X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রেফতারের ১০ দিনের মাথায় জামিনে মুক্ত করোনা কিট জালিয়াতি চক্রের সদস্যরা

আমানুর রহমান রনি
০৭ মে ২০২১, ০০:২১আপডেট : ০৭ মে ২০২১, ০০:২১

র‌্যাবের গ্রেফতারের ১০ দিনের মাথায় অনুমোদনহীন করোনা কিটসহ বিভিন্ন মেয়াদোত্তীর্ণ রি-এজেন্ট সরবরাহকারী জালিয়াতি চক্রের সবাই নিম্ন আদালত থেকে জামিন পেয়ে মুক্ত হয়েছেন। বিশেষ ক্ষমতা আইনে ও জনস্বাস্থ্য বিরোধী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত থাকার পরও এত দ্রুত ভার্চুয়াল কোর্ট থেকে তাদের জামিনে অবাক হয়েছেন আইনজীবীরাও।  র‌্যাবের দায়ের করা এই মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। তবে সব আসামি জামিনে মুক্ত হওয়ার পর মামলাটির তদন্তভার নিতে চেয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে র‌্যাব।

গত ১৬ এপ্রিল অনুমোদনহীন মেডিক্যাল ডিভাইস আমদানি ও মেয়াদোত্তীর্ণ মেডিক্যাল টেস্টিং কিট, রি-এজেন্ট জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকায় রাজধানীর তিনটি প্রতিষ্ঠানের ৯ জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-২।

গ্রেফতারকৃতরা হলো- বায়োল্যাব ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী শামীম মোল্লা (৪০), ম্যানেজার শহিদুল আলম (৪২), এক্সন টেকনোলজি অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের এমডি মাহমুদুল হাসান (৪০), হাইটেক হেলথকেয়ার লিমিটেডের এমডি এস এম মোস্তফা কামাল (৪৮), বায়োল্যাব ইন্টারন্যাশনানের ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল্লাহ আল বাকী সাব্বির (২৪), জিয়াউর রহমান (৩৫), মো. সুমন (৩৫), জাহিদুল আমিন পুলক (২৭) ও সোহেল রানা (২৮)। তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অনুমোদনহীন করোনা টেস্ট কিট, রি-এজেন্ট উদ্ধার করা হয়।

বিপুল পরিমাণ অনুমোদনহীন করোনা টেস্ট কিট, রি-এজেন্ট উদ্ধার করা হয়

একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে রাজধানীর বনানী, হাজারীবাগ ও বসিলা থেকে তাদের গ্রেফতার করে র‌্যাব। এসময় তাদের সঙ্গে ওষুধ প্রশাসনের কর্মকর্তারাও ছিলেন। এই ঘটনায় গত ১৭ এপ্রিল র‌্যাব বাদী হয়ে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করে।

মামলার এজাহারে র‌্যাব উল্লেখ করে, চক্রটি অননুমোদিত মেডিক্যাল ডিভাইস আমদানি করে ভেজাল ও মেয়াদ উত্তীর্ণ মেডিক্যাল টেস্টিং কিট এবং রি-এজেন্টে জালিয়াতির মাধ্যমে নতুন করে মেয়াদ বসিয়ে বিক্রয় ও বাজারজাত করে আসছিল। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে মহামারির প্রাদুর্ভাবকে পুঁজি করে অবৈধ লাভবান হওয়ার জন্য বেআইনিভাবে বিভিন্ন নামে কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে। তারা এসব প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে যথাযথ অনুমতি ও কাগজপত্র ব্যতীত ভেজাল এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী খাঁটি হিসাবে বিক্রয় ও বিক্রয়ের জন্য বিতরণ এবং বাজারজাত করছিল।

এই অপরাধ ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫-গ(গ)(ঘ)(ঙ) ধারার শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলেও র‌্যাব দাবি করে।

মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পান মোহাম্মদপুর থানার এসআই দেবাশীষ। তিনি আসামিদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আদালত তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এসআই দেবাশীষ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি আসামিদের আদালতে হাজির করে দশ দিনের রিমান্ড চাই, আদালত তিনদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে। এরপর আসামিদের জামিন হয়ে যায়। আদালত জামিন দিলে আমাদের কিছু করার থাকে না।’

আদালত সূত্র থেকে জানা গেছে, মামলার সব আসামিই জামিন পেয়েছেন। গত ২৬ এপ্রিল মামলার তিন ও চার নম্বর আসামি মাহমুদুল হাসান (৪০) ও এস এম মোস্তফা কামাল (৪৮) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশিদের আদালত থেকে প্রথমে জামিন পান। এরপর গত ৩ মে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ উর রহমানের আদালত থেকে অপর আসামিরা জামিন পান।

বিপুল পরিমাণ অনুমোদনহীন করোনা টেস্ট কিট, রি-এজেন্ট উদ্ধার করা হয়

গত ৩ মে শুনানিতে জামিনের বিরোধিতা করেন সরকারি প্রসিকিউটর। র‌্যাব কর্তৃক নিয়োজিত প্যানেল অ্যাডভোকেট ভার্চুয়াল কোর্টে আসামিদের জামিনের বিরোধিতা করলেও নিম্ন আদালত আসামিদের জামিন প্রদান করেন।

র‌্যাবের দাবি, বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় যেখানে বিচার উচ্চ আদালতে সম্পন্ন হয়, সেখানে নিম্ন আদালতে জামিন পাওয়ার বিষয়ে বিজ্ঞ পিপি এবং প্যানেল অ্যাডভোকেট হতাশা ব্যক্ত করেন।

জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় মামলাটি তদন্তের আগ্রহ জানিয়ে গত ২ মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আবেদন করেছে র‌্যাব।

র‌্যাব-২ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার জানান, অনুমোদনহীন মেডিক্যাল ডিভাইস আমদানি, ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ মেডিক্যাল টেস্টিং কিট এবং রি-এজেন্ট জালিয়াতির মাধ্যমে নতুন করে মেয়াদ বসানোর অভিযোগে আমদানিকারক তিনটি প্রতিষ্ঠানের নয়জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে আইনগতভাবেই মামলা হয়েছে।

চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে এসব মেয়াদোত্তীর্ণ টেস্ট কিট এবং রি-এজেন্ট দেশি-বিদেশি আমদানিকারক ও সরবরাহকারীদের কাছে কম টাকায় সংগ্রহ করে পুনরায় সেটার মেয়াদ বাড়াতো। বিশেষ মুদ্রণ যন্ত্রের মাধ্যমে টেম্পারিং করে এসব টেস্টিং কিট এবং রি-এজেন্ট তারা বাজারজাত করে আসছিল। পাশাপাশি বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজনীয় টেস্ট কিট এবং রি-এজেন্ট তারা নিয়মিতভাবে সরবরাহ করে আসছিল যেমন জন্ডিস, ডায়াবেটিস, নিউমোনিয়া, করোনা, ক্যান্সার প্রভৃতি রোগসহ অন্যান্য প্যাথলজিক্যাল টেস্টের জন্য যেসকল কিট ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ২০১০ সাল থেকে এ প্রতিষ্ঠানগুলো একাধিক নামের সংগঠিত হয় এ ধরনের অসদুপায় অবলম্বন করে প্রতারণা চালিয়ে আসছিল।

সরকারি প্রসিকিউটরের বক্তব্য

ঢাকা মহানগর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি আসলে বিষয়টি পরবর্তীতে জানতে পেরেছি। ভার্চুয়াল কোর্ট তাদের সবাইকে জামিন দিয়েছেন। ভার্চুয়াল কোর্টে ওই আদালতের পিপি অংশ নিয়েছিলেন। আদালত কোন গ্রাউন্ডে, কেন তাদের জামিন দিলো, তা দেখতে হবে।’

প্রবীণ এই আইনজীবী মনে করেন, ‘এসব মামলা আরও সতর্কভাবে দেখা উচিৎ। বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা এই মামলায় তাদের সিএমএম থেকে জামিন পাওয়ার কথা না। কারণ তারা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। লকডাউন থাকায় জামিন বাতিলের জন্য আবেদন করা সুযোগ নেই। তবে লকডাউন শেষ হলে আমরা ব্যবস্থা নেবো।’ 

/এআরআর/এমআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রেললাইনে ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত
কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রেললাইনে ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত
ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় রাশিয়ার জ্বালানি স্থাপনায় আগুন
ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় রাশিয়ার জ্বালানি স্থাপনায় আগুন
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা