জনগণ একটা আখেরি ও মরিয়া লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত বলে মন্তব্য করেছেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) গণতন্ত্র মঞ্চ আয়োজিত দেশব্যাপী হরতালের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল শেষে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
সাইফুল হক বলেন, সরকার শুধু জীবিত ব্যক্তিদেরই জেলে পাঠাচ্ছে না, যারা গুমের শিকার হয়েছেন, যারা ১০ থেকে ১২ বছর আগে মারা গিয়েছেন, তাদেরও তারা জেল দিয়ে রায় দিয়েছেন। কতটা দেউলিয়া। মানুষটা জীবিত না মৃত, দেশে না বিদেশে, জেলে না বাইরে আছে, আইনজীবীদের সেটা দেখারও প্রয়োজন নেই। যে নেতাকর্মীদের তালিকা তাদের ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেটা দিয়েই বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের পাইকারি হারে জেলখানায় পাঠানোর ব্যবস্থা করছে। এই খেলা কি বাংলাদেশের মানুষ ধরে ফেলেছে না?
তিনি আরও বলেন, সরকার বিরোধী দলকে বলে তারা নাকি সন্ত্রাস করে। এরা নাকি অগ্নিসন্ত্রাস করে। ভোলার ঘটনা আপনারা তো জানেন। সেখানে ছাত্রলীগের নেতা তার বাড়িতে বোমা বানাতে গিয়ে নিহত হয়েছেন। পুলিশ প্রশাসন কি ছাত্রলীগের ওই নেতাদের গ্রেফতার করেছে? বিরোধী দলের প্রায় ১০০ নেতার বাসায় মুখোশ পরে হামলা করেছে। বাড়িতে বাড়িতে হামলা করছে। গুপ্ত হত্যায় আপনারা লেলিয়ে দিচ্ছেন। তাদের একজনও কি গ্রেফতার হয়েছে? কাউকেই গ্রেফতার করা হয়নি।
আমরা বলতে চাই, সরকার পরিকল্পিতভাবে সংঘাত-সংঘর্ষ ও গৃহযুদ্ধের দিকে দেশটাকে ঠেলে দিচ্ছে। এই খেলাটা বন্ধ করুন। নইলে দেশের জনগণ একটা আখেরি লড়াইয়ের জন্য, মরিয়া লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। মানুষ রাস্তায় নেমেছে কেবল ক্ষমতা পরিবর্তনের জন্য না। তাদের ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকার, গণতন্ত্রাত্রিক অধিকার, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য। এই লড়াইয়ে বিজয়ী না হওয়া পর্যন্ত গণতন্ত্র মঞ্চ রাজপথে থাকবে।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, আজকের এই শাসক বা আওয়ামী লীগ বা সরকারি দলটি একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে তার যে চরিত্র- বৈশিষ্ট্য থাকার কথা, তা তারা অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছে। এটি আর কোনও রাজনৈতিক দল নয়। এটি একটি লুটেরা, মাফিয়া, চোর, ভোট ডাকাতের সিন্ডিকেটে পরিণত হয়েছে। এই দলটি দেশের রাজনীতির কৃষ্টি-সংস্কৃতির বাইরে গিয়ে শুধু ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য হেন কোন পন্থা নেই যা তারা করেনি, হোক সেটা ন্যায্য বা অন্যায্য।
তিনি বলেন, আগামী দিনে আরও কঠোর কর্মসূচি হবে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে এই দেশের মানুষকে আরও বেশি সংগঠিত করে আমরা এমন কর্মসূচি দেব, তার মধ্য দিয়ে এই মাফিয়া-লুটেরা সরকার বাংলাদেশ থেকে বিদায় নেবে এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা যে সংগ্রাম করছি, সেই সংগ্রামে জয়ী হবো।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ এখন জবরদস্তি করে ক্ষমতা দখল করে আছে। আওয়ামী লীগ একটি ঐতিহ্যবাহী দল। সেই ঐতিহ্যবাহী দলের সাধারণ সম্পাদককে আমরা গতকাল বলতে শুনলাম, ফুল নাকি ফুটতে শুরু করেছে। আওয়ামী লীগকে তো আমরা দেশের অন্যতম বড় দল, দুই প্রধান দলের একটি বলেই জানতাম। ওবায়দুল কাদের সাহেব তো প্রায়ই খেলতে চান। উনি নাকি সেমিফাইনাল খেলে ফেলেছেন, ফাইনাল খেলা বাকি। আমরা তো জানতাম আওয়ামী লীগ প্রিমিয়ার লিগে খেলে, এখন তো দেখছি তারা পাইওনিয়ার লিগে খেলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। পাইওনিয়ার লিগের দলকে ভাগিয়ে নিয়ে গিয়ে ফুল ফুটতে শুরু করেছে। এই হচ্ছে ওবায়দুল কাদের সাহেবের নির্বাচন। এই হচ্ছে তাদের ফাইনাল খেলা।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই একদিন বলেছিলেন তাকে ছাড়া নাকি আওয়ামী লীগের সবাইকেই নাকি কেনা যায়। উনি বলেছিলেন বাংলাদেশের সব দলের সবাইকেই নাকি কেনা যায়। দল হিসেবে, রাজনৈতিক নেতা হিসেবে যখন অপরাপর রাজনৈতিক দলের নেতাদের কেনাবেচার কাজকে গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে তিনি অনুমোদন করেন, তখন যে রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তার যে আর কোনও জায়গা থাকে না, এটা পরিষ্কার। রাজনৈতিক নেতাদের কেনাবেচা করার জন্য তিনি গোয়েন্দা সংস্থাকে নানা রকম নির্দেশনা দিচ্ছেন। ভাবছেন এভাবে কেনাবেচা করে পাইওনিয়ার লিগের দলদের দিয়ে নির্বাচন করবেন। আর সেটা নাকি একটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে। বাংলাদেশের মানুষ বোকা না।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাংগঠনিক সমন্বয়ক ইমরান ইমন, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান রিজুসহ মঞ্চের অন্য নেতারা।