X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গি-যুদ্ধাপরাধ, ইয়াবা এবং ছাত্রলীগ

গোলাম মোর্তোজা
০৩ আগস্ট ২০১৬, ১২:৩৭আপডেট : ০৩ আগস্ট ২০১৬, ১২:৪৭

গোলাম মোর্তোজা ঠিক কী কারণে নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্তের সন্তানরা জঙ্গি হয়ে উঠছে, তা অজানা। প্রচলিত ধারণা, জীবন ও রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থেকে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ চলছে। গবেষণাহীন এসব ব্যাখ্যা, একটির সঙ্গে আরেকটি মিলছে না। আজকের এই লেখার পেছনেও কোনও গবেষণা নেই। পারিপার্শ্বিকতা এবং কাজের অভিজ্ঞতার জায়গা থেকে লিখছি। সাম্প্রতিক জঙ্গিবাদের উত্থানের পেছনের মোটা দাগে কারণ তিনটি।
ক. যুদ্ধাপরাধের বিচার।
খ. মাদক-অস্ত্র ব্যবসা।
গ. শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস।
কেন মনে করছি এই তিনটি কারণের প্রেক্ষিতে জঙ্গিবাদের উত্থান হয়েছে, সংক্ষেপে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করছি।
১. যুদ্ধাপরাধীরা সমাজে আর্থিকভাবে প্রতিষ্ঠিত। তাদের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ক্যাডার বাহিনী আছে। জামায়াতের ক্যাডার বাহিনী ইসলামী ছাত্রশিবির, মানসিকতায় নৃশংস এবং দলের প্রতি দায়বদ্ধ। অস্ত্র-অর্থ তো আছেই।  জ্বালাও-পোড়াও সন্ত্রাস করে যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকানো না যাওয়ায়, দেশে অরাজকতা তৈরির পথ বেছে নিয়েছে। সরাসরি তারা জঙ্গি হয়ে যায়নি। জামায়াতের ক্যাডার বাহিনী, জঙ্গিদের অর্থ-অস্ত্র এবং প্রশিক্ষণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। এসব জঙ্গিদের সঙ্গে আদর্শিক দূরত্ব আপাতত সরিয়ে রেখেছে জামায়াত। তাছাড়া বাংলাভাই বা জেএমবির সঙ্গে সম্পৃক্ততা ক্ষমতায় থাকা সময় থেকেই ছিল।
সরকারের ভুল এবং অতিরিক্ত রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার নীতি, জামায়াতের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়ক হয়েছে। যারা সরকারের খারাপ কাজের সমালোচনা করেছেন, তাদেরকে যুদ্ধাপরাধের সহযোগী এবং বিচার বানচাল ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে দেখানোর পথ বেছে নিয়েছে সরকার। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বললেই তাকে রাজাকার, যুদ্ধাপরাধীদের সহযোগী বলা হয়েছে।

এসব কথা এতবার বলা হয়েছে যে, সাধারণ মানুষ বিরক্ত হয়ে গেছে। সরকারের কথা বিশ্বাস করেনি। এই সুযোগে জামায়াত কৌশলে জঙ্গিদের সঙ্গে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে, তাদের অর্থ-অস্ত্র-প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করেছে। নিম্নবিত্তের সন্তানদের জঙ্গিবাদে দীক্ষিত করেছে হেফাজতে ইসলাম। হেফাজতে ইসলাম যাতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে যোগ না দেয়, জমি-অর্থ দিয়ে পুষে রাখার নীতি নিয়েছে সরকার। আদর্শিক বিরোধ থাকলেও, জামায়াত সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছে হেফাজতের সঙ্গে। যুদ্ধাপরাধের বিচার এবং রাজনৈতিকভাবে চাপে থেকেও, জঙ্গি-সন্ত্রাস উত্থানে ভূমিকা রাখছে জামায়াত।

২. বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থানের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে মাদক এবং অস্ত্র চোরাচালান। মাদক ব্যবসা আলোচনায় আসে, অস্ত্র ব্যবসা আলোচনায় আসে না।

ভারত থেকে আসা ফেনসিডিল অনেক বছর ধরে প্রধান মাদক হিসেবে স্থান করে রেখেছিল। গত কয়েক বছরে স্থান দখল করে নিয়েছে ইয়াবা। এই ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জঙ্গিবাদের একটি ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। ইয়াবা বাংলাদেশে আসা শুরু হয় থাইল্যান্ড এবং মিয়ানমার থেকে। গত কিছু বছর ধরে আসে মূলত মিয়ানমার থেকে। ইয়াবা বহনের সঙ্গে সম্পৃক্ত মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গারা। মিয়ানমার, এবং বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা ইয়াবা চোরাচালানিদের গডফাদার। সহযোগী আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।

বাংলাদেশে পাঁচ থেকে ছয় লাখ রোহিঙ্গা এসেছে মিয়ানমার থেকে। আমাদের সরকারগুলোর সক্ষমতা এত কম যে, তারা তালিকা করতে পেরেছে মাত্র ৩২ হাজারের। অর্থাৎ কাগজে কলমে বাংলাদেশে রোহিঙ্গার সংখ্যা মাত্র ৩২ হাজার। বাস্তবে পাঁচ-ছয় লাখ রোহিঙ্গা টেকনাফ, বান্দরবান, কক্সবাজারে অবস্থান করছে।

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মি এবং আরএসও’র (রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন) সক্রিয় অবস্থান রয়েছে। বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা এসব বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। রোহিঙ্গাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে শক্ত অবস্থান তৈরি করে নিয়েছিল জামায়াত। গত সাত আট বছরে সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। আওয়ামী লীগ একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে রোহিঙ্গাদের ওপর। রোহিঙ্গাদের বসতি স্থাপন, ভোটার, পাসপোর্ট... ব্যবস্থা করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। এই পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে জঙ্গিবাদের একটা সম্পৃক্ততা আছে। উচ্চবিত্তের সন্তানরা জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত, এই তথ্য জানার পর সবাই সেদিকে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন, রোহিঙ্গা বা মাদকের সঙ্গে জঙ্গিবাদের সম্পর্ক কী?

গভীর সম্পর্ক আছে। গত ২৮ জুলাই টেকনাফ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে আরএসও নেতা হাফেজ সালাহ উল ইসলাম, সৌদি নাগরিক আহমদ সালেহ আল আহমেদ গাম্মীকে। তারা টেকনাফে একটি বাড়িতে মিটিং করছিল। মিটিং করা বাড়ির মালিক মাওলানা সৈয়দ করিমকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। সৌদি নাগরিক, আরএসও ও জঙ্গি হাফেজকে নিয়ে ২৬ কোটি টাকার ভাগ বাটোয়ারার  মিটিং করছিল। এই মিটিংয়ে উপস্থিতি বা সংশ্লিষ্টতা ছিল আবদুর রহমান বদি এমপির। প্রথমাবস্থায় অভিযোগ সেভাবেই এসেছিল।

বাংলাদেশের জনপ্রিয় একটি অনলাইন পত্রিকা তাদের একটি রিপোর্টের কিছু অংশ উল্লেখ করছি- ‘অভিযানকারী দল ঘটনাস্থলে গিয়ে বৈঠকে সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি, টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলম, ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা রফিক উদ্দিন ও বাহারছড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা আজিজ উদ্দিন, আরএসও নেতা হাফেজ ছালাউল ইসলাম ও সৌদি নাগরিক আবু সালেহ আল আহমেদ গাম্মীসহ অনেককে দেখতে পান।’

এরপর সেখান থেকে সৌদি নাগরিকসহ ওই চারজনকে আটক করা হয় জানিয়ে বিজিবি কমান্ডার জাহিদ বলেন, ‘এক পর্যায়ে সংসদ সদস্য বদিসহ উপস্থিত জনপ্রতিনিধিরা টাস্কফোর্সের সদস্যদের বাধা দেন এবং টানা-হেঁচড়া করে আটকদের ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালান।’ আরএসও নেতা হাফেজ মিয়ানমার থেকে এসেছে। এখন বাংলাদেশের আইডি কার্ড ও পাসপোর্টধারী ভোটার। বদির ঘনিষ্টজন। ২০১৩ সালেও একবার গ্রেফতার হয়েছিল। ইয়াবা ও অস্ত্র ব্যবসা, জঙ্গি অর্থায়ন ও প্রশিক্ষণের পেছনে তার সক্রিয় ভূমিকা আছে। সৌদি আরবের সঙ্গেও তার ভালো সম্পর্ক। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি পাসপোর্টে মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানোর পেছনের অন্যতম প্রধান ব্যক্তি। ইয়াবা চোরাচালান এবং সৌদি অর্থে উগ্রাবাদী জঙ্গি তৎপরতা, শক্ত অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে টেকনাফ-বান্দরবান-কক্সবাজারের কিছু অঞ্চলে। সকল জঙ্গি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বা নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা ভাবছেন, তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন।

ইয়াবা চোরাচালানের পুরো প্রক্রিয়াটি কারা নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে, তার একাধিক তালিকা করেছিল বিজিবি, কক্সবাজার জেলা পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা।

২০১৩-১৪ সালে করা তালিকা অনুযায়ী প্রধান ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে নাম এসেছিল টেকনাফের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির। তালিকায় নাম ছিল বদির পাঁচ ভাই আব্দুল আমিন, মোহাম্মদ ফয়সল, শফিকুল ইসলাম, মৌলভী মুজিবুর রহমান ও আবদুল শুক্কুরের। টেকনাফের যুবলীগ নেতা, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ আরও অনেকের নাম ছিল তালিকায়।

তালিকা কখনও ইয়াবা চোরাচালানিরা পাত্তা দেয়নি। গণমাধ্যমের কারণে কিছুটা চাপে থেকেছে শুধু। সেই চাপও এক পর্যায়ে কেটে গেছে।

কোনও মন্তব্য না করে, কয়েকটি বক্তব্য উল্লেখ করছি মাত্র। আশা করি এসব বক্তব্যের তাৎপর্য সবাই বুঝতে সক্ষম হবেন।

ক. ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে টেকনাফের সংসদ সদস্য বদির সম্পৃক্ততা নেই। বদিকে সঙ্গে নিয়ে মাদকবিরোধী সপ্তাহের উদ্বোধনও করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

খ. জঙ্গি আরএসও নেতা, সৌদি নাগরিককে গ্রেফতার করার পর সেখানে হাজির হন আবদুর রহমান বদি এমপি। যার নেতৃত্বে গ্রেফতার করা হয়েছে, সেই লে. কর্নেল আবুজাফর আল জাহিদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, সংসদ সদস্য বদি আরএসও নেতা ও সৌদি নাগরিককে ছেড়ে দেওয়ার জন্যে প্রচণ্ড চাপ দিয়েছে। বিজিবি ছাড়েনি।বাক-বিতণ্ডা হয়েছে বিজিবির সঙ্গে।

গ. আরএসও নেতা ও সৌদি নাগরিকের সঙ্গে বৈঠকে বদির কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই।ঐ সংসদ সদস্যকে জড়িয়ে একটি মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে। বলেছেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ।

ঘ. বাহিনীর মাঠপর্যায়ে একজন লে. কর্নেলের কথার চেয়ে, বাহিনীপ্রধান মেজর জেনারেলের কথা নিশ্চয়ই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ!

ঙ. ইয়াবা ব্যবসা, মাদক ব্যবসা, আমরা খুব সহজে কথাগুলো বলি। এই ইয়াবা ব্যবসায় টাকার পরিমাণ কত? ধারণা করতে পারেন? পারেন না, পারার কথাও নয়। গড়ে প্রতিদিন দের থেকে দুই হাজার কোটি টাকার ইয়াবা ব্যবসা হয় বাংলাদেশে! কোথা থেকে কী হয়, এবার নিজে নিজে মিলিয়ে নেন!

আপনার হিসেব মেলানোর জন্য গডফাদার নয়, সাধারণ একজন ইয়াবা ব্যবসায়ীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেই। নুরুল হুদা, সে টেকনাফ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত, জিপচালক। একজন জিপচালকের আর্থিক অবস্থা যেমন হওয়ার কথা, তারও তেমনই ছিল। গত চার পাঁচ বছরে সে যা আয় করেছে, তার সংক্ষিপ্ত হিসেব। টেকনাফে আলিশান একটি দোতলা বাড়ি করেছে। তিন তলা একটি হোটেল করেছে।

কক্সবাজার টেকনাফ রুটে তার ১৯টি বাস চলছে। এগুলো তার দৃশ্যমান সম্পদ। তার দুই ভাইও ইয়াবা ব্যবসা করে। এক ভাই নূর মোহাম্মদ ইয়াবাসহ গ্রেফতার হয়েছিল বিজিবির হাতে ২০১৪ সালে। জামিন পেতে খুব কষ্ট হয়নি।

একজন সাধারণ ইয়াবা ব্যবসায়ীর দৃশ্যমান সম্পদ যদি এই পরিমাণ হয়, একজন গডফাদারের আয়-সম্পদ কত? ঐকিক নিয়মের অঙ্ক করে দেখতে পারেন! অভিযোগ আসে, তালিকায় নাম ওঠে, নাম কেটেও যায়! ইয়াবা চোরাচালান, সৌদি অর্থে হৃষ্টপুষ্ট হয় জঙ্গি -সন্ত্রাস।

৩. শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের অতীত ইতিহাস সবারই জানা।  আওয়ামী ছাত্রলীগ, জাসদ ছাত্রলীগ,  বিএনপির ছাত্রদল,জামায়াতের শিবির - সবারই সন্ত্রাসের সমৃদ্ধ ইতিহাস। শিবির ছাড়া অন্যদের, গৌরবের ইতিহাসও আছে। এসবই অতীত। এখনকার ছাত্র রাজনীতির পুরোটাই সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি-ঠিকাদারি-তদবির কেন্দ্রিক। দৃশ্যমান ব্যতিক্রম ছাত্র ইউনিয়ন। চরম প্রতিকূলতা ও ছাত্র রাজনীতির দুর্দিনেও তারা কিছু ভালো কাজ করছে, কাজ করার চেষ্টা করছে।

গত সাত আট বছরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের সহায়তায়, শিক্ষাঙ্গণে একক দখল প্রতিষ্ঠা করেছে ছাত্রলীগ। অস্ত্র-চাপাতি-রামদা তাদের হাতে শোভনীয় হয়ে উঠেছে। নিজেরাই নিজেদের নেতাকর্মীদের আহত-হত্যা করছে নিয়মিত বিরতিতে। সারা দেশের মানুষ, শিক্ষার্থীরা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার। ছাত্রলীগ রামদা-তলোয়ার-পিস্তল নিয়ে মেতে আছে হত্যাকাণ্ডে। দু’একবার শিবিরের সঙ্গে ছাড়া, এসব করছে তারা নিজেরা নিজেরাই। গত সাত বছরে ৫৫ টি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে ছাত্রলীগ। 

ছাত্রলীগের এই তাণ্ডবের সঙ্গে জঙ্গিবাদের সম্পর্ক কী? ছাত্রলীগের এই সন্ত্রাসীরা কি জঙ্গি হচ্ছে? না, এর সঙ্গে সরাসরি জঙ্গিবাদের সম্পর্ক নেই। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা জঙ্গিও হচ্ছে না। তবে পরোক্ষ একটা সম্পর্ক আছে এবং সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তরুণ শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগ দলে টানতে পারছে না। ছাত্রলীগকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এখন ভয় করে চলে। ছাত্রলীগের ইমেজ তাদের কাছে ভীতিকর। ছাত্রলীগ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় অন্য ছাত্র সংগঠনকে ছাত্র রাজনীতি করতে দিচ্ছে না। যদিও ছাত্রদল, জাসদ ছাত্রলীগের অবস্থাও আওয়ামী ছাত্রলীগের চেয়ে আলাদা নয়। ছাত্র সংসদের নির্বাচন নেই। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ। তরুণ শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার বাইরে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু করার নেই। ইয়াবা সারা দেশের তরুণদের কিভাবে গ্রাস করে নিয়েছে, তা অনেকের জন্যে কল্পনা করাও কঠিন। নেশা তরুণদের টানছে। চোখের সামনে সর্বত্র অন্যায়-অনিয়ম-নীতিহীনতা। শিক্ষক নীতিহীন, ছাত্রনেতা নীতিহীন, রাজনীতিবিদরা নীতিহীন। সবকিছু দেখে তরুণরা বিক্ষুব্ধ, কিছুটা বিভ্রান্ত। তখন সামনে আসছে ধর্ম। 

ধর্মের কথা বলে সুযোগ নিচ্ছে একটি চক্র। ছোট একটা অংশকে টানছে উগ্রবাদী জঙ্গিবাদের পথে। বিশ্ব রাজনীতিও এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে। ঢালাওভাবে কাউকে দায়ী না করেই বলছি, শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস, ছাত্র রাজনীতির অত্যন্ত নেতিবাচক ইমেজ, তরুণ প্রজন্মকে হতাশাগ্রস্ত করেছে। তাদের কাউকে কাউকে চরমপন্থার দিকে টেনে নেওয়া সহজ হয়েছে।

৪. ‘হ্যান করেঙ্গা, ত্যান করেঙ্গা’- আসলে কী করেঙ্গা? বাস্তবে কিছু কী করছি? যা করছি, তাকে কি করা বলে? তাৎক্ষণিক অভিযান দৃশ্যমান, দরকার আছে। দীর্ঘ মেয়াদের চিন্তাপ্রসুত উদ্যোগ বা পরিকল্পনা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। ভাবতে হবে নীতিনির্ধারকদের।  লেখা শেষ করি, ইয়াবা ব্যবসায়ী নূরুল হুদার কথা দিয়ে। এই ইয়াবা ব্যবসায়ীর সঙ্গে ২০১৪ সালে একবার কথা হয়েছিল। এত অর্থ কীভাবে আয় করলেন? ‘আমাকে এত টাকার মালিক বানিয়েছে আল্লাহ’- মিটমিট করে হাসতে হাসতে উত্তর দিয়েছিল নুরুল হুদা।

পুরো বাংলাদেশ তাকিয়ে আছে আল্লাহর দিকে, যদি তিনি রক্ষা করেন। এছাড়া তো আর কেউ নেই, বাংলাদেশকে দেখে রাখার। 

লেখক: সম্পাদক, সাপ্তাহিক

আরও খবর: কল্যাণপুরে নিহত জঙ্গি অর্কসহ তিনজনের আইএস স্টাইলে ধারণ করা অডিওবার্তা

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
আপাতত গরমেই খেলতে হচ্ছে সাবিনা-সানজিদাদের
আপাতত গরমেই খেলতে হচ্ছে সাবিনা-সানজিদাদের
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অ্যাম্বাসেডর যুবরাজ
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অ্যাম্বাসেডর যুবরাজ
অবশেষে মুক্তির বার্তা
অবশেষে মুক্তির বার্তা
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ