ইরাকে সংখ্যালঘু খ্রিস্টানদের নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে পোপ ফ্রান্সিস শিয়া ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ধর্মীয় নেতা গ্র্যান্ড আয়াতোল্লাহ আলি আল-সিসতানির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। শনিবার পোপের ঐতিহাসিক ইরাক সফরে নাজাফ শহরে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এখবর জানিয়েছে।
করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর এটিই পোপের প্রথম বিদেশ সফর। এছাড়া এই প্রথম কোনও পোপ ইরাক সফরে গেলেন। কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকি এবং নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ বিবেচনায় নিয়ে এটিকেই এ যাবত পোপের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সফর বলে মনে করা হচ্ছে। পবিত্র নাজাফ শহরে আয়াতোল্লাহ তার বাসভবনে পোপের সঙ্গে বৈঠক করেন।
আয়াতোল্লাহ আল-সিসতানির সাক্ষাৎ পাওয়া খুবই বিরল। তিনি মানুষজনের সঙ্গে সচরাচর দেখা করেন না। কিন্তু পোপের সঙ্গে তিনি প্রায় ৫০ মিনিট ধরে কথা বলেছেন। এ সময় দুজনের কেউই মুখে মাস্ক পরেননি।
গ্র্যান্ড আয়াতোল্লাহ আল-সিসতানি বলেছেন, ইরাকের আর সব জনগণের মতো খ্রিস্টান নাগরিকদেরও শান্তি ও নিরাপত্তার মধ্যে এবং তাদের পূর্ণ সাংবিধানিক অধিকার নিয়ে জীবন কাটাতে না পারার বিষয়টাতে তিনি উদ্বিগ্ন।
ইরাকের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে সহিংস একটা সময়ে দেশটির ‘সবচেয়ে দুর্বল এবং সবচেয়ে নির্যাতিত সম্প্রদায়ের মানুষের পক্ষ নিয়ে কথা বলার’ জন্য পোপ ফ্রান্সিস আয়াতোল্লাহকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বলে মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)-এর খবরে বলা হয়েছে।
পোপ বলেছেন, শিয়া নেতার শান্তির বার্তা ‘ইরাকের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্যের গুরুত্ব এবং সব মানুষের জীবনই যে পবিত্র ও মূল্যবান’ তা নিশ্চিত করেছে।
লাখ লাখ শিয়া মুসলিমদের ধর্মীয় নেতা আল-সিসতানির কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, দুই ধর্মীয় নেতা তাদের আলোচনায় শান্তির বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছেন।
বৈঠকের আগে ক্যাথলিক গির্জার ৮৪ বছর বয়স্ক ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস সাংবাদিকদের বলেন, তিনি অনুভব করেছেন এই ‘প্রতীকী সফর’ করা তার ‘একটি কর্তব্য’।
চারদিনের ইরাক সফরে বেশ কিছু স্থান পরিদর্শন করবেন পোপ। তিনি প্রাচীন উর শহর পরিদর্শন করবেন। যে শহর ইসলাম, খ্রিস্টান ও ইহুদি এই তিন ধর্মের জন্যই পবিত্র স্থান। এখানে নবী ইব্রাহিম (আ.) জন্মেছিলেন বলে ধারণা করা হয়।
পোপের এই সফরে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রায় ১০ হাজার ইরাকি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যকে মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া করোনাভাইরাস ছড়ানো ঠেকাতে ২৪ ঘণ্টার কারফিউ জারি করা হয়েছে।
কয়েকটি শিয়া কট্টরপন্থী দল পোপের এই সফরের বিরোধিতা করেছে। তারা বলছে, পোপের এই সফর দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পশ্চিমের নাক গলানোর সামিল।
নিরাপত্তা উদ্বেগ এবং কোভিড-১৯ সংক্রমণ দ্রুত বাড়ার কারণে ইরাকে পোপের কর্মসূচি এবং জনসাধারণের সঙ্গে তার সাক্ষাতের সুযোগ খুবই সীমিত রাখা হয়েছে।
পোপ ফ্রান্সিসকে ফাইজার বায়োনটেক ভ্যাক্সিনের দুটি ডোজ এবং তার সফরসঙ্গীদেরও টিকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পোপকে দেখতে প্রচুর জনসমাগম হলে সেখান থেকে করোনাভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়াতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
শুক্রবার পোপ ইরাকে পৌঁছানোর পর তাকে কিছুটা পা টেনে টেনে হাঁটতে দেখা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, তার সায়াটিকার সমস্যা হয়ত আবার বেড়েছে।
রবিবার পোপ ফ্রান্সিস মসুল যাবেন। সেখানে চার্চ স্কোয়ারে তিনি ইসলামিক স্টেট (আইএস)- এর সঙ্গে যুদ্ধে নিহতদের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করবেন। আইএসের সঙ্গে ইরাকের যুদ্ধে দেশটিতে হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন।