কলকাতা নাইট রাইডার্সকে গত আইপিএলে শিরোপা জয়ে নেতৃত্ব দেন শ্রেয়াস আইয়ার। আইপিএল নিলামের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৬ কোটি ৭৫ লাখ রুপিতে এবার তাকে কিনে নেয় পাঞ্জাব। দলটির হয়ে নেতৃত্বে অভিষেকে নিজের মূল্য বোঝালেন তিনি। শেষ ওভারে স্ট্রাইক না পাওয়ায় যদিও সেঞ্চুরি করতে পারেননি, কিন্তু দল জিতে যাওয়ায় সেই আফসোস হয়তো আর থাকছে না শ্রেয়াসের। গুজরাট টাইটান্সকে ১১ রানে হারিয়েছে পাঞ্জাব।
আগে ব্যাটিংয়ে নামে পাঞ্জাব। আইপিএল অভিষেকে ওপেনার প্রিয়ানশ আরিয়া দারুণ শুরু এনে দেন। বিশেষ করে চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে প্রভসিমরান আউট হলে শ্রেয়াস তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামার পর। দুজনে মিলে ২১ বলে ৫১ রান তোলেন। শ্রেয়াস শুরু করছিল বাউন্ডারিতে, প্রথম বলেই কাগিসো রাবাদাকে চার মারেন। একই ওভারের পঞ্চম বলে ছক্কা। পাওয়ার প্লের বাকি সময়ে প্রিয়ানশের ঝড় দেখেছেন। রশিদ খানের কাছে এই ওপেনার ৭ চার ও ২ ছক্কায় ২৩ বলে ৪৭ রান করে বিদায় নেওয়ার পর শ্রেয়াস জ্বলে ওঠেন আবার। ১৩তম ওভারে তো পাঁচ বলের মধ্যে দুটি ছয় ও চার মারেন তিনি। পরের ওভারে রশিদকে ছক্কা মেরে ২৬ বলে পাঞ্জাবের অধিনায়ক হিসেবে অভিষেকে ফিফটি হাঁকান শ্রেয়াস। ১৭তম ওভারের পঞ্চম বলে ছক্কা মারার পর ডাবলসে নব্বইয়ের ঘরে পৌঁছান তিনি।
পরে দল ১৮ বল খেললেও তিনি স্ট্রাইকে থাকলেন মাত্র চার বল। যাতে আর সাতটি রান যোগ করতে পেরেছেন নিজের ঝুলিতে। ৪২ বলে ৫ চার ও ৯ ছক্কায় ৯৭ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন, যা তার আইপিএল ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ। আর এই প্রতিযোগিতায় নেতৃত্বে অভিষেকে তৃতীয় সর্বোচ্চ ইনিংস খেললেন শ্রেয়াস। ২০২১ সালে পাঞ্জাবের মায়াঙ্ক আগারওয়াল ও একই বছর রাজস্থান রয়্যালসের সাঞ্জু স্যামসনের ১১৯ রান এই তালিকায় সেরা দুইয়ে।
শেষ ওভারে শ্রেয়াসকে স্ট্রাইকে না দিলেও ঝড় তোলেন শশাঙ্ক সিং। মোহাম্মদ সিরাজের ওই ওভারে পাঁচটি চার মেরে ২৩ রান তোলেন তিনি। ১৬ বলে শশাঙ্ক অপরাজিত ছিলেন ৪৪ রান করে। দুজনের জুটি ছিল ২৮ বলে ৮১ রানের, যা দলটির ইতিহাসে ষষ্ঠ উইকেটে সর্বোচ্চ জুটি। তার আগের উইকেটে মার্কাস স্টয়নিসের সঙ্গে ২৮ বলে ৫৭ রানের জুটি গড়েন শ্রেয়াস।
তিন ব্যাটারের বিধ্বংসী ইনিংসে পাঞ্জাব তাদের আইপিএল ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করে। ২০ ওভারে তারা পাঁচ উইকেটে করে ২৪৩ রান। গত আসরে কলকাতার বিপক্ষে ২৬২ রান তাদের সর্বোচ্চ।
সাই কিশোর গুজরাটের হয়ে সর্বোচ্চ তিন উইকেট নেন।
লক্ষ্যে নেমে গুজরাটের টপ অর্ডার বেশ শক্ত জবাব দেয়। আর্শদীপ সিংকে ইনিংসের প্রথম বলে চার মারেন সাই। পরের ওভারের শেষ বলে এই ওপেনার আরেকটি ছয় মারেন। তৃতীয় ওভারে আর্শদীপ মাত্র ২ রান দেন। তিন ওভারে ১৭ রান তুলে শুরুটা যদিও ভালো হয়নি।
চতুর্থ ওভারে শুবমান গিল শেষ পাঁচ বলে দুটি ছয় ও চার মেরে রানের গতি বাড়ান। সেই ছন্দ ধরে রাখতে চেয়েছিলেন গুজরাট অধিনায়ক। কিন্তু গ্লেন ম্যাক্সওয়েল বাধ সাধেন। ব্যাট হাতে আইপিএলে রেকর্ড ১৯তম ডাক মারার দিনে অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডার ব্রেকথ্রু আনেন। গিলকে ১৩ বলে ৩৩ রানে থামান ম্যাক্সওয়েল।
৬ ওভারে ১ উইকেটে ৬১ রান তোলে গুজরাট। সাই ও জস বাটলার সেভাবে জ্বলে উঠতে পারেননি। ১০ ওভারে দলের স্কোর ১০৪। দশম ওভারে সপ্তম আইপিএল ফিফটি হাঁকান সাই। শেষ ১০ ওভারে ১৪০ রানের প্রয়োজন চাপে ফেলে গুজরাটকে। সেই চাপ কমাতে গিয়ে ১৩তম ওভারে থামেন সাই। ৪১ বলে ৬ ছয় ও ৫ চারে ৭৪ রান করেন তিনি। বাটলারের সঙ্গে তার জুটি ছিল ৪০ বলে ৮৪ রানের।
সাই আউট হলে ইম্প্যাক্ট খেলোয়াড় শেরফানে রাদারফোর্ড ব্যাটিংয়ে নামেন। পরের ওভারে চার বলের মধ্যে দুটি ছয় ও এক চার মেরে নিজের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেন উইন্ডিজ ব্যাটার।
তবে ডেথ ওভারে বিজয়কুমার ভিশাক ও মার্কো ইয়ানসেনের আঁটসাট বোলিংয়ে ছন্দ হারায় গুজরাট। বাটলার ১৮তম ওভারের শেষ বলে ইয়ানসেনের শিকার হন। ৩৩ বলে চারটি চার ও দুটি ছয়ে ৫৪ রান করেন ইংলিশ ব্যাটার। ৩৩ বলে ৫৪ রানের জুটি ছিল তাদের।
শেষ দুই ওভারে দরকার ছিল ৪৪ রান। শেষের আগের ওভারে রাদারফোর্ড দুই চার ও রাহুল তেওয়াতিয়ার এক ছক্কায় ১৮ রানের বেশি তুলতে পারেনি গুজরাট।
শেষ ওভারে লাগে ২৭ রান। আর্শদীপের বল সপাটে মেরেছিলেন রাদারফোর্ড। কিন্তু পাঞ্জাবের বোলারের আঙুল ছুঁয়ে বল লাগে স্টাম্পে। বোলার এন্ডে ক্রিজের বাইরে থাকায় রানআউট হন রাহুল।
দ্বিতীয় বলে রাদারফোর্ড ছক্কা মারেন। চতুর্থ বলে তাকে বোল্ড করেন আর্শদীপ। ২৮ বলে চারটি চার ও তিন ছয়ে ৪৬ রান করেন রাদারফোর্ড। শেষ বলে শাহরুখ খানের ছক্কা কেবল ব্যবধানই কমায়।
২০ ওভারে ৫ উইকেটে ২৩২ রানে থামে গুজরাট।