X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

একদিনে ৩৬৫ জনকে হত্যার সাক্ষী বড়ইতলা স্মৃতিসৌধ

বিজয় রায় খোকা, কিশোরগঞ্জ
০৮ ডিসেম্বর ২০২০, ০৯:০০আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২০, ১০:২০

একদিনে ৩৬৫ জনকে হত্যার সাক্ষী বড়ইতলা স্মৃতিসৌধ কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বড়ইতলা গ্রামে ১৯৭১ সালের ১৩ অক্টোবর ঘটেছিল এক নৃশংস গণহত্যা। সেদিন পাকিস্তানি বাহিনী স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় হত্যা করে ৩৬৫ জন নিরীহ মানুষকে। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় কয়েকটি গ্রাম। ৪৯ বছর আগের দিনটির কথা মনে হলে আজও শিউরে উঠেন এলাকার প্রবীণরা। কিন্তু এই গণহত্যার বিচার পায়নি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো। জোটেনি রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা কিংবা মর্যাদাও।

বেদনাময় সেই রক্তাক্ত দিনটির কথা মনে করিয়ে দেয়-শহীদদের স্মরণে নির্মিত বড়ইতলা স্মৃতিসৌধ। সেদিন কিশোরগঞ্জের যশোদল ইউনিয়নের বড়ইতলা গ্রামে এ গণহত্যা চালায় পাকিস্তানি বাহিনী। আর এ গণহত্যায় মদত জোগায় এদেশীয় স্থানীয় রাজকাররা। স্বজনহারা শহীদ পরিবারের লোকজন এখনও নীরবে চোখের জল ফেলে।

জানা যায়, পাকসেনাদের একটি ট্রেন ১৩ অক্টোবর সকালে বড়ইতলা গ্রামের কাছে এসে থামে। তারপর তারা ট্রেন থেকে নেমে স্থানীয় রাজাকারদের নিয়ে পাকিস্তানের পক্ষে একটি সমাবেশ করার চেষ্টা চালায়। এ সময় এক পাকসেনা দলছুট হয়ে পড়ায় রাজাকাররা গুজব রটিয়ে দেয় তাকে হত্যা করা হয়েছে। এরপরই হিংস্র পশুর মতো নিরীহ গ্রামবাসীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি বাহিনী। বড়ইতলা, চিকনিরচর ও দামপাড়াসহ আশপাশের এলাকার পাঁচ শতাধিক লোককে ধরে এনে কিশোরগঞ্জ-ভৈরব রেললাইনের পাশে জড়ো করে তারা। এক পর্যায়ে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে, রাইফেলের বাঁট দিয়ে পিটিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় ৩৬৫ জনকে। এ সময় আহত হয় দেড় শতাধিক ব্যক্তি।

একদিনে ৩৬৫ জনকে হত্যার সাক্ষী বড়ইতলা স্মৃতিসৌধ ওই দিন বেঁচে যাওয়া মোমতাজ উদ্দিন ঘটনার বর্ণনায় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পাকসেনারা আমাকে ও আমার ভাইকে রাস্তা থেকে ধরে বড়ইতলা নিয়ে যায়। হত্যাযজ্ঞ শুরু হলে এক পাকসেনা আমাকে বেয়নেট দিয়ে মাথায় আঘাত করলে গুরুতর আহত হই। জ্ঞান হারিয়ে অচেতন অবস্থায় মাটিতে লাশের স্তূপের মাঝে পড়ে যাই। তারা ভেবে নেয় আমি মারা গেছি। তাই আমাকে লাশের স্তূপেই ফেলে রেখে যায়। পুরো একদিন আমি লাশের স্তূপের মধ্যে পড়ে ছিলাম। পরদিন এক মহিলা আমাকে লাশের স্তূপ থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। সেদিন এলাকাটি পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে কারবালা হয়েছিল। এত মানুষকে হত্যা করে উল্লাস করেছিল হানাদাররা।

বর্তমান স্মৃতিসৌধটি যে জমির ওপর দাঁড়িয়ে আছে সেটি দান করেছিলেন বড়ইতলার মো. মর্ত্তুজ আলী। তিনি অভিযোগ করে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ১৩ অক্টোবর ছাড়া স্মৃতিসৌধটির খোঁজ কেউ রাখে না। তবে দীর্ঘদিনের জরাজীর্ণতা কেটেছে। বর্তমান উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে স্মৃতিসৌধটির রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যা এলাকাবাসীর বহুদিনের দাবির প্রতিফলন। আশা করবো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এ স্মৃতিসৌধ ও বড়ইতলা গণহত্যার ইতিহাস তুলে ধরতে অবিলম্বে একটি পাঠাগারও নির্মাণ করা হবে।

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল কাদির মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, স্মৃতিসৌধটির সংস্কার কাজ করা হয়েছে। কিছু সংস্কার এখনও চলছে। ১৯৭১ সালে এ গ্রামে ঘটে যাওয়া নৃশংসতার ইতিহাস সকলের জানা উচিত। ইতিহাসের এমন অনেক ঘটনা নতুন প্রজন্ম জানে না। আর সেই লক্ষ্যে স্মৃতিসৌধে একটি পাঠাগার স্থাপনের পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। আশা করছি দ্রুত এর কাজ সম্পন্ন হবে।

এলাকাবাসী নিহতদের শহীদের মর্যাদা, স্থানীয় রাজকারদের বিচার ও দিনটি সরকারিভাবে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের দাবি জানিয়েছে।

/আরআইজে/আপ-এনএস/এমএমজে/
সম্পর্কিত
নানা আয়োজনে রাজধানীবাসীর বিজয় উদযাপন
বিজয় দিবস উপলক্ষে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা
জাবিতে আলোকচিত্র প্রদর্শনী
সর্বশেষ খবর
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
দুই বলের ম্যাচে জিতলো বৃষ্টি!
পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড প্রথম টি-টোয়েন্টিদুই বলের ম্যাচে জিতলো বৃষ্টি!
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন