আগামী শুকনো মৌসুমে ভাসানচরে ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করতে চায় সরকার। তার আগেই সেখানে জাতিসংঘের সুসংহত কার্যক্রম দেখতে চায় সরকার। একইসঙ্গে মিয়ানমারে যেন দ্রততম সময়ে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন সম্ভব হয়, তার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও দায়িত্বপূর্ণ আচরণ আশা করে বাংলাদেশ।
রবিবার (৬ জুন) প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসের সঙ্গে ১০টি পশ্চিমা দেশের রাষ্ট্রদূত ও জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের বৈঠকে এই বার্তা দিয়েছে সরকার বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে প্রত্যাবাসন এবং ভাসানচরে একটি সাময়িক ব্যবস্থা। আমরা রাষ্ট্রদূতদের জানিয়েছি, রোহিঙ্গারা প্রাণের ভয়ে বাংলাদেশে যখন পালিয়ে আসছিল, তখন আমরা মানবতার খাতিরে সীমান্ত উন্মুক্ত করে দিয়েছি। কক্সবাজারে অত্যন্ত অল্প জায়গায় অনেক বেশি মানুষের অবস্থানের কারণে তাদের ভাসানচরে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ১৮ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় সেখানে গেছে। তাদের দেখভাল করার জন্য সেখানে জাতিসংঘের যাওয়াটা জরুরি বলে মনে করে সরকার।
এ বিষয়ে জাতিসংঘের অবস্থান জানতে চাইলে সরকারের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, জাতিসংঘ সদর দফতরের দুই জন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সম্প্রতি ভাসানচর পরিদর্শন করেছেন। তাদের ইতিবাচক মনোভাবের কথা প্রকাশ্যে তারা বলেছেন। আজকেও ভাসানচরে যাওয়ার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তাদের নিজস্ব প্রক্রিয়া শেষ হলেই তারা সেখানে অল্প সময়ের মধ্যে যাবে।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জীবিকা ও দক্ষতার ব্যবস্থা নিয়ে সরকারের সঙ্গে জাতিসংঘের অবস্থানের তেমন মতভেদ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের কারিকুলামে শিক্ষা দেওয়ার জন্য বলেছি, যাতে তারা দেশে ফেরত গেলে সহজেই সমাজে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
রোহিঙ্গাদের জীবিকার বিষয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, এটির ক্ষেত্রে আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে। কিন্তু এরপরও আমাদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব, যেমন- মাছ আহরণ বা সবজি চাষসহ অন্যান্য বিষয়ে আমরা নমনীয়।
দক্ষতার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরাও এ বিষয়ে রাজি এবং তাদের ওইসব বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধি করা হবে, যেগুলো দেশে ফেরত গেলে তাদের কাজে লাগে।
মুখ্য সচিবের সঙ্গে বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্সসহ অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রদূতরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, রোহিঙ্গাদের সাময়িক অবস্থানের জন্য প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা খরচ করে ভাসানচরে আশ্রয়ণ প্রকল্প গড়ে তুলেছে সরকার। সেখানে মোট এক লাখ রোহিঙ্গাকে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।