X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

পেঁয়াজ বুঝিয়ে দিলো কারসাজি আছে

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
০৭ জুন ২০২৩, ১৬:২৭আপডেট : ০৭ জুন ২০২৩, ১৬:২৭

সরকার পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণা দিতে না দিতেই পাইকারি বাজারে পণ্যটির দাম কমতে শুরু করেছে। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সোমবার থেকেই পেঁয়াজ আসতে শুরু করেছে ভারত থেকে। তবে আমদানিকৃত পেঁয়াজ দেশের বাজারে ঢোকার আগেই চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৩০ টাকা কমে গেছে। নিশ্চয়ই খুচরা বাজারেও আমরা এর ইতিবাচক প্রভাব দেখবো।

এই ঘটনা জলজ্যান্ত প্রমাণ যে বাজারে কারসাজি চলছে, সিন্ডিকেট তৎপরতা আছে। কোন পক্ষ বা কাদের প্ররোচনায় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করে মুনাফাখোরদের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল জনগণের পকেট কাটার, সেটিও সামনে আসা দরকার এখন।

শুধু পেঁয়াজ নয়, প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম এখন সাধারণ মানুষের হাতছাড়া। গরম আর চরম লোডশেডিংয়ের মধ্যে বাজারে আগুন। প্রতিটি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির আঁচে সাধারণ মানুষের হাত পুড়েই চলেছে। সাধারণ মানুষের কাছে রান্না করার জন্য দুটো ভাত ফোটানোই যেন সাধ্যাতীত হয়ে পড়েছে।

সদ্য শেষ হওয়া মে মাসে সার্বিকভাবে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ, যা ২০১২ সালের পর সর্বোচ্চ। এই বাস্তবতাতেই পহেলা জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংসদে নতুন অর্থবছরের জন্য বাজেট পেশ করেছেন সেখানে গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছেন। দীর্ঘ সময় ধরে মানুষ যখন মূল্যস্ফীতির চাপে দিশেহারা তখন কোন ম্যাজিকে নতুন অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি এতটা কমে যাবে? অর্থনীতিবিদরা সন্দিহান এবং বাস্তবতার সঙ্গে তার খুব একটা মিলও পাচ্ছেন না। ঠিক চারদিনের মাথায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, একদিকে মূল্যস্ফীতি আর অপরদিকে লোডশেডিংয়ে দেশের মানুষ কষ্ট পাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর এই স্বীকারোক্তি এবং বাজেটে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার গুরুত্ব দেওয়া অবশ্যই ইতিবাচক। কিন্তু সীমাহীন লোডশেডিংয়ে শিল্প উৎপাদন কমে যাওয়া, সেবা খাত ব্যাহত হওয়া, ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ কমে যাওয়া, ডলার সংকটে আমদানি কম হওয়া এবং সর্বোপরি আন্তর্জাতিক বাজারের টালমাটাল অবস্থায় এটা কী করে সম্ভব সেটাই বড় প্রশ্ন। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচককে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে বেঁধে রাখার লক্ষ্য ঘোষণা করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। পরে তা সংশোধন করে ৬ শতাংশ করা হয়। তবে সেই লক্ষ্যও পূরণ করা যায়নি।

নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বর্তমানে সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে অনেক আগেই। চলতি অর্থবছরের প্রায় পুরোটা সময়েই দেশের বাজারে ছিল ভোক্তাদের হাহাকার। দুটি চিন্তার বিষয় থেকেই যাচ্ছে। প্রথমত, ডলারের সংকট এবং দাম এবং দ্বিতীয়ত, আমাদের মূল্যস্ফীতির হার আন্তর্জাতিক স্তরে তার সমগোত্রীয় দেশগুলোর তুলনায় গত কয়েক বছর ধরেই উদ্বেগজনক রকম বেশি।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি যে প্রত্যাশার তুলনায় ধীর হয়ে পড়ছে, তা এখন সংশয়াতীত। দেখতে হবে, এটাই যেন পাকাপাকি অবস্থা না হয়ে দাঁড়ায়। আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি খুবই খারাপ। ইউরোপ ধুঁকছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থাও তথৈবচ। এমনকি, চীনেও উৎপাদনের গতি খানিক হ্রাস পেয়েছে। এই পরিস্থিতির ঝাপটা লেগেছে আমাদের অর্থনীতিতে বেশ আগেই। নতুন অর্থবছরের বাজেট এলো, কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধ থামার কোনও লক্ষণ নেই। অর্থমন্ত্রী হয়তো ভেবে রেখেছেন আগামী অর্থবছরে যুদ্ধ বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং এতে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

শুধু বৈশ্বিক ঘটনার কারণেই আবার মূল্যস্ফীতি ঘটছে এটা বলে সরকারের হাত গুটিয়ে রাখারও উপায় নেই। মূল্যস্ফীতি কমানোর উদ্যোগের চেয়ে মূল্যস্ফীতি নির্দিষ্ট একটা জায়গায় ধরে রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ। বৈশ্বিক কারণ আছে, কিন্তু অভ্যন্তরীণ কোন কোন কারণে তা দুঃসহ হয়ে উঠলো তা সুনিশ্চিত করা প্রয়োজন। বাজারে আস্থার অভাবই বৃহত্তম সংকট বলে মনে করেন অনেকে। কারণ, কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই কোথাও। বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতিটা অতি বিস্তৃত। প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। আমদানি করা পণ্য, দেশে উৎপাদিত পণ্য কিংবা যেসব পণ্য বা সেবা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ঢোকে না, সব ধরনের পণ্যের ক্ষেত্রেই মূল্যস্ফীতির লক্ষণটা দেখা যাচ্ছে। তাহলে এ কথা বলা যাচ্ছে না যে শুধু আন্তর্জাতিক মূল্যবৃদ্ধিই আমাদের অভ্যন্তরীণ মূল্যস্ফীতির কারণ।

মূল্যস্ফীতির জন্য বড় আরেকটি কারণ অবশ্যই অভ্যন্তরীণ চাহিদার একটি বড় ধরনের বৃদ্ধি। কিন্তু বাজারে যে একটা কারসাজি আছে সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই। বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেল, গম, মসুর ডাল, জ্বালানি তেল, প্রাকৃতিক গ্যাসসহ সব পণ্যের দাম এখন কমতির দিকে। কিন্তু সেই সুফল পাচ্ছে না বাংলাদেশের মানুষ।

যে কথা বলছিলাম, দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতির জন্য কেবল বিশ্ববাজারকে দায়ী করা যৌক্তিক নয়। মূল্যস্ফীতি এখন দেশীয় কারণেই বেশি হচ্ছে। সরকার একদিকে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না, অন্যদিকে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়ে মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিয়েছে। জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম বিশ্ববাজারে কমলেও দেশে কমানো হচ্ছে না। বরং এ খাত থেকে ভর্তুকি পুরোপুরি তুলে নিয়ে মুনাফা করছে সরকার। তীব্র লোডশেডিং এবং উচ্চ জ্বালানি মূল্যের কারণে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন খরচও বেড়ে গেছে বহুগুণ। বিশ্ববাজারে শিল্পের কাঁচামালের দামও কমেছে। কিন্তু দেশের বাজারে এর প্রভাব নেই। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের দাম কমছে না। কারণ কাস্টমস কর্মকর্তারা শুল্ক আগের বেড়ে যাওয়া দামেই ধরছে।

পেঁয়াজের মতো অন্যান্য পণ্যের বেলায়ও যে একটা কারসাজি আছে সেটা মেনে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে যেন দাম সহনীয় পর্যায়ে আসে। বিশেষ করে আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে এদিকে দৃষ্টি দেওয়া জরুরি। নাগরিক সমাজ যাতে মূল্যবৃদ্ধি এবং করের বোঝায় জর্জরিত না হয়ে পড়ে, সেটা দেখা রাষ্ট্রের কর্তব্য।

লেখক: সাংবাদিক

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
টেকনাফে ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা, গ্রেফতার ৬
টেকনাফে ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা, গ্রেফতার ৬
সিলেটে ভবন থেকে পড়ে যুবকের মৃত্যু
সিলেটে ভবন থেকে পড়ে যুবকের মৃত্যু
এক ফ্রেমে এত ‘সুন্দরী’, স্মৃতিকাতর সকলেই!
এক ফ্রেমে এত ‘সুন্দরী’, স্মৃতিকাতর সকলেই!
ফোরাম থেকে ব্যারিস্টার খোকনের অব্যাহতির আদেশ প্রত্যাহার
ফোরাম থেকে ব্যারিস্টার খোকনের অব্যাহতির আদেশ প্রত্যাহার
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ