২০১৮ সালে ভারতকে হারিয়ে এশিয়া কাপ (টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট) জেতা বাংলাদেশ ওয়ানডে বিশ্বকাপে পাত্তাই পেলো না। বোলারদের দৃঢ়তায় ভারতকে ২২৯ রানে আটকে রাখা গেলেও ব্যাটারদের ব্যর্থতায় সেই রান টপকাতে পারেনি লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। ভারতীয় স্পিনারদের ঘূর্ণি জাদুতে ১১৯ রানে অলআউট হয়ে গেছে বাংলাদেশ। তাতে নিগারদের ১১০ রানে হারিয়ে সেমিফাইনাল খেলার পথটা অনেকটাই তৈরি করে রাখলো মিতালি রাজের দল।
হ্যামিল্টনের সেডন পার্কে ভারত বাংলাদেশকে ২৩০ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল। এই লক্ষ্যে শুরুটা দেখে শুনে করলেও শেষ রক্ষা করতে পারেননি ওপেনার শারমিন আক্তার। ১৭ বলে ৫ রান করা শারমিন ঝুলন গোস্বামীর বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন। ওই ওভারেই কাভারে দারুণ ছয় হাঁকিয়েছিলেন মুর্শিদা খাতুন। এটি নারী বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ছয়। আশা করা হচ্ছিল মুর্শিদা ও ফারজানা মিলে দারুণ জুটি গড়বেন।
কিন্তু পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের নায়ক ফারজানা হক রানের খাতা না খুলেই রাজেশ্বরী গায়কোয়াডের বলে সাজঘরে ফিরেছেন। অধিনায়ক নিগারও ৩ রানের বেশি করতে পারেননি। পুনম যাদব, স্নেহ রানা ও পূজা বস্ত্রকারের ঘূর্ণিতে দিশেহারা মোর্শেদা চার্জ করতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন শেষ পর্যন্ত। ১৯ রানের ইনিংস খেলে লেগস্পিনার পুনম যাদবের শিকার হন তিনি। দলীয় আরও চার রান যোগ হতে রুমানাও স্নেহ রানার বলে ২ রান করে আউট হয়েছেন।
৩৫ রানে ৫ উইকেট হারানো বাংলাদেশ আরও বড় ব্যবধানে হারতে যাচ্ছিল! কিন্তু মিডল অর্ডারের দৃঢ়তায় সেই লজ্জায় পড়তে হয়নি অবশ্য। ৬ষ্ঠ উইকেটে সালমা ও লতা মিলে ৪০ রানের জুটি গড়েছেন। অভিজ্ঞ সালমা ৩৫ বলে ৪ চারে ৩২ রান করেছেন। সালমার আউটের পর লতা ও রিতু মিলে ২৩ রানের জুটি গড়ে দলীয় রানকে একশোর কাছাকাছি নিয়ে গেছেন। লতা ৪৬ বলে ২৪ রান করে যখন আউট হন, দলের সংগ্রহ তখন ৯৮। এরপর রিতুর ১৬ ও জাহানারার ১১* রানে ভর করে বাংলাদেশ ৪০.৩ ওভারে করতে পারে ১১৯ রান।
ভারতীয় বোলারদের মধ্যে স্নেহ রানা ৩০ রান খরচায় সর্বোচ্চ চারটি উইকেট নিয়েছেন। এছাড়া পূজা বস্ত্রকার, ঝুলন গোস্বামী দুটি করে উইকেট নেন। পুনম যাদব ও রাজেশ্বরী গায়কোয়াড় নেন একটি করে উইকেট।
এর আগে টসে জিতে আগে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা দুর্দান্ত করে ভারত। ওপেনিং জুটিতে আসে ৭৪ যান। এরপরই ১৫তম ওভারের শেষ বলে স্মৃতি মান্ধানাকে ফিরিয়ে প্রথম সাফল্য এনে দেন নাহিদা। ভারতীয় এই ব্যাটারের ব্যাট থেকে আসে ৫১ বলে ৩০ রান। স্মৃতির উইকেটের উদযাপনের রেশ না কাটতেই জোড়া উইকেট নিয়ে ভারতকে চাপে ফেলে দেন রিতু মনি। ষোলোতম ওভারের তৃতীয় ও চতুর্থ বলে ফেরান শেফালি ভার্মা ও মিতালি রাজকে।
৪২ বলে ৪২ রান করা শেফালি স্টাম্পড হন। পরের বলে অধিনায়ক মিতালি শূন্য রানে কাভারে ক্যাচ দিয়ে বিদায় ফিরেছেন। এমন কঠিন সময়ে যষ্টিকা ভাটিয়া ও হারমনপ্রীত কাউরের ৩৪ রানের জুটি একশো পেরিয়ে যেতে ভূমিকা রেখেছে। দলীয় ১০৮ রানে হারমনপ্রীতের উইকেট হারায় ভারত। তার আগে ভারতীয় ব্যাটার ৩৩ বলে ১৪ রান করে ফিরেছেন। এরপর বড় জুটি গড়েন যষ্টিকা-রিচা। তাদের ৫৪ রানের জুটি ভারতকে দুইশো পেরিয়ে যেতে সহায়তা করেছে। রিচা ৩৬ বলে ২৬ রানে আউট হয়েছেন। আর যষ্টিকা খেলেছেন ৮০ বলে ৫০ রানের মহামূল্যবান ইনিংস। সবমিলিয়ে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ভারতের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২২৯ রান।
বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল বোলার রিতু মনি। এই পেসার ৩৭ রান খরচায় নিয়েছেন তিনটি উইকেট। এছাড়া নাহিদা আক্তার দুটি এবং জাহানারা আলম একটি উইকেট নেন।