X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

‘মস্তক তুলিব অনন্ত আকাশে’

হায়দার মোহাম্মদ জিতু
১৪ মার্চ ২০২১, ১৮:৫৪আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২১, ১৯:০০

হায়দার মোহাম্মদ জিতু
আমার ভেতরও বাহিরে অন্তরে অন্তরে আছো তুমি হৃদয় জুড়ে, রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ’র এই কবিতা সুরে-গানে নান্দনিকতা ছড়িয়েছে। যা দেশের সীমানা পেরিয়ে সর্বময় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। শুধু তা-ই নয়, সংগীতের নানা নিরীক্ষণধর্মী সুরেও আজ এটি কণ্ঠে কণ্ঠে কল্লোলিত ও অনুরণিত। দেশের এই কবি ও গীতিকারের গানের মতোই আজ বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন-অর্জন। যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বাঙালির শান্ত সাহস শেখ হাসিনার একক নেতৃত্বগুণে আজ বৈশ্বিকভাবে অনুকরণীয় এবং প্রেরণার।

ক’দিন বাদে বাংলাদেশ তাঁর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে যাচ্ছে। তার কিছু দিন আগে আগেই বিশ্ব সংস্থা জাতিসংঘ কর্তৃক স্বল্পোন্নত আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছে। এই অর্জন সম্মান এবং গৌরবের। তথ্যমতে, এখানে লবিং তদবির কিংবা ‘ভাসুরের কানে কান পড়ায়’ মতো বিষয় খাটে না। এই সম্মান অর্জনের জন্যে কিছু যোগ্যতা বা শর্ত পূরণ করতে হয়। যেমন মাথাপিছু আয়, জিডিপি, দারিদ্র্যের হার প্রভৃতি। যা শেখ হাসিনার রাষ্ট্র পরিচালনা এবং নেতৃত্বে অর্জিত হয়েছে।

তবে এসবের মাঝেও এই দেশ যে মানবিক ও বিবেকবোধ সম্পন্ন হয়ে উঠছে সেটাই এখন মূল আলোচ্য। সম্প্রতি দেশের টেলিভিশন চ্যানেল বৈশাখী’তে একজন রুপান্তরিত নারী বা ট্র্যান্সজেন্ডার নারীকে সংবাদ পাঠের সুযোগ দিয়েছে। যা বৈশ্বিকভাবে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। আরও ভিন্নভাবে বললে, সূর্যসেন, প্রীতিলতা, বেগম রোকেয়া প্রমুখের দেশ যে সামগ্রিকভাবে সকলকে নিয়েই এগোবার পথে, এটা তারই ইঙ্গিত।

তবে এই সংবাদ পাঠিকা তাসনুভার প্রসঙ্গ সাপেক্ষে আরেকটি তথ্য সকলের কাছে পৌঁছানো উচিত। বায়োলজিক্যাল এই রূপান্তরিত জনিত চিকিৎসার সুযোগ আছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে। যা যে কারোর পরিবারই স্বল্পমূল্য গ্রহণ করতে পারেন।

আর এই যে সকলকে নিয়ে এগিয়ে চলা এবং নারীকে এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সম্পৃক্ত করা, সেটা বাঙালির জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন-চিন্তার ফলাফল। এক্ষেত্রে ছোট্ট একখানা উদাহরণ প্রাসঙ্গিক। বঙ্গবন্ধু তাঁর চীন সফরে দেখেছিলেন নারী-পুরুষ যুগলবন্দি হাতে সংসার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের সকল কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করছেন। যার কারণে তারা দ্রুত উন্নতির দিকে উঠে আসছিল।

সেই চিন্তাকে আজ বাঙালি নারীরা দেবী দুর্গার মতো দশ হাতে কাজ করে প্রমাণ করে চলেছেন। যার প্রমাণ আজকের বাংলাদেশ। আরও ভিন্নভাবে বললে, দেশের উন্নয়ন বাস্তবতা এবং স্বাধীনতা অর্জনের ক্ষেত্রে বাঙালি নারীরা লড়াই চালিয়েছে সমানে সমান। ৭১’এর রণাঙ্গনে বাঙালি নারী সম্মুখ সমরে থেকে শুরু করে মুক্তিযোদ্ধাদের রসদ-চিকিৎসাসহ সব রকমের সহযোগিতা এবং লড়াই করেছেন। যার মাধ্যমে বিশ্ব দেখেছে বাঙালি নারী শুধু লাস্যতায় নয়, ন্যায্য হিস্যা আদায়ের তাণ্ডবেও অতুলনীয়।

যদিও এই কাঁধে কাঁধে রেখে এগিয়ে চলার পথ মোটেও মসৃণ ছিল না। কারণ, ১৯৪৭-এ দেশ বিভাগের পর পাকিস্তানি শাসনামলে জুডিশিয়াল সার্ভিসে নারীদের অংশগ্রহণ আইন করে বন্ধ করা ছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রাথমিকভাবে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেন। যা পরে শেখ হাসিনা সরকার ১৯৯৬ সালে নারী উন্নয়ন নীতিমালার মাধ্যমে আরও পোক্ত করেন।

সন্তান প্রসবের পর মায়েদের শরীর গঠনে যেন তাড়াহুড়া না হয় সেজন্যে মাতৃত্বকালীন ছুটি তিন মাস থেকে বৃদ্ধি করে প্রথমে চার মাস এবং পরে ছয় মাস করা হয়। শুধু তা-ই নয়, সন্তানের পরিচয়ে পিতার সঙ্গে মায়ের নাম যুক্ত করে নারীদের মা এবং অভিভাবক হিসেবে মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেন। উচ্চ আদালতে থেকে শুরু করে পুলিশ, পাইলট সব স্থানে নারীকে সুযোগ নয়, যোগ্যতা প্রমাণের পথ নির্মাণ করে দেন। যাতে নারী করুণায় নয় বরং বাঁচেন বীরদর্পে ও সগৌরবে।

ইংল্যান্ডের কবি, নোবেল জয়ী ব্রিটিশ সাহিত্যিক উইলিয়াম গোল্ডিং বলেন, ‘মেয়েরা বোকা দেখেই তাঁরা পুরুষের সমান অধিকার দাবি করে। কারণ, মেয়েরা জানে না তাঁরা পুরুষের চেয়ে অনেক বেশি উচ্চতর! মেয়েদের আপনি যা-ই দিবেন সে সেটাকে আরও উচ্চতর কিছু বানিয়ে দিবে। যেমন, একটা ঘর দিবেন সেটাকে বাড়ি বানিয়ে ফেলবে, বাজার করে দিবেন, রান্না করে খাবার বানিয়ে ফেলবে। আবার আপনি তাকে হাসি দিবেন সে আপনাকে হৃদয় দিয়ে দিবে। আপনি যাই দিবেন সে তাকে কয়েকগুণ মহৎ করে ফেরত দেবে।

এমন উল্লেখ্য এক মানুষ উদাহরণ প্রদীপ্ত প্রত্যয়ের শেখ হাসিনা। বাংলার মানুষ তাঁকে নির্বাচিত ও ভালোবেসে ক্ষমতায় এনেছেন ক্ষুধা, দারিদ্র্য এবং দুর্নীতি জয়ের তাগিদে। আর তিনিও তাঁদের দিয়েছেন দু’হাত ভরে। দুর্নীতির চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করে দেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যের তলানি থেকে উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার বিস্ময়কর বন্দরে নিয়ে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে এই তো বিশ্ব বাঙালির পরম পাওয়া।

তবে এখন এই তরুণ প্রজন্মের দায়িত্ব রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ’র মতো আর যেন কাউকে লিখতে না হয়, ‘জাতির পতাকা খামচে ধরেছে আজ সেই পুরনো শকুন’।

লেখক: প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ।

[email protected]

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বিশ্বকাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচের ভেন্যু চূড়ান্ত
বিশ্বকাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচের ভেন্যু চূড়ান্ত
মিয়ানমার থেকে ফিরলেন ১৭৩ বাংলাদেশি
মিয়ানমার থেকে ফিরলেন ১৭৩ বাংলাদেশি
দক্ষ বিচার বিভাগ গঠনে বিশ্বমানের জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমি প্রয়োজন: আইনমন্ত্রী
দক্ষ বিচার বিভাগ গঠনে বিশ্বমানের জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমি প্রয়োজন: আইনমন্ত্রী
‘জংলি’ মিশনে সিয়ামের সঙ্গী বুবলী
‘জংলি’ মিশনে সিয়ামের সঙ্গী বুবলী
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ