেই বলা আছে, নির্বাচনের যদি পরিবেশ না থাকে, তাহলে নির্বাচন কমিশন তফসিল স্থগিত করতে পারে, নির্বাচন পিছিয়ে দিতে পারে। সেই কাজ আপনারা (ইসি) করেননি।’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনের পরিবেশ না থাকা সত্ত্বেও সরকার তথাকথিত সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কথা বলে আজকে একটি একতরফা ভোটারবিহীন নির্বাচন করতে চাচ্ছে। সেই ভোটকে আপনি (সিইসি) জায়েজ করার ঘোষণা দিলেন। অনেক জ্ঞানী-গুণী আপনার চাকরি জীবনের সুনামের ওপর ভিত্তি করে আপনার নাম প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে প্রস্তাব করেছিলেন। আজকে নিজের সমস্ত সুনাম ধ্বংস করে এই সরকারের দালাল হিসেবে আপনি নিজেকে প্রতিষ্ঠা করলেন। জনতার আদালতে আপনাকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।’
সরকার নানাভাবে আন্দোলনকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করেছে উল্লেখ করে সাকি বলেন, ‘নিজেদের এজেন্ট দিয়ে আপনারা (সরকার) পরিকল্পিত উস্কানি, সহিংসতা তৈরি করে সমস্ত দোষ বিরোধী দলের ওপর চাপিয়ে এক মহা ক্র্যাকডাউন চালিয়েছেন। ২৯ তারিখ সকাল থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ একেবারে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত প্রতিদিন তাদের শত শত নেতাকর্মী গ্রেফতার করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১৫ হাজারের ওপর গ্রেফতর। কারাগারে জায়াগা হবে না। নতুন নতুন কারাগার বানাতে হবে। যদিও আর এত অল্প সময়ে বানাতে পারবেন না। কাজেই বাংলাদেশকে পুরোটা কারাগার বানিয়েছেন। মানুষ এই কারাগার ভাঙবে।’
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘দেশের ফ্যাসিবাদী নৈরাজ্যকর অবস্থাকে বহাল রেখে নির্বাচন কমিশন একটি অশুভ নির্বাচনের পথে হাঁটছে। বাংলাদেশের জনগণ ২০১৪, ২০১৮ সালের প্রতারণার নির্বাচন দেখেছে। ২০২৪ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ তোমাদের কোনও রকম ভাওতাবাজি মেনে নেবে না।’
তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচন কমিশনকে বলতে চাই, যে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে অনতিবিলম্বে সেটি প্রত্যাহার করুন। নির্বাচন স্থগিত করুন। আজ দেশের যে নৈরাজ্যকর অবস্থা তৈরি করেছে, ভোটের কোনও পরিবেশ নাই– এটা তারাও বলেছে। আউয়াল সাহেব বলেছেন, দেশে ভোটের কোনও পরিবেশ নাই, তাহলে এই পরিস্থিতিতে কীভাবে তফসিল ঘোষণা করেছেন– আমরা সে প্রশ্ন রাখতে চাই।’
সভাপতির বক্তব্যে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আকবর খান বলেন, ‘২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে আমরা দেশের মানুষকে জানিয়ে দিতে চেয়েছিলাম, এই সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা নেই। সরকার তার বিভিন্ন এজেন্ট দিয়ে পরিকল্পিতভাবে সেই সমাবেশে সহিংসতা সৃষ্টি করে এবং তার দায় বিরোধী রাজনৈতিক দলের ওপর চাপিয়ে দেয়। সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামসহ হাজার হাজার নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে। গতকাল তাদের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে একটি একতরফা তফসিল ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের জনগণ এই তফসিল প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা এই নির্বাচন হতে দেবে না।’
এ সময় ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম, সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান রিজু, নাগরিক ঐক্যের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাখরুল ইসলাম নবাব, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাংগঠনিক সমন্বয়ক ইমরান ইমনসহ গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশ শেষে তারা প্রেসক্লাবের সামনে থেকে মিছিল করে পল্টন গিয়ে তা শেষ করেন।