‘হাম নেহি জিতেগা, হামারা মার্জি।’- বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায় ‘আমি জিতবো না, আমার ইচ্ছা।’ নিচে লেখা ‘টাইগার নেক্সট ওয়ার্ল্ড কাপ’ বাংলাদেশের এক ক্রিকেট ভক্ত এই কথাগুলো লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে ইডেন গার্ডেন্সের গ্যালারিতে। গত ছয় ম্যাচে ২২ গজে বাংলাদেশ দলের শরীরি ভাষা, পারফরম্যান্স দেখে বোঝার উপায় নেই দলটি জয়ের জন্য খেলছে। ধর্মশালাতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওই একটি জয়, এরপর প্রতিটি ম্যাচেই ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ সাকিবরা। ব্যর্থতার এই মিছিল থামাতে গিয়ে উল্টো লম্বা হচ্ছে। মঙ্গলবার পাকিস্তানের বিপক্ষে ৭ উইকেটে হেরে পয়েন্ট টেবিলের ৯ নম্বরেই থাকতে হলো। এই হারে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলার পথটা কঠিন হয়ে গেলো বাংলাদেশের জন্য।
বাংলাদেশ জিততে না চাইলে কীভাবে সম্ভব! দেশের জন্য লড়াইয়ে নেমে জিততে না চাওয়া নিশ্চিতভাবেই অমূলক শোনাবে। তবে বাংলাদেশের ব্যাটারদের এমন ব্যাটিং দেখে মনে হওয়াটা স্বাভাবিক, জিততে চান না কেউই। লিটন, সাকিব, মুশফিক জয়ের জন্য খেললে তো স্কোরবোর্ডে রান তোলার চেষ্টায় থাকতেন। কিন্তু সেটি হয়নি। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই ব্যর্থ হয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। ভারত বিশ্বকাপ হবে ব্যাটারদের। ব্যাটাররা গত কয়েক বছরে এসব শুনেই এসেছেন। কিন্তু মূল মঞ্চে খেলতে গিয়ে কোনও ব্যাটারই ছন্দে নেই। যেই মাহমুদউল্লাহ শেষ মুহূর্তে বিশ্বকাপ দলের সঙ্গী হয়েছেন, সেই তিনিই এখন বাংলাদেশের টপ স্কোরার।
লিটন-শান্ত-তাওহীদ-সাাকিব-মুশফিক-তানজিদ তামিমদের দায়িত্ব তাহলে কী?
ব্যাটারদের এমন ছন্নছাড়া ব্যাটিংয়ের কারণে পুরো টুর্নামেন্টে ভুগতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। এখন পর্যন্ত এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ ২৫৬, ভারতের বিপক্ষে। বাকি ছয় ম্যাচের প্রথমটিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১৫৬ রান অনায়াসেই তাড়া করতে পারে বাংলাদেশ। বাকি ম্যাচগুলোতে আগে হোক বা পরে, কোনও ম্যাচেই প্রত্যাশিত ব্যাটিং করতে পারেনি সাকিব আল হাসানের দল। ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বড় রান তাড়া করতে নেমে আড়াইশও করতে পারেনি সাকিবরা। প্রত্যাশা করা হচ্ছিল কলকাতায় খেলতে নেমে ভাগ্য বদল হবে। কিন্তু হয়নি, সেই একই পরিণতি। মঙ্গলবার পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যাটাররা যেন আত্মাহুতির মিছিলে নেমেছিলেন।
যদিও ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন করে সাকিব চেষ্টা করেছিলেন। আগের চার ম্যাচে ভালো ব্যাটিং করার পর মুশফিক কেন নিচে, এই নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয়েছিল। সমালোচনার জবাবে সাকিব বলেছিলেন, ‘আমাদের যারা ভালো ব্যাটার, তারা হয়তো পরের দিকে ব্যাটিং করছে। কিন্তু এটা যদি একটু উল্টোভাবে চিন্তা করি, তারা ওপরে আসলো। কেউ কি নিশ্চয়তা দিতে পারবে তারা রান করবে! যদি তারা না করে, তখন কী মনে হবে না যে তারা আগের জায়গাতেই ভালো ছিল। এগুলো আসলে অনেক অনেক জটিল, ট্রিকি। এ ধরনের সিদ্ধান্ত আমাদের নিতে হয়। কখনও সফল হই, কখনও ব্যর্থ হই।’
পাকিস্তানের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে চার নম্বরে পাঠানো হয় মুশফিককে। কিন্তু সফল হলেন না তিনি। প্রথম চার ম্যাচে ব্যাটে আলোর ঝলকানি থাকলেও শেষ তিন ম্যাচে এসে তার ব্যাটে রান নেই। এদিন হারিস রউফের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেওয়ার আগে ৮ বলে ৫ রান করেন তিনি। পাওয়ার প্লের তিন ওভার আগে ২৩ রানে টপ অর্ডারের তিন উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ। পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত পাওয়ার প্লেতে সবচেয়ে বাজে সময় কাটাচ্ছে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। ৭ ম্যাচে পাওয়ার প্লেতে ১৬ উইকেট হারিয়েছে সাকিবরা। ৩ উইকেট কম হারিয়ে এই তালিকায় পরের স্থানে ইংল্যান্ড। চলমান বিশ্বকাপে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা বাংলাদেশের মতোই ধুঁকছে। বিশ্বকাপে নয়বার দলগুলো তিনটি বা তার বেশি উইকেট হারিয়েছে প্রথম পাওয়ার প্লেতে। তিনবার করে বাংলাদেশই আছে শীর্ষে। এছাড়া ইংল্যান্ড দুইবার। অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, ভারত ও নেদারল্যান্ডস আছে একবার করে তিন বা ততোধিক উইকেট হারায়।
ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণেই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের এমন ভরাডুবি। টপ অর্ডার ব্যাটারদের ফর্মহীনতা ভোগাচ্ছে পুরো দলকে। টপ অর্ডার যেন ‘টপলেস’ হয়ে গেছে। পাওয়ার প্লেতে টপ অর্ডার রান করতে না পারায় মিডল অর্ডারের কাঁধে চাপ পড়েছে। সেই চাপেই হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ছে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ। টপ অর্ডার রান না করায় পাওয়ার প্লেতে রান তোলাতেও ধীর গতিতে বাংলাদেশ। গত ৭ ইনিংসে বাংলাদেশ ৪.৫৮ স্ট্রাইকরেটে তুলেছে ৩২১ রান। যা দ্বিতীয় ধীরতম। বাংলাদেশের চেয়ে কেবল পিছিয়ে আছে নেদারল্যান্ডস। যারা ২৫৭ রান করেছে ৪.২৮ রান রেটে। ডট বল খেলাতেও বাংলাদেশ সবার উপরে। ২৯৩ ডট বল খেলেছে পাওয়ার প্লে’তে। দুইয়ে থাকা নেদারল্যান্ডস খেলেছে ২৬০ বল।
