যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে বুধবার নজিরবিহীন নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে শপথ নিচ্ছেন জো বাইডেন। হোয়াইট হাউজ থেকে প্রস্থান ঘটছে বহুল আলোচিত সমালোচিত বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। ক্যাপিটল হিলে সমর্থকদের তাণ্ডবের ঘটনায় টু্ইটারে নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকে বেশ চুপচাপ রয়েছেন তিনি। হোয়াইট হাউজে তার শেষ মুহূর্তের চূড়ান্ত পরিকল্পনার ব্যাপারেও খুব সামান্যই জানা গেছে। তবে যেদিকে সবার নজর সেটা হলো, বিদায় নেওয়ার আগে শেষ মুহূর্তে প্রেসিডেন্টের বিশেষ ক্ষমতাবলে তিনি কাদের ক্ষমা করে যাবেন?
হোয়াইট হাউসের প্রেস দফতর থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দীর্ঘ সময় নিয়ে কাজ করবেন। তিনি বহুজনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলবেন এবং অনেক বৈঠকে যোগ দেবেন। সাধারণত নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানের আগে হোয়াইট হাউজে বিদায়ী ও নতুন দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যে যে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের প্রথা রয়েছে সেটি হচ্ছে না। কারণ জো বাইডেনকে ট্রাম্প কোনও আমন্ত্রণ জানাননি।
ট্রাম্প ক্ষমতা হস্তান্তরে রাজি হলেও নির্বাচনের ফলাফল তিনি এখনও মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তবে লোকজনের কৌতুহল, শেষ মুহূর্তে প্রেসিডেন্টের বিশেষ ক্ষমতা বলে তিনি কাদের ক্ষমা করে যাবেন। মার্কিন মিডিয়ায় জল্পনা চলছে, এই তালিকায় রয়েছে প্রায় ১০০ জনের নাম যারা ক্ষমা পেতে পারেন। নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে এদের মধ্যে কিছু অপরাধীর নাম রয়েছে, যাদের ক্ষমা প্রার্থনার জন্য বিভিন্ন আইনজীবীরা তদবির চালাচ্ছিলেন। বিতর্কিত কিছু নামও রয়েছে তালিকায় যেমন অ্যাডওয়ার্ড স্নোডেন, জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ এবং ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টা স্টিভ ব্যানন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেকে ক্ষমা করবেন কিনা তা নিয়েও রয়েছে বিশাল জল্পনা। এ রকম কোনও পরিকল্পনা তার আছে কিনা বা সেটা আইনগতভাবে সম্ভব কিনা তাও স্পষ্ট নয়। তার দুই ছেলে ডোনাল্ড জুনিয়র এবং এরিক ও নিজের ব্যক্তিগত অ্যাটর্নি রুডি জুলিয়ানিকেও তিনি ক্ষমা করতে পারেন এমন কানাঘুষা শোনা গেছে।
ট্রাম্প তার শাসনকালে বিতর্কিত কিছু ক্ষমা প্রদর্শন করেছেন যারা মূলত তার সাবেক রাজনৈতিক মিত্র। সব মিলিয়ে তিনি এ পর্যন্ত ৭০ জনকে ক্ষমা প্রদর্শন করেছেন, যার বেশিরভাগই তিনি করেছেন গত মাসে। তবে তার পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্টরা যত ব্যক্তিকে ক্ষমা প্রদর্শন করে গেছেন, সে তুলনায় ট্রাম্পের ক্ষমা প্রদর্শনের সংখ্যা কম।
অতীতেও অন্য প্রেসিডেন্টদের ক্ষমা প্রদর্শনের ঘটনা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিল ক্লিনটন তার ক্ষমতার শেষ দিনে বেশ কিছু ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দিয়ে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন।
ট্রাম্পের ডিক্রি
সোমবার ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প আমেরিকানদের উদ্দেশ্য করে একটি বিদায়ী ভিডিও দিয়েছেন, যাতে তিনি জনগণকে ‘দৃষ্টান্ত অনুসরণ’ করার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রথা অনুযায়ী বিদায়ী ফার্স্ট লেডির নতুন ফার্স্ট লেডিকে পাশে নিয়ে হোয়াইট হাউজের ব্যক্তিগত অংশে পদচারণার যে সংস্কৃতি রয়েছে, মেলানিয়া ট্রাম্প সেই প্রথা অগ্রাহ্য করবেন বলে জানা গেছে।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের মেয়াদের ওপর সবশেষ একটি জরিপ প্রকাশ করেছে সোমবার কুইন্নিপিয়াক বিশ্ববিদ্যালয়। এতে দেখা যাচ্ছে ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার ব্যাপারে তাকে ভোট দিয়েছে ৩৪ শতাংশ মানুষ। এই জরিপে আরও দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারীদের ৫৯ শতাংশ মনে করছেন, ট্রাম্পকে আবার প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেওয়া ঠিক হবে না।
ট্রাম্প তার ক্ষমতার শেষ সময়ে এসে সোমবার করোনাভাইরাসের কারণে ব্রাজিল ও ইউরোপ থেকে ভ্রমণের ওপর চাপানো বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। তিনি এই ডিক্রি জারি করার পর জো বাইডেন তা সঙ্গে সঙ্গেই প্রত্যাখান করেছেন।
বাইডেনের মুখপাত্র জেন সাকি এই ঘোষণা দেওয়ার কয়েক মিনিট পরেই টুইট করে জানান, এই বিধিনিষেধ শিথিল করার সময় এখনও আসেনি। নতুন কয়েক ধরনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ায় এই বিধিনিষেধ বরং আরও জোরদার করা হবে।
বিমান পরিবহন খাতের লোকজন ভ্রমণের ওপর এই বিধিনিষেধ ওঠানোর জন্য বেশ কিছুদিন ধরে জোর দেন-দরবার করছিল।
যুক্তরাষ্ট্র গত মার্চ মাসে ইউরোপ থেকে আমেরিকায় ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ব্রাজিল থেকে ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় মে মাসে। গতকাল সোমবার হোয়াইট হাউজ এক ডিক্রি জারি করে জানায় বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণ করার ছয় দিন পর অর্থাৎ ২৬ জানুয়ারি এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।
নজিরবিহীন নিরাপত্তা
নতুন প্রেসিডেন্ট হিসাবে জো বাইডেনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানকে ঘিরে ওয়াশিংটন ডিসিতে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ক্যাপিটল হিলে ৬ জানুয়ারির তাণ্ডবের পর বুধবারের অনুষ্ঠানের জন্য প্রায় ২৫ হাজার ন্যাশানাল গার্ড সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তাদের প্রত্যেকের অতীত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খুঁটিয়ে দেখছে এফবিআই।
ক্যাপিটলে হামলার সাফল্যে উদ্দীপ্ত হয়ে দক্ষিণপন্থীরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ বিক্ষোভ করতে পারে এমন আশঙ্কা সম্পর্কে হুঁশিয়ারি দিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআিই। হোয়াইট হাউজের শপথ অনুষ্ঠানে প্রথামাফিক হাজার হাজার মানুষের যোগদান এ বছর হচ্ছে না করোনা মহামারিতে বিধিনিষেধের কারণে।
ট্রাম্প আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি এই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন না, যা দেড়শ বছরের ক্ষমতা হস্তান্তরের ইতিহাসে এই প্রথম ঘটতে চলেছে। ন্যাশানাল গার্ড রক্ষীদের ভেতর থেকে হামলার আশঙ্কা করছে এফবিআই। তাই রক্ষীদের প্রত্যেকের সম্পর্কে যাচাই বাছাই প্রক্রিয়ায় কড়াকড়ি করা হয়েছে। সোমবার ক্যাপিটলে একটা নিরাপত্তা হুঁশিয়ারির পর কিছুক্ষণের জন্য ক্যাপিটল বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিছু প্রত্যক্ষদর্শী কাছে একটি স্থান থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখার খবর দেওয়ার পর চরম সতর্কতা হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তবে ওই আগুন ক্যাপিটল থেকে বেশ কিছুটা দূরে ছিল এবং তা জনগণের জন্য হুমকির কারণ ছিল না বলে জানা গেছে।
অনুষ্ঠানের আয়োজন
কোভিডে মারা যাওয়া দুই লাখ মানুষের স্মরণে ন্যাশনাল মলে আলোকিত দুই লাখ পতাকা তোলা হয়েছে। অনুষ্ঠানে শপথ বাক্য পাঠ, কবিতা পাঠ এবং শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব ছাড়াও থাকছে লেডি গাগা-র জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনা। একটি সঙ্গীতানুষ্ঠান করবেন জেনিফার লোপেজ। টম হ্যাংক্স বুধবার টেলিভিশনে এই অনুষ্ঠান লাইভ সম্প্রচার করবেন এবং বহু নামী তারকা এতে অংশ নেবেন। স্থানীয় সময় বুধবার খুব সকালে এয়ার ফোর্সের বিমানে ফ্লোরিডার উদ্দেশে যাত্রা করবেন ট্রাম্প। সূত্র: বিবিসি।