শরীরে নিষিদ্ধ পদার্থ পাওয়া গেল। ডোপপাপে এক নিমেষে খ্যাতির চূড়া থেকে ধুলোয় মিশে গেল তার সব অর্জন। কিন্তু হার মানেননি। সংবাদ সম্মেলন ডেকে বজ্রকণ্ঠে বলে দেন, ‘আমি ফিরব, আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরব।’ ফিরেছিলেনও মাত্র ১৭ বছর বয়সে টেনিসের আকাশে তারা হয়ে জ্বলে ওঠা মারিয়া শারাপোভা। কিন্তু পড়তি ফর্ম ও চোট তাকে আর স্বরূপে ফিরতে দিলো না। ৩২ বছর বয়সে টেনিস কোর্টকে বিদায় বলে দিলেন রাশিয়ান তারকা।
‘জীবন মানেই যেখানে ছিল টেনিস, সেটি কিভাবে ছেড়ে যাওয়া যায়? যখন তুমি ছোট ছিলে, সেই থেকে যে কোর্টে অনুশীলন করে এসেছো, সেটা থেকে দূরে কিভাবে যাবে? যে খেলাটি তুমি এতটা ভালোবাসো, যে খেলাটি তোমার চোখ জলে ভেজাতো এবং অব্যক্ত আনন্দ এনে দিতো, যে খেলা দিয়ে তুমি পরিবার পেয়েছো, ভক্ত পেয়েছো, যারা ২৮ বছরের বেশি সময় ধরে সঙ্গে ছিল, তাদের ছেড়ে কিভাবে যাবে? এখন আমি নতুন, তাই আমাকে মাফ করো। টেনিস-আমি বিদায় বলছি।’— আমেরিকান সাময়িকী ‘ভোগ অ্যান্ড ভ্যানিটি ফেয়ার’-এ লেখা প্রবন্ধে ঘোষণা দিয়েই পেশাদারি টেনিসে নিজের শেষচিহ্ন এঁকে দিলেন পাঁচটি গ্র্যান্ড স্লামজয়ী শারাপোভা।
২০০৪ সালে ১৭ বছর বয়সে টেনিস বিশ্বে নিজের নাম ছড়িয়ে দেন শারাপোভা। টেনিসের উন্মুক্ত যুগে মার্টিনা হিঙ্গিসের পর এখনও তিনিই সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে জিতেছেন উইম্বলডন। ২০০৫ সালে উঠে যান মেয়েদের টেনিসের এক নম্বরে। পরের বছরে পান ইউএস ওপেন জয়ের স্বাদ। দুই বছর পর ২০০৮ সালে জেতেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের মুকুট। তবে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে কঠিন দুটি গ্র্যান্ড স্লাম এসেছে রোলাঁ গারো থেকে। ২০১২ ও ২০১৪ ফ্রেঞ্চ ওপেনের ট্রফি যখন জিতেছিলেন, সেরেনা উইলিয়ামস তখন ফর্মের তুঙ্গে।
টেনিস কোর্টের পারফরম্যান্সের সঙ্গে তার গ্ল্যামার আলাদা জায়গা তৈরি করেছিল। কোটি ভক্তের হৃদয়ে শিহরণ জাগানো শারাপোভাকে আর দেখা যাবে না পেশাদার টেনিসে। এত ভালোবাসার মধ্যে মুদ্রার উল্টোপিঠও দেখতে হয়েছিল তাকে। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে তার শরীরে নিষিদ্ধ পদার্থের উপস্থিতি পাওয়া যায়। এতে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন। যদিও পরে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালত শাস্তি কমিয়ে করে ১৫ মাস। সমালোচনার তীরে বিদ্ধ শারাপোভার জন্য সেই সময়টা ছিল বড্ড কঠিন।
যদিও সব বাধা পেরিয়ে আবারও কোর্টে ফিরেছিলেন রুশ তারকা। কিন্তু হারানো সুর ফেরেনি তার র্যাকটে। বেসুরো সেই র্যাকেট একেবারে তুলে রাখারই সিদ্ধান্ত নিলেন শারাপোভা।