সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে দেশবাসীকে উৎসবের উপলক্ষ এনে দিয়েছেন সাবিনা-সানজিদারা। তাদের কীর্তির এমনই মাহাত্ম্য যে দেশব্যাপী আনন্দ-উৎসবটা হয়ে পড়েছে বাঁধনহারা। এমন হওয়াটা অবশ্য বাড়াবাড়িও নয়। অনেক দিন ধরে ব্যর্থতার অন্ধকারে ঢাকা পড়েছিল দেশের ফুটবল অঙ্গন। এখন মেয়েদের কারণে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনসহ পুরো দেশই সাফল্যের আলোয় আলোকিত। বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন তাই তৃপ্তি ঢেঁকুর তুলতে পারছেন। এই মেয়েদের নিয়ে সামনের দিকে কীভাবে পথ চলতে চান, তার রূপরেখা বাস্তবায়নেও কাজ শুরু করে দিয়েছেন। বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে সেই কর্মপন্থা নিয়ে কথা বলেছেন তিনি…
প্রশ্ন: নারী দলের জয়ে আনন্দে ভাসছে পুরো দেশ। ট্রফি জিতেছে এক সপ্তাহ হয়ে গেলো। এখনও কী তা স্বপ্নের মতো মনে হয়?
কাজী সালাউদ্দিন: না, তা হবে কেন। ওরা মাঠের পারফরম্যান্স দেখিয়ে ট্রফি জিতেছে। এটা ওদের প্রাপ্য। আর আমি যে ফুটবল নিয়ে কাজ করছি, তা দেশবাসীকে উপহার দেওয়ার জন্য্ই তো করি। এটা উপহার বলতে পারেন। ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করেছি দেশের জন্য। যতদিন শক্তি আছে, দেশের জন্য ফুটবল উন্নতিতে কাজ করবো। মেয়েদের সাফ জয় আমার ক্যারিয়ারে অন্যতম অর্জন বলতে পারেন।
প্রশ্ন: মেয়েরা তাদের মাসিক বেতন বাড়ানোর আবেদন করেছে। সাবিনাদের মুখ থেকে শুনেছি আপনি তাতে সম্মতি দিয়েছেন..
কাজী সালাউদ্দিন: এটা নির্ভর করছে অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর। বাড়বে তবে একদিনে কি সবকিছু বদলে যেতে পারে? অবশ্যই বাড়বে সেটা বলতে পারি। আমি ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে একটা সভা ডেকে অর্থনৈতিক অবস্থা দেখবো। কতটুকু বাড়বে তা দেখে সিদ্ধান্ত হবে।
আসলে বেতনটা পকেট মানির মতো। আমাদের ছেলে ও মেয়েদের একাডেমি আছে। ছেলেদের যখন কোনও ক্লাব কিনে নেয়, তখন আমরা তাদের কাছ থেকে খরচের জন্য লাখ লাখ টাকা নিয়ে থাকি। আর মেয়েদের বেলাতে তা কিন্তু নয়। বসুন্ধরাসহ অন্য যারা খেলোয়াড় নিচ্ছে তাদের কাছ থেকে কোনও অর্থ নেই না। মেয়েরা সব পেয়ে থাকে। এই সাপোর্ট আমরা ওদেরকে দিয়ে থাকি।
প্রশ্ন: চারদিকে অর্থ পুরস্কার ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে। এতে নিশ্চয়ই মেয়েদের আর্থিক অবস্থার কিছুটা হলেও পরিবর্তন হবে?
কাজী সালাউদ্দিন: কমিটমেন্ট পেয়েছি অনেক। সব মিলিয়ে যা পাবো ওদেরকে দিয়ে দেবো। বেতন ও বোনাসসহ। ওদেরকে যথেষ্ট মানে পুরোটাই দেওয়া হবে। ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে হবে না।
প্রশ্ন: কিন্তু একটা বিষয়… সাফের আসরে মেয়েদের জন্য কোনও আর্থিক পুরস্কার রাখা হয়নি। যেখানে ছেলেরা চ্যাম্পিয়ন হলে ৫০ হাজার ও রানার্সআপের জন্য ২৫ হাজার ডলার পেয়ে থাকে। এই বিষয়ে কী বলবেন?
কাজী সালাউদ্দিন: মেয়েদের তো স্পন্সর নেই তাই দেওয়া হয়নি। এখন যদি আসে তাহলে দেওয়া হবে। সবকিছু নির্ভর করে স্পন্সরের ওপর। সাফ বা বাংলাদেশ বলেন, আমরা তো পয়সা ধরে রাখি না। যখন যা আসে আমরা দিয়ে দিচ্ছি। এখন চেষ্টা করছি সামনের দিকে যেন সাফে মেয়েদের প্রাইজমানি থাকে।
প্রশ্ন: মেয়েদের লিগে অনেক বড় দলই নেই। সাফ জেতার পর চিত্র পাল্টাবে মনে করছেন?
কাজী সালাউদ্দিন: আমি এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে পারবো না। কে আসবে আর আসবে না আমি উত্তর দিতে পারবো না। অনেক দিন ধরে বড় ক্লাবগুলোকে আনার চেষ্টা করছি। কিন্তু আসছে না। এখন তো এই বিষয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না যে তারা দেখছে মেয়েরা কি করেছে।
প্রশ্ন: মেয়েদের ফুটবল নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখছেন। আসিয়ান পর্যায়ে খেলার চিন্তা-ভাবনা করছেন। এই বছর কোনও আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ আছে কী?
কাজী সালাউদ্দিন: এই বছর খেলার সুযোগ আছে। দুই বছরের জন্য টেকনিক্যাল ডিরেক্টর প্ল্যান দিয়েছে। আমি রিপোর্টটা পড়লাম। ভালো খেলতে হলে ওটা এক্সপেনসিভ ও কঠিন। চূড়ান্ত কিছু পরে জানাতে পারবো।
প্রশ্ন: তাহলে তো ব্যস্ততা আগের চেয়ে বাড়লো…
কাজী সালাউদ্দিন: ব্যস্ততা তো থাকবেই। ব্যস্ততা আছে বলেই ফুটবল চলে। জিতলে তো আরও থাকবে। আর ব্যস্ততা না থাকলে তখন মনে করবেন খেলা সেখানেই শেষ হয়েছে। জিতলে ব্যস্ততা, হারলেও ব্যস্ততা।
প্রশ্ন: মেয়েদের মতো ছেলেরা আবারও একসময় ট্রফি জিতবে- এখন এমন স্বপ্ন দেখেন নিশ্চয়ই?
কাজী সালাউদ্দিন: অবশ্যই স্বপ্ন দেখি একদিন ছেলেরা আবারও সাফ জিতবে। স্বপ্ন যদি না দেখি তাহলে তো কোনও দিন কিছু পাবো না। আমাকে নিয়ে লোকে যা কিছুই মনে করুক না কেন, যদি টার্গেটই না করি তাহলে তো কোনও কিছু পাবো না। আপনাকে টার্গেট ধরে এগোতে হবে। যেটা সফল হবে সেটা ভালো, নাহলে আমাকে বকবেন।