আমিরাত: ১৯.১ ওভারে ১৬৬/৩ (ওয়াসিম ৯, জোহাইব ২৯, রাহুল ১৩, আলিশান ৬৮*, আসিফ ৪১*; শরিফুল ১/২৪, রিশাদ ১/৩২)
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৬২/৯ (তানজীদ ৪০, ইমন ০, লিটন ১৪, হৃদয় ০, মেহেদী ২, জাকের ৪১, শামীম ৯, রিশাদ ০, তানজিম ৬, হাসান ২৬*, শরিফুল ১৬*; হায়দার ৩/৭, মতিউল্লাহ ২/৪১, সগীর ২/৩৬)
ফল: আমিরাত ৭ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: আমিরাত ২-১ এ জয়ী।
পাকিস্তান সফর পিছিয়ে যাওয়ায় সময়ক্ষেপণ করতে আরেকটি বাড়তি টি-টোয়েন্টি খেলার প্রস্তাব আমিরাতকে দিয়েছিল বাংলাদেশ। এখন হয়তো এমন সিদ্ধান্তে আক্ষেপই করছে তারা। বুধবার সেই আবদার পূরণের ম্যাচ হেরে সিরিজ হারলো বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের সিরিজে টানা দুটি ম্যাচে জিতে ঐতিহাসিক সাফল্য পেলো আইসিসির সহযোগী দেশটি।
আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৭১ রানে ৮ উইকেট হারানোর পরও শেষ দিকে শরিফুল ইসলাম ও হাসান মাহমুদের ক্যামিওতে ১৬২ রান করে বাংলাদেশ। আগের দুই ম্যাচে বিস্ফোরক ইনিংস খেলা মুহাম্মদ ওয়াসিম দ্রুত ফিরে যান এদিন। তবে দাঁড়িয়ে যান আলিশান শরাফু। তার ফিফটি ও আসিফ খানের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ৭ উইকেটের দারুণ এক জয়ে ইতিহাস গড়লো আমিরাত। দুজনের জুটি ছিল ৫১ বলে ৮৭ রানের।
১৯.১ ওভারে ৩ উইকেটে ১৬৬ রান করে আমিরাত। ৪৭ বলে ৫ চার ও ৩ ছয়ে ৬৮ রানে অপরাজিত ছিলেন আলিশান। ২৭ বলে ৫ ছয়ে ৪১ রানে খেলছিলেন আসিফ।
কোনও টেস্ট দলের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে এটি আমিরাতের দ্বিতীয় সিরিজ জয়।
গত সোমবার বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবার টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জিতেছিল আমিরাত। এবার সিরিজও মুঠোয় নিলো তারা।
ছক্কা মেরে আলিশানের ফিফটি
১৬তম ওভারের প্রথম বলে রিশাদ হোসেনকে লম্বা শটে মারলেন আলিশান শরাফু। সীমানায় দাঁড়িয়ে ক্যাচ ছাড়ার সঙ্গে ছয়ও দিলেন তানজিম হাসান সাকিব। ৩৮ বলে অষ্টম ফিফটি করলেন আমিরাতি ব্যাটার। একই ওভারে টানা দুটি ছয় মারেন আসিফ খান।
এই ওভারে ১৯ রান দিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছে বাংলাদেশ।
আমিরাতের ১০০
১৩তম ওভারের শেষ বলে সিঙ্গেল নিলেন আলিশান শরাফু। তাতে ৩ উইকেট হারিয়ে ১০০ রানে পৌঁছালো সংযুক্ত আরব আমিরাত। ৪২ বলে ৬৩ রান দরকার তাদের। অন্য প্রান্তে খেলছেন আসিফ খান।
তানজিম ফেরালেন রাহুলকে
১১তম ওভারের চতুর্থ বলে আমিরাতে তৃতীয় উইকেট নিলেন তানজিম হাসান সাকিব। অফস্টাম্পে করা স্লো বাউন্সার বড় শট খেলতে গিয়েছিলেন রাহুল চোপড়া। কিন্তু দৌড়ে এসে নিচু ক্যাচে তাকে প্যাভিলিয়নে পাঠান শামীম হোসেন। ১৩ বলে ১৩ রান করেন রাহুল। ৭৯ রানে স্বাগতিকদের তৃতীয় উইকেট পড়লো।
১০ ওভারে আমিরাতের রান ৭৬
১৬৩ রানের লক্ষ্যে নেমে দুই ওপেনারকে হারালেও আমিরাত জেতার মতোই লড়ছে। ১০ ওভারে ২ উইকেটে ৭৬ রান তাদের। রাহুল চোপড়া ১৩ ও আলিশান শরাফু ২২ রানে অপরাজিত আছেন।
দ্বিতীয় বলে উইকেট নিলেন রিশাদ
বল হাতে নিয়ে দ্বিতীয় ডেলিভারিতে আঘাত করলেন রিশাদ হোসেন। অষ্টম ওভারে বোলিংয়ে এসে মুহাম্মদ জোহাইবকে বোল্ড করেন বাংলাদেশের স্পিনার। ৫৮ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারালো আমিরাত। ২৩ বলে ৩ চার ২ ছয়ে ২৯ রান করে জোহাইব।
অধিনায়ককে ফেরালেও পাওয়ার প্লেতে অস্বস্তিতে বাংলাদেশ
দ্বিতীয় ওভারে শরিফুল ইসলাম আঘাত হানলেও সংযুক্ত আরব আমিরাত পথ হারায়নি। জোহাইবের ব্যাটে পাওয়ার প্লেতে ১ উইকেট হারিয়ে ৫০ রান তুলে বাংলাদেশকে অস্বস্তিতে রেখেছে তারা। এর মধ্যে শেষ দুই ওভারে ১৩ ও ১০ রান দেন হাসান মাহমুদ ও মেহেদী হাসান।
ওয়াসিমকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের দারুণ শুরু
আগের দুই ম্যাচে বাংলাদেশের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠেছিলেন মুহাম্মদ ওয়াসিম। বুধবার শেষ ম্যাচেও তেমন কিছু করার ইঙ্গিত দেন আমিরাত অধিনায়ক। কিন্তু দ্বিতীয় ওভারে তাকে থামতে হলো। শরিফুল ইসলামের দ্বিতীয় বলে স্লিপে তানজীদ হাসান তামিমের ক্যাচ হন ওয়াসিম। ৬ বলে ২ চারে ৯ রান করে আউট তিনি। ১৪ রানে ভাঙলো স্বাগতিকদের ওপেনিং জুটি।
জাকেরের পর হাসান-শরিফুল ঝড়ে বাংলাদেশের ১৬২ রান
৭১ রানে নেই ৭ উইকেট। জাকের আলী ও তানজিম হাসান সাকিব সতর্ক ব্যাটিংয়ে প্রতিরোধ গড়েন। লম্বা সময় পর আর ১৩ রান যোগ করে এই জুটি ভাঙে। ১৪ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর ৮ উইকেটে ৮৪ রান। ১৬ ওভারের পর স্কোর ৮ উইকেটে ৯৮। পরের ওভারে জাকের ছক্কা মেরে দলীয় স্কোর একশ পার করেন। দুইবার চোটের শঙ্কায় পড়েও ম্যাচ পাল্টে দেন তিনি। শেষ চার ওভারে এক উইকেটের বিনিময়ে যোগ হয়েছে ৬৪ রান।
জাকের খেলেন ৪১ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস। শেষ দিকে দশ ও এগারো নম্বরে নামা হাসান মাহমুদ ও শরিফুল ইসলাম ক্যামিও ইনিংস খেলেন, দুজনের ব্যাটে আসে ৪২ রান। তাদের জুটি ছিল ৩৪ রানের। হাসান ১৫ বলে ৩ ছয়ে ২৬ রানে অপরাজিত ছিলেন। সাত বলে একটি করে চার ও ছয়ে ১৬ রানে খেলছিলেন শরিফুল।
এর মধ্যে শেষ ওভারে দুটি বিমার মেরে শেষ বল করতে পারেননি মুহাম্মদ ওয়াসিম। ওই ওভারে দুই ছয় ও এক চারসহ ২৬ রান তোলে বাংলাদেশ।
শেষ দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ অবিশ্বাস্যভাবে ১৬২ রান করে ৯ উইকেট হারিয়ে। হায়দার আমিরাতের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট দেন মাত্র ৭ রান খরচায। সগীর ও মতিউল্লাহ নেন দুটি করে উইকেট।
৪১ রানে আউট জাকের
বাংলাদেশের একশ করা নিয়ে শঙ্কা জেগেছিল। বিপদসংকুল পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে যান জাকের আলী। তার ব্যাটেই ৩৫ বল বিরতি দিয়ে এসেছিল বাউন্ডারি। তারপর হাত খুলে খেলতে থাকেন এই ব্যাটার। দলীয় স্কোর একশ পার করেন তিনি ছক্কা মেরে। হাফ সেঞ্চুরির আভাস দিচ্ছিলেন জাকের। ১৯তম ওভারের প্রথম বলে সগীরকে ছক্কা মারেন। পরের বলে বড় শট খেলতে গিযে ৪১ রানে আউট তিনি। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে জুহাইব জুবাইরের ক্যাচ হন জাকের, ৩৪ বলে ১ চার ও ৩ ছয়ে ৪১ রান করেন। ১২৮ রানে ৯ উইকেট হারালো বাংলাদেশ।
জাকেরের ছক্কায় একশ পার করলো বাংলাদেশ
১৭তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ছক্কা মারলেন জাকের আলী। তাতে শঙ্কা দূর করে বাংলাদেশ একশ পার করলো ৮ উইকেট হারিয়ে।
সগীরের স্লো বাউন্সারে তানজিমের বিদায়
১১ ওভারে ৭১ রানে সাত উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল বাংলাদেশ। ২২ গজে যোগ দিয়ে তানজিম হাসান সাকিব ও জাকের আলী সতর্ক ব্যাটিং করতে থাকেন।
১৪তম ওভারের শেষ বলে সগীর খানের স্লো বাউন্সারে বাউন্ডারি মারতে গিয়ে লং অনে সীমানার সামনে মুহাম্মদ ওয়াসিমের ক্যাচ হন তানজিম। ১২ বলে ৬ রান করেন তিনি।
৮৪ রানে ৮ উইকেট হারালো বাংলাদেশ। তার বিদায়ের পর বাংলাদেশ পায় বাউন্ডারির দেখা। ছক্কা মারেন জাকের। ৩৫ বল বিরতি দিয়ে বাউন্ডারির দেখা পায় সফরকারীরা।
শামীম-রিশাদকে ফেরালেন মতিউল্লাহ
নিজের প্রথম ওভারে ১৮ রান দেওয়া মতিউল্রাহ খান ১১তম ওভারে বল হাতে নিয়ে সাফল্য পেলেন। প্রথম বলে শামীম হোসনকে রাহুল চোপড়ার গ্রাভসবন্দি করেন। তিন বল পর রিশাদ হোসেনকে এলডব্লিউ করেন তিনি। ৭১ রানে সাত উইকেট হারালো বাংলাদেশ।
তানজীদকে হারিয়ে আরও বিপদে বাংলাদেশ
অন্য প্রান্তের ব্যাটারদের যাওয়া আসার মাঝে তানজীদ হাসান তামিম ছিলেন ব্যতিক্রম। চার-ছয়ে গ্যালারি মাতিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু সপ্তম ওভারে তাকে থামতে হলো। আকিফ রাজার ওই ওভারের প্রথম তিন বলে দুটি চার মারার পর বলের লাইন মিস করে বোল্ড হন বাংলাদেশর ওপেনার। ১৮ বলে চারটি করে চার ও ছয়ে ৪০ রান করেছেন তানজীদ। ৫৭ রানে পাঁচ উইকেট পড়লো বাংলাদেশর।
পাওয়ার প্লেতে হায়দারের স্পিনে বাংলাদেশের চার উইকেট নেই
তিন বলের মধ্যে হায়দার আলী ফেরান লিটন দাস ও তাওহীদ হৃদয়কে। ৩১ রানে তিন উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। ষষ্ঠ ওভারেও আমিরাতের এই স্পিনারে কাছে বাংলাদেশ হারায় চতুর্থ উইকেট। ৪ উইকেটে ৪৯ রানে পাওয়ার প্লে শেষ করেছে তারা।
তৃতীয় ওভারে মতিউল্লাহ খানকে একটি করে চার ও ছয় মারেন লিটন। তানজীদ হাসান তামিমও ছক্কা মেরে আমিরাত পেসারকে হতাশ করেন। ওই ওভারে আসে ১৮ রান। কিন্তু পরের ওভারে হায়দার আলী বল নিয়ে ঝড় তোলেন। প্রথম তিন বলের মধ্যে লিটনকে ১৪ ও হৃদয়কে শূন্যতে এলবিডব্লিউ করেন। ওই ওভারে কোনও রান দেননি আমিরাতি স্পিনার।
হাযদার পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে শেখ মেহেদী হাসানকে (২) বোল্ড করে নিজের তৃতীয় শিকার বানান। তার আগের ওভারে ধ্রুব পরাশরকে এক চার ও দুটি ছয় মেরে ১৬ রান তোলেন তানজীদ। ৪৯ রানে চার উইকেট হারালো বাংলাদেশ।
ইমন গোল্ডেন ডাক
প্রথম ম্যাচে দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে সেঞ্চুরি করেছিলেন পারভেজ হোসেন ইমন। দ্বিতীয় ম্যাচে হালকা চোটের কারণে ছিলেন না একাদশে। বুধবার শেষ ম্যাচে ওপেনিংয়ে নামলেন, কিন্তু প্রথম বলেই আউট তিনি।
আগের ওভারের ছয় বলই খেলেন তানজীদ হাসান তামিম। দ্বিতীয় বলে চার ও শেষ বলে ছক্কা হাঁকান তিনি। দ্বিতীয় ওভারে ধ্রুব পরাশরের প্রথম বল লং অফ দিয়ে চার মারতে চেয়েছিলেন ইমন। কিন্তু শরাফুর সহজ ক্যাচ হন তিনি। ১০ রানে প্রথম উইকেট হারালো বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের একাদশে তিন পরিবর্তন
বাংলাদেশের একাদশে তিনটি পরিবর্তন। মেহেদী হাসান, পারভেজ হোসেন ইমন ও হাসান মাহমুদ ফিরেছেন। বাদ পড়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত, নাহিদ রানা ও তানভীর ইসলাম।
আমিরাতের একাদশে আকিফ রাজা ও ইথান ডি’সুজা খেলবেন আরিয়ানশ শর্মা ও মুহাম্মদ জাওয়াদুল্লাহর বদলে।
বাংলাদেশ একাদশ: পারভেজ হোসেন ইমন, তানজীদ হাসান তামিম, লিটন দাস (অধিনায়ক), তাওহীদ হৃদয়, জাকের আলী (উইকেটরক্ষক), শামীম হোসেন, রিশাদ হোসেন, তানজিম হাসান সাকিব, শরিফুল ইসলাম, শেখ মেহেদী হাসান, হাসান মাহমুদ।
সংযুক্ত আরব আমিরাত একাদশ: মোহাম্মদ ওয়াসিম (অধিনায়ক), আকিফ রাজা, আলিশান শরাফু, রাহুল চোপড়া (উইকেটরক্ষক), আসিফ খান, ধ্রুব পরাশর, মুহাম্মদ জোহাইব, হায়দার আলী, ইথান ডি’সুজা, মতিউল্লাহ খান, সাগীর খান।
আবার টস হেরেছে বাংলাদেশ
আবারও আগে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ, এবারও টসে হেরেছে তারা। শারজা ক্রিকেট স্টেডিযামে সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে টসে জিতে আগে ফিল্ডিং নিয়েছে স্বাগতিক সংযুক্ত আরব আমিরাত।
সিরিজ জিতে পাকিস্তানে যেতে পারবে বাংলাদেশ?
সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজটি রুপ নিয়েছে তিন ম্যাচের। দুই ম্যাচ ইতোমধ্যে ১-১ সমতা। ফলে আজ বুধবার অনুষ্ঠেয় তৃতীয় ম্যাচটি অলিখিত ফাইনালে রূপ নিয়েছে। যে দল জিতবে তারাই সিরিজ নিজেদের পকেটে পুড়বে।
স্বাগতিক আরব আমিরাত দুই ম্যাচেই দারুণ ক্রিকেট খেলেছে। অভিজ্ঞতার কারণে প্রথম ম্যাচ হারলেও দ্বিতীয় ম্যাচে ঠিকই জয় তুলে নিয়েছে। বুধবার তৃতীয় ম্যাচটিতে তাই জমজমাট লড়াইয়ের অপেক্ষা। শারজা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় শুরু হবে অলিখিত ফাইনাল। টি-স্পোর্টস ও নাগরিক টেলিভিশন ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে।