সিলেটে টেস্ট হারের পর তীব্র সমালোচানর মুখে পড়তে হয়েছিল বাংলাদেশ দলকে। সমালোচিত হওয়াটাই স্বাভাবিক ব্যাপার। টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের নিচের দল, সুযোগ সুবিধাহীন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে- তাও আবার ঘরের মাঠে এমন হার কেইবা মেনে নেবে! স্বাভাবিকভাবেই এমন হারের পর অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিমরা কটাক্ষের শিকার হন। এসব কারণে নিজেদের ওপর পড়া কঠিন চাপ পাশে সরিয়ে চট্টগ্রামে জয় তুলে নিলো বাংলাদেশ। বুধবার তৃতীয় দিনে মেহেদী হাসান মিরাজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ইনিংস ও ১০৬ রানের ব্যবধানে জিতেছে বাংলাদেশ। এই জয়ে চট্টগ্রামের হারের গেরো কেটেছে। সর্বশেষ ২০১৮ সালে চট্টগ্রামে জয়ের দেখা পেয়েছিল বাংলাদেশ। অবশেষে সাত বছর পর এই ভেন্যুতে জিতলেন শান্ত-মুশফিকরা।
সিলেট টেস্টে হতাশাজনক পারফরম্যান্স ছিল বাংলাদেশের। ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং তিন বিভাগেই পিছিয়ে থেকে সেই টেস্টে হেরেছে শান্তরা। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে চট্টগ্রামে খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। একে তো তীব্র সমালোচনা, তার মধ্যে ব্যাটারদের যাচ্ছেতাই পারফরম্যান্স, সবমিলিয়ে চাপ নিয়েই চট্টগ্রামে এসেছিল বাংলাদেশ। তার মধ্যে টস হেরে শুরুতেই চাপে পড়ে যাওয়া। জিম্বাবুয়ে টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা একেবারে খারাপ করেনি। তিন উইকেট হারিয়ে ১৭৭ রান নিয়ে বড় সংগ্রহের স্বপ্ন দেখছিল সফরকারীরা। কিন্তু সেই স্বপ্ন ভেঙে দেন তাইজুল। তার ঘূর্ণিজাদুতে ২১৭ রানে অলআউট হয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। তাইজুল ৬০ রানে শিকার করেন ৬ উইকেট।
দারুণ বোলিংয়ের পর বাংলাদেশের ব্যাটাররা কেমন করেন, সেটি নিয়ে শঙ্কা ছিল। তা উড়িয়ে দিলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার এনামুল হক বিজয় ও সাদমান ইসলাম। তিন বছর পর টেস্ট দলে ফেরা বিজয় ও কিছুটা ছন্দহীন সাদমান এবার আর ভুল করলেন না। ৩২ ইনিংস ধরে যেখানে ওপেনিংয়ে শতরানের জুটি হয় না, সেখানে এই দুজন দ্বিতীয় দিনে শতরানের জুটি গড়েন। বিজয় ও সাদমানের করা ১১৮ রানের জুটির ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ বড় সংগ্রহের ভিত পেয়ে যায়। বিজয় ৩৯ রানে ফেরার পর ওপেনিং জুটি ভাঙে। এরপর মুমিনুল (৩৩), শান্ত (২৩) ও মুশফিক (৪০) বিদায় নিলে কিছুটা চাপে পড়ে বাংলাদেশ। তবে দলকে চাপমুক্ত করেন মিরাজ।
প্রথমে তাইজুলকে নিয়ে ৬৩ রানের জুটি গড়েন, পরে নবম উইকেটে তানজিম হাসান সাকিবের সঙ্গে আরও ৯৬ রানের মূল্যবান জুটি গড়ে দলের স্কোরকে ৪৪৪ রানে নিয়ে যান। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি ছোঁয়ার পথে বেশ কিছু কীর্তি গড়েছেন এই অলরাউন্ডার। সাকিব আল হাসানকে পেছনে ফেলে ২ হাজার রান ও ২০০ উইকেটের কীর্তি গড়েছেন তিনি। সাকিব বাংলাদেশের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে ৫৪ ম্যাচে এই কীর্তি গড়েন। মিরাজের লেগেছে ৫৩ ম্যাচ।
সবমিলিয়ে মিরাজ ১৬২ বলে ১০৪ রান করে আউট হন। মিরাজের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরির ওপর দাঁড়িয়ে ২১৭ রানের লিড পায় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের বড় লিডে তৃতীয় ইনিংসে চাপ নিয়েই ব্যাটিংয়ে নামতে হয়েছে জিম্বাবুয়েকে। সেই চাপটা আরও বাড়িয়ে দেন তাইজুল সপ্তম ওভারে এক বলের ব্যবধানে দুই উইকেট নিয়ে। এরপর একে একে উইকেট তুলে নিতে থাকেন নাঈম হাসান ও মিরাজ। উইলিয়ামস, আরভিন, মাধেভেরে, সিগা, মাসাকাদজাদের ফিরিয়ে ইনিংস গুটিয়ে দেন মিরাজ। তার ঘূর্ণিতে অসহায় আত্মসমর্পণ করে সফরকারীরা ১১১ রানে অলআউট হয়। মিরাজ সেঞ্চুরির পাশাপাশি ৫ উইকেট নিয়ে দারুণ এক কীর্তি গড়েন। বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে সাকিব ও সোহাগ গাজীই কেবল এক ইনিংসে সেঞ্চুরি এবং ৫ উইকেট নিয়েছিলেন। তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে এই কীর্তি গড়েছেন মিরাজ। চট্টগ্রাম টেস্টের আগে সিলেটেও বল হাতে দারুণ পারফরম্যান্স করেছিলেন তিনি। দুই ইনিংসে নিয়েছিলেন ১০ উইকেটে। স্বাভাবিকভাবেই সিরিজ সেরা হয়েছেন মিরাজ। আর এই ম্যাচে দলকে জিতিয়ে হয়েছেন ম্যাচসেরাও।