যথাযোগ্য মর্যাদায় পলিত হয়েছে পুলিশ মেমোরিয়াল ডে। দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিধান, আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও জনগণের জানমাল রক্ষাকালে কর্তব্যরত অবস্থায় আত্মত্যাগকারী পুলিশ সদস্যদের বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করে দিনটি সারাদেশে পালন করা হয়। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ:
রাজশাহী প্রতিনিধি জানান, রাজশাহীতে যথাযোগ্য মর্যাদায় পলিত হয়েছে পুলিশ মেমোরিয়াল ডে। দেশের অভ্যন্তরীন নিরাপত্তা বিধান, আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও জনগণের জানমাল রক্ষাকালে কর্তব্যরত অবস্থায় আত্মত্যাগকারী পুলিশ সদস্যদের বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ ও রাজশাহী রেঞ্জ পুলিশ।
এ দিবস উপলক্ষে সোমবার (০১ মার্চ) সকাল ১০টায় আরএমপি পুলিশ লাইনসের স্মৃতিস্তম্ভে পুস্পস্তবক অর্পণ ও এক মিনিট নীরবতা পালনসহ নিহত পুলিশ সদস্যদের রুহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া করা হয়। এরপর আরএমপি’র পুলিশ লাইন্স পিওএম কনফারেন্স রুমে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক। বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি জয়দেব কুমার ভদ্র। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন।
আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন র্যাব-৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আব্দুল মোত্তাকিম। আরএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন) সুজায়েত ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন) মজিদ আলী সহ রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ ও রাজশাহী রেঞ্জের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
পুলিশ মেমোরিয়াল ডে-২০২১-এ আইন শৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ দমন ও জননিরাপত্তায় কর্তব্যরত অবস্থায় রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ ও রাজশাহী রেঞ্জের নিহত ৩১ পুলিশ সদস্যদের পরিবার সদস্যদের সম্মাননা উপহার প্রদান করা হয় এবং সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত পুলিশ সদস্য কামাল পারভেজের পরিবারের হাতে সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের দেওয়া এক লাখ টাকা তুলে দেন পুলিশ কমিশনার।
পাবনা প্রতিনিধি জানান, পাবনা অঞ্চলে পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত বিভিন্ন সময়ে জননিরাপত্তা ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় জীবন উৎসর্গকারী সকল পুলিশ সদস্যদের স্মরণে পুলিশ মেমোরিয়ার ডে পালন করেছে জেলা পুলিশ।
সোমবার (০১ মার্চ) দুপুরে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয় চত্বরে স্থাপিত শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে প্রয়াত শহীদ পুলিশ সদস্যদের স্মরণে সম্মান প্রদর্শন করে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও এক মিনিট নীরবতা পালন করেন পুলিশ সুপারসহ শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
পরে জেলা শহরে কর্মরত সব পুলিশ সদস্য ও প্রয়াত শহীদ পুলিশ সদস্যদের পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়ে একটি স্মরণ পদযাত্রা বের করা হয়। স্মরণ পদযাত্রাটি পাবনা পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে বের হয়ে পুলিশ লাইনস্ অডিটরিয়ামে গিয়ে শেষ হয়।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে পুলিশ লাইনস অডিটরিয়ামে আমন্ত্রিত অতিথিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনাসভা ও শহীদ পুলিশ সদস্যদের পরিবারের সদস্যদের সম্বর্ধনা।
আলোচনায় সভায় পাবনা জেলা পুলিম সুপার মোহিবুল ইসলম খানের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল রহিম লাল, পিবিআই’র পুলিশ সুপার ফজলে এলাহী, জেলা গোয়েন্দা শাখার পুলিশ সুপার খান মোহম্মদ রিজয়ান, পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামিমা আক্তার, মাসুদ আলম।
এছাড়া ১৯৭১ সালে পাবনায় পাক হানাদার বাহিনীর সাখে সম্মুখ যুদ্ধে ২১ জন এবং বিভিন্ন সময়ে দায়িত্ব পালন অবস্থা ও করোনাকালীন সময়ে আরো ২৩ জন পুলিশ সদস্য শহীদ হন। এই ৪৪ জন পুলিশ সদস্যদের প্রতি সম্মান জানিয়ে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের দেয়ালে শহীদদের ছবি দিয়ে পুলিশ মেমোরিয়াল ওয়াল করা হয়েছে।
নাটোর প্রতিনিধি জানান,‘কর্তব্যের তরে দিয়ে গেলে যারা আত্ম বলিদান, প্রতিক্ষণে স্মরণে রাখিব ধরি তোমাদের সম্মান’- প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে নাটোরে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে পুলিশ মেমোরিয়াল ডে।
কর্মসূচির মধ্যে ছিল র্যালি, জীবন উৎসর্গকারীদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ, এক মিনিট নীরবতা পালন, রাষ্ট্রীয় সালাম প্রদান, আলোচনা সভা ও শহীদ পুলিশ পরিবারদের উপহার প্রদান।
রবিবার দিনব্যাপী এসব কর্মসূচির আয়োজন করে জেলা পুলিশ।
রবিবার সকাল সোয়া ৯ টায় শহরের বড়হরিশপুর বাইপাস হতে পুলিশ লাইনস্ পর্যন্ত র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। র্যালি শেষে পুলিশ লাইন্সে অস্থায়ীভাবে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভে জীবন উৎসর্গকারীদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ১ মিনিট নীরবতা পালন এবং শহীদদের রাষ্ট্রীয় সালাম প্রদান করা হয়। এরপর পুলিশ লাইনস্ ড্রিল শেডে পুলিশ মেমোরিয়াল ডে- উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহার সভাপতিত্বে ওই আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক শাহরিয়াজ , জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাজেদুর রহমান খান, পিবিআই পুলিশ সুপার শরিফ উদ্দীন ও বীর প্রতীক সোলায়মান আলী।
আলোচনা শেষে কর্তব্যরত অবস্থায় প্রাণ হারানো ১৫ জন পুলিশ পরিবারের সদস্যদের হাতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে উপহার সামগ্রী প্রদান করা হয়।
ফরিদপুর সংবাদদাতা জানান, ফরিদপুরে পুলিশ মেমোরিয়াল ডে’২০২১ যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে পুষ্প স্তবক অর্পণ ও নীরবতা পালন শেষে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়। পরে দুপুরে ফরিদপুর পুলিশ লাইনসে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, পুলিশ সদস্যরা অন্যের নিরাপত্তা ও সমস্যা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে তাদের নিরাপত্তা ও সমস্যার কথাই ভুলে যান। কিন্তু তাদের অকাল মৃত্যুর পরে পরিবারের লোকেরাই কেবল বোঝেন তারা কী হারিয়েছেন। নানাবিধ সমস্যা নিয়ে তাদের জীবন অতিবাহিত করতে হয়। বক্তারা এসব পরিবারের দিকে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন। এসময় ফরিদপুরে বিভিন্ন সময়ে দায়িত্ব পালনকালে নিহত জেলার ৩৮ জন পুলিশ সদস্যের পরিবারসহ পুলিশ কর্মকর্তা ও অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামানের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও তদন্ত) জামাল পাশা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাইওয়ে মাদারীপুর অঞ্চল) মো. সিরাজুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী সার্কেল) আনিসুজ্জামান, ওসি (ডিবি) সুনীল কর্মকার, ইন্সপেক্টর (তদন্ত) সুব্রত গোলদার, নিহত এসআই মনিরের পিতা আব্দুস সালাম মোল্যা, পুলিশ সদস্য গোলাম আম্বিয়ার স্ত্রী সাবিহা আক্তার, নিহত পুলিশ সদস্য আজাদ মিয়ার স্ত্রী শিউলি বেগম ও কনস্টেবল মো. আসলাম।
বক্তাগণ কর্মরত পুলিশ সদস্যদের শারীরিক মেডিকেল চেকআপের ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়াও নিহত পুলিশ সদস্যদের জন্য কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন, নিহত সব পুলিশ পরিবারকে রেশনিং সুবিধা প্রদান ও তাদের ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা ও কর্মসংস্থানে কোঠা বাড়ানোর দাবি জানান।
এসব দাবি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানানোর জন্য আইজিপির কাছে সুপারিশ পাঠানো হবে বলে সভাপতির বক্তব্যে পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান জানান।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. তরিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন রঞ্জন সরকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভাঙ্গা সার্কেল) ফাহমিদা কাদের চৌধুরী সহ বিভিন্ন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
পরে গত বছর কর্তব্যকালে নিহত ফরিদপুরের সাতজন পুলিশ সদস্যের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা ও উপহার সামগ্রীসহ অন্য পরিবারগুলোর হাতে বিভিন্ন উপহার সামগ্রী তুলে দেন পুলিশ সুপার।