X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

কতটা পুরনো হলে কম্পিউটার-ল্যাপটপকে ‘পুরনো’ বলা যাবে?

হিটলার এ. হালিম
১৯ জুন ২০২৩, ১০:০০আপডেট : ১৯ জুন ২০২৩, ১০:০০

দেশের প্রযুক্তি বাজারে নতুনের চেয়ে পুরনো কম্পিউটার-ল্যাপটপ বিক্রি বেশি হচ্ছে। নতুনের দাম বেশি হওয়ায় পুরনো এ পণ্যের প্রতি ঝুঁকছেন ব্যবহারকারীরা। শুধু মূল্যবৃদ্ধির এই কারণে নতুন ল্যাপটপ-কম্পিউটারের বিক্রি মাসে পাঁচ থেকে ছয় হাজার ইউনিট। আর পুরনো বিক্রি ১০ হাজারেরও বেশি।

কিন্তু ক্রেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা জানতে চান, কত দিন ব্যবহার করা হলে কম্পিউার-ল্যাপটপকে পুরনো বলা হবে? শুধু এই বিষয়টা পরিষ্কার না থাকায় বাজারে নতুন-পুরনোর দ্বন্দ্বে সংকটে পড়েছেন ক্রেতারা। তবে বিক্রেতারা আছেন ভয়ে।

কত দিন ব্যবহারের পর আধুনিক এই প্রযুক্তিপণ্যগুলোকে পুরনো বলা যাবে, তার নির্দিষ্ট কোনও সংজ্ঞা নেই। ফলে কেউই জানে পুরনো কম্পিউটার কী।

তবে আমদানি নীতি ঘাঁটলে দেখা যায়, পুরনো কম্পিউটার একটি আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য। আমদানি নীতি-২০২২ -এ যে ২১ ক্যাটাগরির পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে রিকন্ডিশন্ড অফিস ইক্যুইপমেন্ট (যেমন: ফটোকপিয়ার, টাইপরাইটার, টেলেক্স, ফোন, ফ্যাক্স, পুরনো কম্পিউটার ও কম্পিউটার সামগ্রী এবং পুরনো ইলেকট্রনিকস সামগ্রী)। আমদানি নীতিতেও পরিষ্কার করে বলে দেওয়া নেই বিষয়টি। শুধু পুরনো বলেই ক্ষান্ত দেওয়া হয়েছে।

আবার দেশের প্রযুক্তিপণ্যের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) সভাপতি সুব্রত সরকার বলেন, এর সুনির্দিষ্ট কোনও সংজ্ঞা নেই। তবে ল্যাপটপ-কম্পিউটার বিক্রির সময় আমরা গ্রাহকদের দুই থেকে তিন বছরের ওয়ারেন্টি দিই। ওয়ারেন্টি শেষ হওয়ার পরও একজন ব্যবহারকারী তার ল্যাপটপ বা কম্পিউটার আরও তিন বছর বা তার চেয়েও বেশি সময় ব্যবহার করতে পারেন। সব মিলিয়ে বলা যায়, পাঁচ থেকে ছয় বছর ব্যবহারের পরই এগুলো পুরনো হয়ে যায়।

বিসিএস সভাপতি আরও বলেন, দেশের কম্পিউটার ডিস্ট্রিবিউররা আমাদের জানিয়েছেন, দেশে রিফার্বিশ ল্যাপটপ আমদানি হয়ে বাজার সয়লাব। কিন্তু পুরনো কম্পিউটার তো আমদানি করা যায় না। ফলে আমরা ধরে নিয়েছি যারা এসব আনছেন, তারা গোপনে নিয়ে আসছেন। আমরা সেসব লক্ষ্য রাখছি। তিনি আরও বলেন, আমাদের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় ক্রেতারা পুরনোর প্রতি ঝুঁকেছন।

বিসিএস সভাপতি জানান, দেশে ব্যবহৃত ল্যাপটপ বিক্রি হয়। ব্যবসায়ীরা সরকারি বা করপোরেট প্রতিষ্ঠানের পুরনো ল্যাপটপ (আপগ্রেড করার কারণে) কম্পিউটার কিনে যদি ঠিকঠাক করে বিক্রি করেন, তাহলে তো কোনও সমস্যা নেই। কারণ এটা বিক্রি করায় কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই।

তিনি আরও জানান, ব্যবসায়ীদের বলে দেওয়া হয়েছে তারা যেন বিক্রির সময় পুরনো কম্পিউটার কেনার সংশ্লিষ্ট ডকুমেন্ট সঙ্গে রাখেন। তাহলে যেকোনও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানো সম্ভব।

কতটা পুরনো হলে কম্পিউটার-ল্যাপটপকে ‘পুরনো’ বলা যাবে?

পুরনো কম্পিউটারেরও কোনও সংজ্ঞা কোথাও পাওয়া গেলো না। কত পুরনো কম্পিউটার বাজারে বিক্রি করা যাবে, কোনগুলো যাবে না; এ বিষয়ে জানেত চাইলে সভাপতি বলেন, সংজ্ঞা নির্ধারণে কোনও কাজ হয়নি। আমরা এ বিষয়ে উদ্যোগ নেবো, কথা বলবো।

পুরনো ল্যাপটপের বিষয়ে কথা বলতে চাইলে নাম ও পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে রাজধানীর মিরপুরের শাহআলী মার্কেটের এক বিক্রেতা বলেন, আমরা যেসব ল্যাপটপ বিদেশ থেকে নিয়ে আসি, এগুলোকে কোনোভাবেই পুরনো বলা যাবে না। কারণ এসব ল্যাপটপের কোনোটা তিন মাস বা ছয় মাসও ব্যবহার করা হয়নি। দুই বা তিন মাসের প্রজেক্ট শেষ বা কোনও অফিস তাদের সব কম্পিউপটার, ল্যাপটপ আপগ্রেড করে, তখন সব বিক্রি করে দেয়। এগুলো আসলে একেবারে নতুন ল্যাপটপ। চকচক করে। একটা স্পটও নেই। নতুনের মতোই দেখায়। তাহলে এগুলো কীভাবে পুরনো? কিন্তু এগুলো তো আনা নিষেধ। তবে অবৈধ, এ কথা শুনে বিক্রেতা মারমুখী হয়ে ওঠেন। আর কথাই বললেন না।

অপর দিকে দেশে এক নতুন ল্যাপটপ আমদানিকারকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটা প্রোডাক্ট আনবক্সিং করে প্রথম ব্যবহারকারী পর্যন্ত সেটা নতুন। এর পরের সবই পুরনো। ফলে এটা নিয়ে জটিলতার কিছু দেখি না।

তিনি আরও বলেন, একটা কম্পিউটার বা ল্যাপটপের আয়ুষ্কাল পাঁচ থেকে ছয় বছর। ফলে সেই সময় পেরিয়ে গেলে সেটাকে পুরনো বলতেই হবে। তবে যিনি প্রথম ব্যবহার করবেন, তিনি যদি এক দিন বা দুই দিন ব্যবহার করেও অন্যকে তা দিয়ে দেন বা দান করেন, তখনও সেটিকে নতুন পণ্য বলার সুযোগে নেই। পুরনোই বলতে হবে।

প্রসঙ্গত, দেশে করোনা আঘাত হানার আগে আগে প্রতি মাসে ল্যাপটপ বিক্রির পরিমাণ ছিল ২০ থেকে ২৫ হাজার ইউনিট। করোনার সময় তা কমতে থাকে। পরবর্তী সময়ে এসবের বিক্রি বাড়লেও নতুন ল্যাপটপ তার হারানো জায়গা আর ফিরে পায়নি। পুরনো ল্যাপটপের বাজার সেই জায়গা দখল করে ফেলেছে। দেশে এই সময়ে প্রতি মাসে ১৬ থেকে ১৭ হাজার ল্যাপটপ বিক্রি হয়। এর মধ্যে নতুন ল্যাপটপের পরিমাণ পাঁচ থেকে ছয় হাজারের মতো। পুরনো ল্যাপটপের সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি।

কম্পিউটার আমদানির ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করা না হলে পুরনো ল্যাপটপ বিক্রি বন্ধ করা যাবে না বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত। বাজারে এখন ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকার নিচে কোনও ল্যাপটপ পাওয়া যায় না। ল্যাপটপ ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া গেলে পুরনো ল্যাপটপের বাজারটা আর বড় হয় না। কিন্তু তার আগে সংজ্ঞা নির্ধারণ জরুরি বলে মনে করেন বাজার-সংশ্লিষ্টরা।

/এনএআর/
সম্পর্কিত
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
কোড সামুরাই হ্যাকাথনের দ্বিতীয় পর্বের ফল প্রকাশ, ৪৬ দল নির্বাচিত
এআই স্মার্টফোন আনলো টেকনো
সর্বশেষ খবর
১০ বাংলাদেশিকে সীমান্ত এলাকা থেকে মিয়ানমারে অপহরণ
১০ বাংলাদেশিকে সীমান্ত এলাকা থেকে মিয়ানমারে অপহরণ
তিন মামলায় মিল্টনের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
তিন মামলায় মিল্টনের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
ভারতের ভোটে বিজেপির পক্ষে কি ‘৪০০ পেরোনো’ আদৌ সম্ভব?  
ভারতের ভোটে বিজেপির পক্ষে কি ‘৪০০ পেরোনো’ আদৌ সম্ভব?  
বিশ্বকাপ দল নিয়ে লুকোচুরি কেন?
বিশ্বকাপ দল নিয়ে লুকোচুরি কেন?
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
তীব্র তাপপ্রবাহ যেখানে আশীর্বাদ
তীব্র তাপপ্রবাহ যেখানে আশীর্বাদ
মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তদন্ত করবে ডিবি
মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তদন্ত করবে ডিবি
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে