সতীর্থ অনেকের ক্যারিয়ার এখন অস্তাচলে। জাতীয় দল তো দূরের কথা, ক্লাব ফুটবলেই ৯০ মিনিট খেলার মতো ফিটনেস নেই অনেকের। কিন্তু এই জায়গায় ব্যতিক্রম ডিফেন্ডার রেজাউল করিম। বয়স যার কাছে শুধুই সংখ্যা মাত্র। ৩৩ বছর বয়সেও মাঠে সাবলীল পারফর্ম করে যাচ্ছেন। যার ফলও পেয়েছেন। ঘরোয়া ফুটবলে ইতিবাচক পারফরম্যান্স দেখিয়েই বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের প্রাথমিক দলে জায়গা করে নিয়েছেন। তাতে দীর্ঘ ৫ বছর পর আবারও জাতীয় দলে খেলার সুযোগ এসেছে তার সামনে।
রেজাউল করিম সবশেষ জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন ২০১৬ সালে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে। সেবার জর্দানের বিপক্ষে মাঠে নামার সুযোগ হলেও এরপর কেটে গেছে ৫টি বছর। এরমধ্যে পায়ের চোটসহ নানা কারণে এই ডিফেন্ডারের জাতীয় দলে ঢোকার দরজাটা অনেকটাই বন্ধ ছিল।
কিন্তু তার পরেও হতোদ্যম হননি শেখ জামালের এই ডিফেন্ডার। নিজের মতো করে চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। জানতেন, মাঠে ঠিকঠাক মতো প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের ট্যাকল করতে পারলে একসময় আবারও ডাক আসবে। সেই চেষ্টায় দুই মৌসুম ধরে বেশ ভালোভাবেই রক্ষণভাগ সামলাচ্ছেন। যে কারণে এবার জাতীয় দলের দরজাও নতুন করে খুলেছে।
ইংলিশ কোচ জেমি ডে তারুণ্যে বেশি আস্থা রাখতে চাইলেও অভিজ্ঞদের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করতে ভুল করেন না। সে কারণেই তার চোখে রেজাউলের খেলার ধরন ভালো লেগেছে।
অথচ ২০১৬ সালের পর থেকে রেজাউলের জীবন-ধারা ঠিকভাবে চলেনি। পরের বছরেই চট্টগ্রাম আবাহনীর হয়ে খেলতে গিয়ে ভেঙে যায় তার ডান পা। ইনজুরির কারণে তাই এক বছর মাঠের বাইরেও কাটাতে হয়েছে। তখন হতাশা গ্রাস করেছিল তাকে। আর মাঠে ফিরতে পারবেন কিনা, এমন আশঙ্কাও পেয়ে বসেছিল।
কিন্তু আত্মবিশ্বাসের জোর আর নিজের পরিশ্রম দিয়ে একপর্যায়ে মাঠে ফিরেছেন রেজাউল। তার সুফল পাচ্ছেন জাতীয় দলে ডাক পেয়ে। নিজের ওই সময়ের লড়াই নিয়ে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘যখন পা ভেঙে গেলো তখন অনেক খারাপ লেগেছিল। আর মাঠে ফিরতে পারবো কিনা সংশয় ছিল। তবে সতীর্থরা ভরসা জুগিয়েছে। আমিও আত্মবিশ্বাস হারাইনি। ঠিকই একবছর পর ফিট হয়ে মাঠে ফিরেছি।’
২০১০ সালে প্রথম জাতীয় দলে ডাক পান রেজাউল। বেশ কিছু ম্যাচও খেলেছেন। এই বয়সে দীর্ঘ বিরতির পর দলে ডাক পাওয়াতেও ভীষণ আনন্দিত তিনি, ‘আমি সবসময় চেষ্টা করেছি মাঠে খেলতে। আর জানতাম যে ভালো করতে পারলে একসময় ডাক আসবেই। বয়স আমার কাছে সংখ্যার মতোই। এই বয়সে যে ভালো খেলা সম্ভব। সেটা আমি প্রমাণ করেছি।’
তবে ২৮ জনের প্রাথমিক দলে রেজাউল ডাক পেলেও এখন চূড়ান্ত দলে জায়গা পেতে করতে হবে জোর লড়াই। সেখানে তপু, রিয়াদুল, কাজী তারিকসহ অন্যরাও আছেন। রেজাউল জানালেন, তিনি এর জন্যও প্রস্তুত, ‘আমি জানি আমার সামনে আরও কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে। এর জন্য মানসিকভাবে তৈরি। যে করেই হোক চূড়ান্ত দলে জায়গা পেতে হবে। লাল-সবুজ জার্সি গায়ে মাঠে দাপিয়ে বেড়াতে হবে মাঠ।’
এখন শুধু ৩৩ বছর বয়সী রেজাউলের স্বপ্নপূরণের পালা!