দেশের বাজারে চালের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকারের অনুমতি নিয়ে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে প্রায় ১৩শ’ টন চাল। তবে তিন দিন আগে এসব চাল আনা হলেও এখনও ছাড় করা সম্ভব হয়নি দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর থেকে। স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, সরকার আমদানি করা চালের শুল্ক কমিয়ে দিলেও সেই শুল্ক হার আপডেটের জন্য অপেক্ষা ছিল প্রথম দুই দিনে। কাস্টমস সার্ভারে সেটি আপডেট করা হলেও এখন দেখা দিয়েছে নতুন দুই সংকট। এর একটি হচ্ছে সরকারি আদেশের কপিতে স্বাক্ষর নিয়ে জটিলতা। এছাড়াও চালের মূল্য বাড়িয়ে দেখানোর দাবি করেছে শুল্ক কর্মকর্তারা, যা মানতে রাজি নন আমদানিকারকরা। এ কারণে আমদানির চালগুলো স্থলবন্দর থেকে ছাড় করতে পারছেন না আমদানিকারকরা।
হিলি স্থলবন্দর দিয়ে গত শনিবার থেকে চাল আমদানি শুরু হয়েছে। গত তিন দিনে বন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে ১ হাজার ২৬৯ টন চাল। এরমধ্যে আজ সোমবার বন্দর দিয়ে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত এসেছে ৮ ট্রাকে ৩২৯ টন চাল।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালে উৎপাদিত হয়েছে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পরিমাণ ধান। অথচ এ বছরই চালের দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। কোভিড পরিস্থিতিতে সরকারি নজরদারির অভাব, দুষ্টচক্রের মজুতদারি, আড়তদার, চালকল মালিকদের সঙ্গে আঁতাত করে পাইকারদের ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর কারসাজিতে ধুলায় লুটাতে বসেছে চাল উৎপাদনে সরকারের সব অর্জন। মোটা চালের দামও উঠেছে ৫৫ টাকা কেজিতে। ফলে বাধ্য হয়ে ভরা গোলা নিয়েও চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। দেশি কৃষকদের স্বার্থরক্ষায় দেড় বছর আগে চাল আমদানির শুল্ক হার বাড়ানো হলেও তা ৬২.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করে চাল আমদানির নীতিগত সিদ্ধান্ত দেয় সরকার।
জানা গেছে, সরকারের এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত শনিবার দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে প্রথম চালান হিসেবে নওগাঁর জগদীশ চন্দ্র রায় নামে এক আমদানিকারক ৩টি ট্রাকে ১১২ টন চাল আমদানি করেন। রবিবার বন্দর দিয়ে জয়পুরহাটের পাঁচবিবির আরেকটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান হেনা এন্টারপ্রাইজ এনেছে ২০টি ট্রাকে ৮২৮ টন চাল। আর আজ সোমবার বন্দর দিয়ে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত এসেছে এই দুই আমদানিকারকের ৮ ট্রাকে ৩২৯ টন চাল।
চালের আমদানিকারকের মনোনীত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট রাশেদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, চাল আমদানির অনুমতি পাওয়ার পর দুজন আমদানিকারক গত তিন দিনে ভারত থেকে ১ হাজার ২৬৯ টন চাল আমদানি করেছেন। তবে প্রথমে জটিলতা ছিল সরকার চালের আমদানি শুল্ক ৬২.৫ শতাংশ শুল্ক থেকে দুদফা কমিয়ে ১৫ শতাংশ করলেও এতদিনে কাস্টমসের সার্ভারে তা আপডেট করা হয়নি। প্রথম দিন সেজন্য বসে থাকতে হয়। রবিবার বিকেল ৩টার পর তা আপডেট হলে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করি। তবে শুল্ক অফিস থেকে একের পর এক প্যাঁচ কষা হচ্ছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে আদেশের যে কপি দেওয়া হয়েছে সেটি শুল্ক কর্মকর্তারা গ্রহণ না করে বলছেন এই আদেশে নাকি যুগ্ম সচিবের স্বাক্ষর লাগবে। এ কারণে চাল ছাড় করা যাচ্ছে না। তাছাড়াও আমাদের আমদানিকারকদের চালের আমদানি মূল্য টনপ্রতি ৩৫৬ মার্কিন ডলার। কিন্তু শুল্ক কর্মকর্তারা তা ৪১০ থেকে ৪২০ ডলারে শুল্কায়ন করতে চান। কেন বাড়তি শুল্ক দিতে হবে জানতে চাইলে তারা আমদানিকারকদের সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি।
এদিকে, চাল খালাস করতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন ভারত থেকে আসা ট্রাকচালকরা। এদের একজন সুশান্ত কুমার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গত শনিবার আমরা ভারত থেকে চাল নিয়ে হিলি স্থলবন্দরে এসেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদের চাল খালাস হয়নি। সঙ্গে যে টাকা নিয়ে আসছিলাম তাও শেষ হয়ে গেছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ বাইরে বের হতেও দিচ্ছে না। সব মিলিয়ে খুব সমস্যায় পড়ে গেছি আমরা।
হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কাস্টমসের শুল্কায়ন জটিলতার কারণে আমদানিকারকরা বন্দর থেকে চালগুলো খালাস করতে পারছেন না। এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে চাল খালাসের ব্যবস্থা নেবে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনের ডেপুটি কমিশনার সাইদুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, চাল আমদানির ক্ষেত্রে যে এসআরও জারি করা হয়েছে গত ৭ তারিখে, সেখানে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে আইপি নিতে হবে, তা যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা দ্বারা স্বাক্ষরিত হতে হবে। কিন্তু আমদানিকারকরা যে আদেশ নিয়ে আসছেন সেখানে সিনিয়র সহকারী সচিবের স্বাক্ষর রয়েছে। যার কারণে এটি এসআরওতে দেওয়া নির্দেশনা পূরণ করে না। আমরা এ বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তিনি বলেছেন এটি ঠিক করে দেবেন। আর একটি সমস্যা হলো চালের শুল্কায়ন মূল্য। গত তিন মাসে চালের শুল্কায়ন মূল্যের রেফারেন্স রয়েছে ৪১০/৪২০ মার্কিন ডলার। কিন্তু, আমদানিকারকরা একেকজন একেক মূল্যে চাল আমদানি করেছেন। তাই কত ডলার মূল্যে শুল্কায়ন করা হবে এটি একটি বিষয়। খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে ওই কাগজটি আজকেই দিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে। যেহেতু চাল বর্তমানে একটি জাতীয় সংকট, তাই আমি ও আমার স্টাফরা রাত ১২টা পর্যন্ত কাজ করে ছাড় করে দেবো, কোনও সমস্যা নেই। আর দ্বিতীয় থাকলো মূল্য। সেটি নিয়ে আমরা দেখছি কী করা যায়। দুপক্ষ একমত হয়ে একটা পর্যায়ে যাবো এবং যদি তারা আপলোড করে দেয় তাহলে ব্যবসায়ীরা চাইলে আজকেই চাল খালাস নিতে পারবেন।