X
বুধবার, ২৮ মে ২০২৫
১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বন্ধ সিটিসেল টাওয়ারগুলোর কী হবে?

হিটলার এ. হালিম
১৯ জানুয়ারি ২০১৯, ০৯:৪৬আপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০১৯, ০৯:৫৯

সিটিসেল  

মোবাইল ফোন অপারেটর সিটিসেলের সেবা বন্ধ হয়েছে ২০১৬ সালের শেষ দিকে। সেই সময় থেকে অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে অপারেটরটির বিটিএস তথা টাওয়ারগুলো। তরঙ্গ (স্পেক্ট্রাম) বাতিল হওয়ার পর টাওয়ারগুলো প্রয়োজন হারিয়ে ফেলেছে। ফলে যারা (বিভিন্ন বাড়ি বা ভবনের মালিক) অপারেটরটির টাওয়ারের জন্য জায়গা লিজ বা ভাড়া দিয়েছেন, তারা বিপাকে পড়েছেন।

মূলত বাড়ি বা ভবনের ওপরেই রয়েছে টাওয়ারগুলো। তবে সিটিসেল কর্তৃপক্ষ কোনও ধরনের যোগাযোগ না করা ও বিল পরিশোধ না করায় পরিস্থিতি উত্তরণের কোনও সুযোগ দেখছেন না বাড়ির মালিকরা। বছরের পর বছর লিজ বা ভাড়ার টাকা ও বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় বিপদে পড়েছেন ভবন বা বাড়ির মালিকেরা। টাওয়ার ভাড়ার টাকা না পেলেও তা তারা সরাতে পারছেন না। অন্যদিকে সিটিসেল কর্তৃপক্ষের টাওয়ারে ব্যবহৃত বিদ্যুতের বিল মাসের পর মাস পরিশোধ না করায় তা বাড়ির মালিককে পরিশোধের জন্য তাগাদা দিচ্ছে বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষ।

মহাখালিতে সিটিসেল অফিসে গিয়েও বাড়ির মালিকরা কর্তৃপক্ষের কারও দেখা পাচ্ছেন না বলে জানা গেছে। 

জানা গেছে, সারাদেশে অপারেটরটির টাওয়ারের সংখ্যা ৮৭৬টি। সিটিসেল বন্ধের আরও দুই বছর আগে থেকে টাওয়ার ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ অনিয়মিত হয়ে পড়ে। চূড়ান্তভাবে বন্ধ হওয়ার আগে দীর্ঘদিন বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকার অভিযোগে ৭০০ টাওয়ারের সংযোগ বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে দেয়। পরে মাত্র ১৭৬টি টাওয়ার দিয়ে মোবাইল সংযোগ চালু রাখে অপারেটরটি। তারও আগে থেকে বাকি পড়তে থাকে টাওয়ারের জায়গার ভাড়া। 

এমন একজন বাড়ি মালিক নূর মোহাম্মদ খান। মিরপুরের ৬ নম্বর সেকশনের ডি ব্লকের একটি বাড়ি আছে তার। সিটিসেল বন্ধ হওয়ার ১০ বছর আগে, ২০০৬ সালে, ১০ বছর মেয়াদে সিটিসেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বাড়ির ছাদ ব্যবহারের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি নিয়মিত সিটিসেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ভাড়া পেলেও গত ৪ বছর ধরে পাচ্ছেন না। এমনকি বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়েছে প্রায় লাখ টাকা।

এই বাড়িওয়ালা জানান, ২০০৬ সালে প্রথম তিন বছরের জন্য টাওয়ার ভাড়া বাবদ মাসিক ৬ হাজার, পরের তিন বছরের জন্য মাসিক ৬ হাজার ৬০০, তার পরের তিন বছরের জন্য মাসিক ৭ হাজার ২০০ এবং শেষ বছর তথা ২০১৬ সালের জন্য মাসিক ৭ হাজার ৮০০ টাকা ভাড়ায় সিটিসেলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। ২০১৪ সাল থেকে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে কর্তৃপক্ষ ভাড়া বাকি রাখতে শুরু করে, যা এখনও চলছে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেকবার সিটিসেল অফিসে গিয়েছি। কথা বলার জন্য কাউকে পাই না। সিকিউরিটি গার্ডের সঙ্গে কথা বলে ফিরে আসি। তারা কারও সঙ্গে যোগাযোগের উপায়ও বলতে পারে না।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার মতো অনেককেই দেখেছি সিটিসেল অফিসে। তাদেরও চার-পাঁচ বছর ধরে টাওয়ার ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল বাকি।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রায় লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল বাকি পড়েছে আমার। যদিও এই টাকা সিটিসেলের দেওয়ার কথা। বিদ্যুৎ অফিস বার বার তাগাদা দিচ্ছে বিল পরিশোধের। বিল না দিলে আমার বাসার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেবে বলে জানিয়ে দিয়েছে।’

নূর মোহাম্মদ খান জানান, কিছুদিন আগে সিটিসেলের কর্মী পরিচয়ে দুটি ছেলে এসে জানায় যে তাদের সমস্যা মিটে গেছে। টাকা পয়সারও ব্যবস্থা হয়ে গেছে। শিগগিরই বকেয়া পরিশোধ করা হবে। যাওয়ার আগে টাওয়ারের অনেক কিছু খুলে নিয়ে গেছে তারা। বেশ কিছুদিন পেরিয়ে গেলেও কেউ ভাড়া পরিশোধ করতে আসেনি। সিটিসেলের লোকেরা টাওয়ার থেকে দামি যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে গেছে বলে ধারণা করচেণ তিনি।

 এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সিটিসেলের প্রধান নির্বাহী মেহবুব চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগের জন্য তার মোবাইল ফোনে কল করলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। 

যোগাযোগ করলে প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড (সিটিসেল) এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (পিবিটিএলইইউ)-এর সাবেক সভাপতি আশরাফুল করিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘টাওয়ারগুলো একসময় সিটিসেলের সম্পদ হিসেবে থাকলেও এখন তা কোম্পানিটির দায়ে পরিণত হয়েছে। এগুলো বিভিন্ন ভবন বা বাসাবাড়ি থেকে নিয়ে যেতে হলেও তো বকেয়া (ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল) পরিশোধ করতে হবে। ফলে ধরেই নেওয়া যায় সিটিসেল এগুলো আর ফেরত নেবে না।’

 তিনি জানান, সিটিসেল প্রথম দিকে টাওয়ারগুলো নিজেরা ব্যবস্থাপনা করলেও পরে থার্ড পার্টিকে দায়িত্ব দেয়।

সিটিসেলের টাওয়ারগুলো নিয়ে অনিশ্চয়তার বিষয়টিও উল্লেখ করেন আশরাফুল করিম। তিনি বলেন, ‘সিটিসেলের টাওয়ারগুলো সিডিএমএ প্রযুক্তির। দেশের কোনও মোবাইল অপারেটর এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে না। টাওয়ার শেয়ারিংয়ের জন্য গঠিত চার কোম্পানির কোনওটির কাজে লাগবে না সিটিসেলের টাওয়ারগুলো।’      

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৩১ জুলাই বিটিআরসি এক বিজ্ঞপ্তিতে সিটিসেলের গ্রাহকদের দুই সপ্তাহের মধ্যে বিকল্প সেবা গ্রহণ করতে অনুরোধ জানায়। সে হিসেবে ১৬ আগস্ট পর্যন্ত সময় পান গ্রাহকরা। যদিও সে সময়ের ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম জানান, বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিটিসেলের গ্রাহকরা আরও সময় পাবেন। এরপরে সিটিসেল উচ্চ আদালতে গেলে বিষয়টি আদালতের সিদ্ধান্তে ওপর চলে যায়। বিটিআরসি ওই নোটিশ দিলে সিটিসেল আপিল বিভাগে যায়। আপিল বিভাগ গত ২৯ আগস্ট সিটিসেলের বকেয়া টাকা পরিশোধ করার শর্তে অপারেশন চালিয়ে যেতে বলেন। এজন্য সিটিসেল পেয়েছিল দুই মাস সময়। সিটিসেলের বকেয়া ৪৭৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা দুই কিস্তিতে পরিশোধের কথা বলা হয়।

বিটিআরসি প্রকাশিত (২০১৬ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত) তথ্য অনুসারে, সিটিসেলের গ্রাহক সংখ্যা ৬ লাখ ৬৮ হাজার। সংশ্লিষ্টরা বলেছিলেন, সিটিসেলের সক্রিয় গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ (বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধিত)। ৩১ আগস্ট বিটিআরসি প্রকাশিত এক তথ্যে সিটিসেলের গ্রাহক সংখ্যা ১ লাখ ৪২ হাজার উল্লেখ করা হয়।


এদিকে বকেয়া টাকা শোধ না করায় ২০১৬ সালের ২০ অক্টোবর সিটিসেলের তরঙ্গ স্থগিত করা হয়। এরপর ১৭ দিন বন্ধ থাকার পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ৬ নভেম্বর সিটিসেলের স্থগিত তরঙ্গ ফিরিয়ে দেওয়ার পরে অপারেটরটির সুইচ রুম চালু হলেও কোনও গ্রাহক অবশিষ্ট না থাকায় কার্যত বন্ধই থাকে সিটিসেল। এরপরে বকেয়ার কিস্তি পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় সিটিসেল পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়। যদিও সিটিসেলের লাইসেন্স এখনও সক্রিয় রয়েছে বলে জানা গেছে।  

প্রসঙ্গত, ১৯৮৯ সালে বিটিআরসি থেকে টেলিযোগাযোগ সেবার লাইসেন্স পেয়েছিল সিটিসেল।

 

 

/এএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ঢাকায় বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠনের তারুণ্যের সমাবেশ আজ
ঢাকায় বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠনের তারুণ্যের সমাবেশ আজ
মানবপাচারে সম্পৃক্ততার অভিযোগে বিমানবন্দরে ২ চীনা নাগরিক গ্রেফতার
মানবপাচারে সম্পৃক্ততার অভিযোগে বিমানবন্দরে ২ চীনা নাগরিক গ্রেফতার
পুতিন আগুন নিয়ে খেলছেন: ট্রাম্প
পুতিন আগুন নিয়ে খেলছেন: ট্রাম্প
যেভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনকে 
যেভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনকে 
সর্বাধিক পঠিত
চাকরি হারানোর শঙ্কায় সচিবালয়ের কর্মচারীরা, আন্দোলনের ভাগ্য নির্ধারণ আজ         
চাকরি হারানোর শঙ্কায় সচিবালয়ের কর্মচারীরা, আন্দোলনের ভাগ্য নির্ধারণ আজ         
একীভূত করা ব্যাংকের আমানতকারীদের আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান
একীভূত করা ব্যাংকের আমানতকারীদের আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান
নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয় দখলের চেষ্টা
নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয় দখলের চেষ্টা
সচিবালয়ে আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করতে বাইরে ২ ছাত্র সংগঠনের অবস্থান
সচিবালয়ে আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করতে বাইরে ২ ছাত্র সংগঠনের অবস্থান
লালমনিরহাটে ‘চীনা তৎপরতা’র জবাবে ১৯৭১ সালের বিমানঘাঁটি সচল করছে ভারত: এনডিটিভি
লালমনিরহাটে ‘চীনা তৎপরতা’র জবাবে ১৯৭১ সালের বিমানঘাঁটি সচল করছে ভারত: এনডিটিভি