X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

পর্যটন নিয়ে মহাপরিকল্পনা সময়ের দাবি

সালেক উদ্দিন
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৭:৪৫আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৭:৪৮

আমরা পালন করছি বিশ্ব পর্যটন দিবস। জাতিসংঘের সব সদস্য দেশে ১৯৮০ সাল থেকে এটি পালিত হয়ে আসছে। যথারীতি বাংলাদেশেও এই দিবস রমরমা আয়োজনের মাধ্যমে পালিত হয়। এ বছরও এর ব্যত্যয় হয়নি।

২৭ সেপ্টেম্বর আমরাও উদযাপন করছি বিশ্ব পর্যটন দিবস ২০২৩। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ৪ দিনব্যাপী বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করেছে। এতে এয়ারলাইন্স, হোটেল, রিসোর্ট, অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, টুরিস্ট ভেসেল, ট্রাভেল এজেন্ট, ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।

পর্যটন, পর্যটক ও পর্যটনকেন্দ্রের নিরাপত্তা, ডাটা ইনোভেশন, এসডিজি ও পর্যটন, পর্যটনে বিনিয়োগ সম্ভাবনা, পর্যটন খাতে মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং পর্যটন শিল্পে নারীর অংশগ্রহণ ইত্যাদি বিষয়ে সেমিনারের আয়োজন করা হবে বলেও জানা গেছে। আমরা পর্যটন দিবসের এসব আয়োজনকে স্বাগত জানাই। কারণ, এসবের  উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য মহৎ, যদি তার সঠিক বাস্তবায়ন হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সম্প্রসারণের ফলে বিশ্বব্যাপী পর্যটন ব্যবসার প্রসার ঘটে। প্রতিষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক ভ্রমণ বিষয়ক সংস্থা আইইউওটিও। বিশ্বব্যাপী অবসরকালীন কর্মকাণ্ডের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করায় এবং এর থেকে দেশ-বিদেশের উল্লেখযোগ্য ভৌগোলিক ও কৃত্রিম সৌন্দর্য অবলোকন, শিল্পকর্ম, শিক্ষা সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিতি লাভ করার কারণে বিশ্বে পর্যটন শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। শুধু শিল্পই নয়, পর্যটন রূপ নিয়েছে ব্যবসায়, যা একটি দেশের অর্থনীতিতে বিরাট প্রভাব ফেলতে পারে।

ফ্রান্স, মিসর, লেবানন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, স্পেন, ইতালি, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ফিজি, মালদ্বীপ, ফিলিপাইন, ভারতসহ অনেক দেশের পর্যটন খাত সে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছে। আমরাও সেরকম আশাবাদ নিয়েই এ বছরের বিশ্ব পর্যটন দিবস পালন করছি।

প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা যেতে পারে, আমি প্রথম যখন সিঙ্গাপুর ভ্রমণ করি, তখনই মনে হয়েছিল আমরাও এরকম একাধিক সিঙ্গাপুর করতে পারি। সেই আশার আলো এখনও আমার মনে দোলা দেয়। এটা অবশ্যই একটি স্বপ্ন। তবে সেই স্বপ্নটি ‘ঘুমিয়ে দেখা স্বপ্ন’ না হয়ে একদিন দেশের দিবাস্বপ্নও হতে পারে। কারণ, ছোট্ট একটি দ্বীপ সিঙ্গাপুর। যার জনসংখ্যা মাত্র ৫০ লাখ। দেশটি কৃত্রিমভাবে যে পর্যটনবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করেছে তাতে আকৃষ্ট না হয়ে উপায় নেই। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা প্রতিনিয়ত সেখানে যাচ্ছেন। ফলে সিঙ্গাপুরের অর্থনৈতিক খাতে, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের খাতে বিরাট ভূমিকা রাখছে তাদের পর্যটন শিল্প। এমনকি আছে সেখানে যার জন্য পৃথিবীর অধিকাংশ পর্যটকরাই একবার হলেও সিঙ্গাপুরে আসতে চায়?

আমার একটি লেখায় সিঙ্গাপুর সম্পর্কে লিখেছিলাম, দেশটি পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য প্রাকৃতিক ঐশ্বর্যের পাশাপাশি কৃত্রিমভাবে যা যা তৈরি করা প্রয়োজন, তা-ই  করেছে। সেখানে রয়েছে নাইট সাফারি, মারলওন পার্ক, সেন্ট্রোসা আইল্যান্ড,  ইত্যাদি। এছাড়া পর্যটকদের বিনোদনের জন্য ইউনিভার্সাল স্টুডিও, নাইট ক্লাব, ক্যাসিনোসহ নানা ধরনের পর্যটন কালচার সৃষ্টি করেছে তারা। আইনশৃঙ্খলার বিন্দুমাত্র ব্যত্যয় যেন না হয় তা নিশ্চিত করেছে। সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা, বসবাস ব্যবস্থা, চিকিৎসা ব্যবস্থা, জননিরাপত্তা ব্যবস্থা, যা একজন পর্যটকের প্রাথমিক চাহিদা, তা শতভাগ নিশ্চিত করেছে এই দেশটি। এসব কারণেই হয়তো প্রায় সারা বছরই সিঙ্গাপুর পর্যটকে ভরপুর থাকে। মাঝে মাঝে তাদের নিজস্ব জনসংখ্যার চেয়ে পর্যটকের সংখ্যা থাকে বেশি। তাদের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের একটি বিরাট অংশ আসে এই পর্যটকদের পকেট থেকে।

সেই লেখায় আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলাম, উন্নত দেশ সিঙ্গাপুরের অর্থনীতির প্রাণভোমরা যে পর্যটন শিল্প সেরকম একটি সিঙ্গাপুর আমাদের কক্সবাজার এবং পার্বত্য জেলায় তৈরি করা অসম্ভব নয়, বরং তার চেয়েও ভালো কিছু সৃষ্টি করা সম্ভব। কারণ, সিঙ্গাপুরের পর্যটনকেন্দ্রগুলো অধিকাংশই কৃত্রিম আর আমাদেরটা হবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে কৃত্রিমতার মিশ্রণে অনন্য পর্যটনভূমি।

আমরা কি পারবো না সিঙ্গাপুরের মতো সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা, বসবাস ব্যবস্থা, চিকিৎসা ব্যবস্থা, জননিরাপত্তা ব্যবস্থা শতভাগ নিশ্চিত করে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে?

পর্যটন যেমন শিল্প তেমন লাভজনক ব্যবসা। এই ব্যবসায় সেসব দেশই সবচেয়ে বেশি লাভবান হয় যেসব দেশ গোঁড়ামির বলয় থেকে বেরিয়ে এসে পর্যটন শিল্পের সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে পারে। পর্যটন সংকৃতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে পারে।

বিষয়টি অনুধাবন করেই হবে হয়তো সরকার পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের জন্য দীর্ঘমেয়াদি  ‘পর্যটন মহাপরিকল্পনা’ প্রণয়নের পরিকল্পনা করেছে। এই মহাপরিকল্পনায় পর্যটনকে দেশের উল্লেখযোগ্য শিল্প হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতি এবং দেশি ও বিদেশি জনগণের ক্রমবর্ধমান চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পর্যটন শিল্পকে পরিবেশবান্ধব, নিরাপদ ও টেকসই করে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে।

এটি অবশ্যই একটি যুগোপযোগী পদক্ষেপ এবং এই পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে দেশের পরিবেশ ও অর্থনীতি বদলে যেতে পারে। বাংলাদেশ হতে পারে পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর একটি।

সরকারের এই 'পর্যটন মহাপরিকল্পনা' বাস্তবায়নের প্রধান অন্তরায় হতে পারে দুর্নীতি, যা আমাদের কালচারে রূপ নিয়েছে। আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি আজ থেকে নয় সব সরকারের আমলেই ছিল এবং এখনও আছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে পাল্লা দিয়ে চলছে। দেশের যোগাযোগ ক্ষেত্র থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে যে বিশাল উন্নয়ন আজ দৃশ্যমান হচ্ছে, তা আরও বহু আগে দৃশ্যমান হতো যদি পাশাপাশি দুর্নীতির ঘোড়াটা না দৌড়াতো।

আমরা আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার ড. মাহাথিরের উন্নয়নের উদাহরণ টানতে পারি। যদিও তার সরকার একেবারে দুর্নীতির অভিযোগমুক্ত ছিল না। তারপরও  মালয়েশিয়ার স্বর্ণকাল বলতে তার সময়কেই বলা হয়। ডা. মাহাথিরের নীতি ছিল নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোয়ালিটি ঠিক রেখে উন্নয়ন কাজ শেষ করতে হবে। বিলম্বে পেনাল্টি গুনতে হবে। কোনও অজুহাত দেখিয়ে বাজেট বাড়ানো যাবে না। এসব ক্ষেত্রে কোনও ছাড় নেই।

দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশে কোনও কাজই নির্ধারিত সময়ে হয় না। নানা অজুহাত দেখিয়ে সময় বাড়ানো হয় এবং বর্ধিত সময়ের জন্য বাজেট বেড়ে যায় বহুগুণ। পেনাল্টি! সেটা কে কাকে করবে! সবাই তো লাভের ব্যবসা করে!

যাক সেসব কথা। ‘পর্যটন মহাপরিকল্পনা’ সময়ের দাবি। এর সব কাজ নির্ধারিত সময়ে নির্ধারিত বাজেটের মধ্যে শেষ হবে, সেই আশা বুকে বেঁধে মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন দেখতে চায় দেশের মানুষ। 

লেখক: কথাসাহিত্যিক

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
জিকোর কপালে গভীর ক্ষত, সার্জারির পর হাসপাতালে ভর্তি 
জিকোর কপালে গভীর ক্ষত, সার্জারির পর হাসপাতালে ভর্তি 
লড়াই করেও কিংসের কাছে হারলো আবাহনী
লড়াই করেও কিংসের কাছে হারলো আবাহনী
গণতান্ত্রিক যেকোনও বিষয়কে বিএনপি ফাঁদ মনে করে: ওবায়দুল কাদের
গণতান্ত্রিক যেকোনও বিষয়কে বিএনপি ফাঁদ মনে করে: ওবায়দুল কাদের
২২ বছর পর প্রিমিয়ার লিগে ইপসউইচ
২২ বছর পর প্রিমিয়ার লিগে ইপসউইচ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ