X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

২৫ বছর পরও নকীব-মামুনদের কাছে উজ্জ্বল মিয়ানমারের স্মৃতি

তানজীম আহমেদ
১২ এপ্রিল ২০২০, ১৭:১৩আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০২০, ১৭:২৩

মিয়ানমার চার জাতি ট্রফি জয়, ১৯৯৫ করোনাভাইরাস মহামারির এই ভয়ঙ্কর সময়ে মাঠে কোনও খেলা নেই। সাবেক ফুটবলাররা ঘরে বসে অতীত স্মৃতিতে ডুবে যাচ্ছেন। তুলে আনছেন পেছনের সাফল্যগাঁথা। এই যেমন ইমতিয়াজ আহমেদ নকীব ও হাসান আল মামুন স্মরণ করলেন ২৫ বছর আগে বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক ফুটবল শিরোপা জয়ের কাহিনী-

বাংলাদেশ যে একজন বিশ্বমানের কোচ পাবে তখন কে ভেবেছিল?  অটো ফিস্টার ১৯৯০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে এসে লাল-সবুজ দলের দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নিয়েই প্রথম প্রতিযোগিতায় সফল এই জার্মান কোচ! স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে অনেক প্রতিযোগিতায় অংশ নিলেও বাংলাদেশ কখনও কোনও প্রতিযোগিতার শিরোপা জেতেনি। ১৯৯৫ সালের ৪ নভেম্বর ফিস্টারের কোচিংয়ে সেই সাফল্যখরা দূর হলো। মিয়ানমারে চার জাতি আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হলো বাংলাদেশ!

দেশের ফুটবল ইতিহাসে সেটাই প্রথম কোনও জাতীয় দলের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় শিরোপার স্বাদ নেওয়া। প্রয়াত মোনেম মুন্নার অধিনায়কত্বে এসেছিল এই জয়। অথচ শুনলে এখনও অবাক হতেই হয়। ইয়াংগুনে বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছিল স্বাগতিক মিয়ানমারের কাছে ৪-০ গোলে হার দিয়ে!

নতুন কোচ। তাই সবাইকে পরখ করে দেখতে গিয়ে খেলোয়াড়দের পজিশনই বদলে দেন। একটি উদাহরণই যথেষ্ট। আলফাজ আহমেদকে খেলানো হয়েছিল ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে! এছাড়া উইঙ্গার মামুন জোয়ার্দারসহ অনেকেরই জায়গাই ঠিক ছিল না।

প্রথম ম্যাচে হারের পর কোচও নিজের জায়গা থেকে সরে আসেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একে একে সাফল্য ধরা দিয়েছে। সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে খেলোয়াড়দের ঠিকঠাক পজিশনমতো খেলিয়ে জয়ও আসে। জয়সূচক একমাত্র গোলটি করেছিলেন রঞ্জন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মিজানের দেওয়া গোলে দল টিকিট পায় ফাইনালের।

ফাইনালে স্বাগতিক মিয়ানমার মনে করেছিল তারাই ট্রফি জিততে যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের কৌশলের কাছে হেরে যায় তারা। মামুন জোয়ার্দারের গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর স্বাগতিকেরা ম্যাচে সমতা আনে। দ্বিতীয়ার্ধে মামুনের ক্রসেই ইমতিয়াজ আহমেদ নকীব দলকে এগিয়ে দেন। পরের ৩০ মিনিট প্রতিপক্ষকে আটকে রেখে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে লাল-সবুজ দল। দুই গোলদাতা মামুন ও নকীবের কেউই ম্যাচের সেরা হতে পারেননি। হয়েছেন মিডফিল্ডার আজিম!

সেই প্রতিযোগিতার স্মৃতি রোমন্থন করে নকীব বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘প্রথম ম্যাচে মিয়ানমারের কাছে ৪-০ গোলে হার। অটো ফিস্টার দল নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। যার পরিণতি প্রথম ম্যাচে হার। আলফাজকে খেলান ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার পজিশনে। মামুন জোয়ার্দারের পজিশন বদল হয়ে গেল। এরপর অবশ্য আমরা আগের পজিশন অনুযায়ী খেলে একের পর এক জয় পেয়েছি।’

ফাইনাল ম্যাচের স্মৃতি হাতড়ে এই সাবেক স্ট্রাইকার বলছিলেন,  ‘ফাইনালে ২-১ গোলে জিতি আমরা। আমি ও মামুন গোলদাতা। ২-১ গোলে পিছিয়ে পড়ে মিয়ানমার চাপ প্রয়োগ করে খেলছিল। কিন্তু আমরা তাদের আর গোল শোধ দিতে দিইনি। কোচ ম্যাচের আগেই বলেছে, চ্যাম্পিয়ন নাকি রানার্সআপ হবে তা তোমরা ঠিক করো। তাই আমরা হতোদ্যম না হয়ে খেলেছি। আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছি, এটা ওদের একটু অবাকই করেছিল।’

মিয়ানমারে ফিস্টারের পাশাপাশি অধিনায়কের আর্মব্যান্ড পরে মোনেম মুন্নাও সবাইকে উজ্জীবিত করেছেন। মাত্র ১০ থেকে ১৫ দিনের অনুশীলনে ট্রফি জয় সম্ভব হয়েছিল সবার চেষ্টাতেই। নকীব, রকিব, মাসুদ রানা, মামুন জোয়ার্দার, মিজানরা নিজেদের উজাড় করে দিয়েছিলেন বলেই ট্রফি এসেছিল।

সেই সময় অবশ্য ফিস্টার ৬ জন তরুণ খেলোয়াড়কে দলে নেন। ডিফেন্ডার হাসান আল মামুন ছিলেন অন্যতম কনিষ্ঠ । মাদ্রাজ সাফ গেমসকে সামনে রেখে মিয়ানমারের প্রতিযোগিতায় দলকে ঝালিয়ে নিতে চেয়েছেন ফিষ্টার। মামুন বলেন, ‘আমাদের ৬ জনের অভিষেক হয়েছিল সেই টুর্নামেন্টে। নবীন ও অভিজ্ঞদের সমন্বয়ে টিম হয়েছিল। ফিস্টার একজন ফাইটার কোচ। মুন্না ভাইও ফাইটার অধিনায়ক। দুজনেই আমাদের বিভিন্নভাবে উদ্দীপ্ত করেছেন। মুন্না ভাই সবার সঙ্গে মিশে যেতেন। কোনও ভেদাভেদ রাখেননি। আমরা তখন খেলার জন্য মুখিয়ে। নবীন-অভিজ্ঞদের সমন্বয়ে এসেছে সেই ট্রফি।’

সেই প্রতিযোগিতায় মজার অভিজ্ঞতাও ভাগাভাগি করেছেন বর্তমানে শেখ জামালের এই সহকারী কোচ, ‘ফাইনাল জিততে পারলে ১০ হাজার ডলার। আর রানার্সআপ ৫ হাজার ডলার। ফাইনালে সেই সময় স্বাগতিকদের ফেডারেশন থেকে মাঠে ৫ হাজার ডলার এনেছিল। আর ১০ হাজার ডলার মূল্যমানের কিয়াত (মিয়ানমারের মুদ্রা)। তারা ধরেই নিয়েছিল বাংলাদেশ রানার্সআপ হবে। ফাইনাল শেষে তারা তো বিপদে পড়ে গেল। আমাদের তো আর কিয়াত দিতে পারে না। সেই সময় ৫ হাজার ডলার মাঠেই দিলো। পরের দিন ঢাকায় আসার আগে কোনওমতে আরও  প্রায় তিন হাজার ডলার দিয়ে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে তারা।’

ইয়াংগুনে সেই ট্রফি জয়ের রাতটি বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে এক স্মরণীয় রাত হয়েই আছে। নকীব-মামুনরা সেই রাতটিকে কখনও ভুলবেন না।

 

/টিএ/পিকে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মাটি কাটার সময় 'গরমে অসুস্থ হয়ে' নারী শ্রমিকের মৃত্যু
মাটি কাটার সময় 'গরমে অসুস্থ হয়ে' নারী শ্রমিকের মৃত্যু
সাকিবের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সাক্ষাৎ
সাকিবের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সাক্ষাৎ
স্বর্ণপামে ৯ বিচারক: সর্বকনিষ্ঠ আদিবাসী লিলি, আছেন বন্ডকন্যাও
কান উৎসব ২০২৪স্বর্ণপামে ৯ বিচারক: সর্বকনিষ্ঠ আদিবাসী লিলি, আছেন বন্ডকন্যাও
‘“সুলতান পদক” পেয়ে আমি গর্বিত ও ধন্য’
‘“সুলতান পদক” পেয়ে আমি গর্বিত ও ধন্য’
সর্বাধিক পঠিত
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
আজ কি বৃষ্টি হবে?
আজ কি বৃষ্টি হবে?
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে