যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে এমনিতে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বেশি থাকেন, অমোঘ এক আকর্ষণে! আজ তাদের অনেকেই লং আইল্যান্ডের নাসাউ স্টেডিয়ামে ভীড়ের স্রোত যেন বইয়ে দিয়েছিলেন। শুধু কি নিউইয়র্ক, আশপাশ এমনকি কানাডা থেকে অনেকে এসেছিলেন। আশায় বুক বেঁধে। দিনটি স্মরণীয় করে স্মৃতির পাতায় অম্লান রাখতে। মাঠে আসা প্রায় হাজার বিশেক সমর্থকদের স্বপ্নটা শেষ মুহূর্তে এসে ভঙ্গ হয়েছে । টানটান উত্তেজনার ম্যাচ দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরে আফসোস বাড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ।
এমনিতে বাংলাদেশের গ্রুপে দক্ষিণ আফ্রিকাকে বড় বাধা মনে করা হচ্ছিল। বাজির দরে অনেকেই হয়তো ম্যাচ শুরুর আগে প্রোটিয়াদের এগিয়ে রাখতে কার্পণ্য করেননি। আবার নিখাঁদ সমর্থকদের আস্থা ছিল লাল-সবুজে। বিশেষ করে আগের ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে জয়ের আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার পর তা রাখাটা যে অবিমৃষ্যকারী কিছু নয়।
তবে আজ টস হেরে দক্ষিণ আফ্রিকা যেভাবে ব্যাট করতে শুরু করেছিল, তা ছিল ভয় জাগানিয়া। তানজিম হাসান সাকিবকে প্রথম বলেই কুইন্টন ডি কক যেভাবে সীমানার বাইরে আছড়ে ফেললেন তা দেখে বড় ইনিংস গড়ার সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছিল। আবার এই পিচ বোলারদের কথা বেশি শোনে। যতই ছক্কা দিয়ে প্রোটিয়াদের ইনিংস শুরু হোক না কেন।
তার প্রমাণ মিলতে বেশি সময় লাগেনি। যেই তানজিম ছক্কা দিয়ে বল শুরু করলেন, ২৩ রানে চার উইকেট হারানো আফ্রিকার দুর্গে তারই রয়েছে তিনটি আঘাত!
এরপর ক্লাসেন আর মিলার মিলে ইনিংস টেনে নেন। তাসকিন-রিশাদ মিলে ১১৯ এর বেশি করতে দেননি। ক্রিকেট যারা বোঝেন, নিউইয়র্কের এই পিচ সম্পর্কে বদ্ধমূল ধারণা তো হয়েছেই। তাই আশায় বুক বাঁধা বাংলাদেশ জবাব দিতে গিয়ে চাপেই পড়ে যায়। তানজিদ-লিটন-শান্ত-সাকিব কেউই আশার আলো জ্বালাতে পারেননি। সাকিব নিজের 'দ্বিতীয় বাড়িতে' এসে একদম ফ্লপ! গ্যালারিতে তার স্ত্রীরও নিশ্চয়ই অন্যদের মতো মন খারাপ।
যাই হোক, তাওহীদ হৃদয়-মাহমুদউল্লাহ আগের মতোই আশার সলতে জ্বালিয়ে রেখে শেষ ওভারে এসে আর পারলেন না।
একদিন আগেই ভারত-পাকিস্তান ম্যাচকে যেন আবার মনে করিয়ে দিলো। স্বল্প রানের পুঁজিতেও যে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দারুণ উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচ হয়, তারই পুনরাবৃত্তি হলো আজও!
তবে আজ জয়ের কাছাকাছি গিয়ে হারলেও বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে লড়াই তারা করতে জানে। তাই ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে নেপাল কিংবা নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে অন্তত লড়ার আগে আত্মবিশ্বাসে কমতি থাকবে না।
যে দলটি শ্রীলঙ্কাকে হারাতে জানে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয়ের কাছাকাছি গিয়েও চার রানে হারে; সেই দল নিশ্চয়ই গ্রুপের শেষ দুটি ম্যাচে লড়াই চালিয়ে গিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সাহস রাখে।
নিউইয়র্কের প্রবাসী বাংলাদেশিরা চেয়েছিল দারুণ এক জয় দেখতে। কিন্তু হলো না। এমন এক পিচে খেলা হয়েছে, তাতে বাংলাদেশ শেষ ওভার পর্যন্ত লড়াই করেছে। মাহমুদউল্লাহ সীমানায় তালুবন্দী না হলে জয়োৎসব হতেই পারতো।
যাই হোক মন খারাপ নিয়ে সমর্থকরা মাঠ ছাড়লেও দিনটি মনে রাখবে অনেক দিন। বাংলাদেশ যে লড়াই করেছে!