আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য বড় দলগুলোর পাশাপাশি ছোট দলগুলোও প্রস্তুতি নিচ্ছে। এসব দলের নেতাকর্মীদের একটি অংশ নির্বাচনে জয়ের চেয়ে অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে। এছাড়াও নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য রয়েছে নিজস্ব হিসাব-নিকাশ। তেমনই সংসদে নিজেদের বিরোধী দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ)।
২০১২ সালের ৬ জুন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে দুই মাসের মাথায় ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা ১০ আগস্ট বিএনএফ গঠন করেন। এরপর দশম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের ১৮ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন থেকে দলটি নিবন্ধন লাভ করে। দলটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট এস এম আবুল কালাম আজাদ।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নানান নাটকীয়তা ছিল বিএনএফ নিয়ে। ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা দলটির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচিতি পেলেও পরবর্তীতে দলটির প্রধান হন এসএম আবুল কালাম আজাদ। ফলে নিবন্ধনকালে খোদ নাজমুল হুদা দলটির বিরোধিতা করেছিলেন। এমনকি দলটি নিবন্ধন না দিতে তৎকালীন নবম সংসদের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি থেকেও আপত্তি জানানো হয়। দলটি থেকে বলা হয়, দেশি-বিদেশি গোয়েন্দাদের পরামর্শে বিএনপিকে ভাঙতেই বিএনএফকে নিবন্ধন দিতে চায় ইসি।
বিএনপির বিরোধিতার সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হয় বিএনএফ। নিবন্ধনের বিধিমালা অনুযায়ী বিএনএফ মাঠ পর্যায়ের প্রয়োজনীয় কাঠামো প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়। পরে আবার সময় বাড়িয়ে দলটিকে নিবন্ধন দেওয়া হয়।
বিএনএফের প্রতীক নিয়েও ছিল বিতর্ক। নিবন্ধনের সময় বিএনপির দলীয় প্রতীক ‘ধানের শীষ’-এর আদলে ‘ধান গাছ’ এবং পরে ‘গমের শীষ’ প্রতীক হিসেবে চেয়ে আবেদন করে বিএনএফ। সবশেষে টেলিভিশন প্রতীকে নিবন্ধন পায় দলটি, এবং দশম নির্বাচনে প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ করে।
২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনএফ ২২ জন প্রার্থী দিলেও আসন পায় একটি। ঢাকা-১৭ আসনে নির্বাচিত হন দলের প্রেসিডেন্ট এস এম আবুল কালাম আজাদ। এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রয়াত সাবেক চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করলে আজাদের সংসদ সদস্য হওয়া নিশ্চিত হয়ে যায়। নির্বাচনে আজাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন জাতীয় পার্টি-জেপির আবদুল লতিফ মল্লিক (বাইসাইকেল) ও স্বতন্ত্র এমএ হান্নান মৃধা (ফুটবল)।
২০১৮-তে বিএনপির আপত্তির কারণে একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা হয়নি বিএনএফের। তবে এবার ২০২৪-এর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছে দলটি।
আসন্ন নির্বাচন নিয়ে প্রস্তুতির বিষয়ে বিএনএফ প্রেসিডেন্ট এস এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, এবার আমরা ১০০টির বেশি আসনে প্রার্থী দেবো না। আমরা হিসাব করে দেখছি—কে কোন আসনে (আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ইত্যাদি) কাদের প্রার্থী করেছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়া বিএনএফের লক্ষ্য জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা যেটা চাচ্ছি সেটা হলো সবাই সরকার গঠন করতে চায়। কিন্তু সরকার গঠনের পর আরেকটা দায়িত্ব আছে বিরোধী দল গঠন করা। এটার দিকে কারও মনোযোগ নেই। এবার বিএনএফ সরকারের অংশীদার হতে চায়—এটা প্রথম অপশন। যদি সেটা সম্ভব না হয় আমরা দ্বিতীয় অপশনে চলে যাবো—আমরা সংসদে বিরোধী দল গঠন করবো।
জাতীয় পার্টিকে বিরোধী হিসেবে দেখছেন না জানিয়ে তিনি বলেন, জাতীয় পার্টিও তো সরকার গঠন করতে চায়। তারা তো বিরোধী দল হতে চায় না। আর বিএনপিও আসছে না নির্বাচনে। এলে তো সেও বিরোধী দলে যেতে চাইবে না, সরকার গঠন করতে চাইবে। বিএনএফ একমাত্র দল, যে সরকার গঠন করতে চায় না। বরং যারাই সরকার গঠন করুক তাদের সঙ্গে সংসদে একটা ইতিবাচক গঠনমূলক বিরোধী দল হতে চায়।