ভারতের রাজস্থানে পুরখারাম নামে এক ব্যক্তি বছরে ৩৬৫ দিনের মধ্যে ৩০০ দিনই ঘুমিয়ে কাটান। এরপরও তার শরীরের ক্লান্তি দূর হয় না। তার এই দীর্ঘ ঘুমের পেছনে দায়ী অ্যাক্সিস হাইপারসমনিয়া নামের এক বিরল রোগ।
কলকাতাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকার ডিজিটাল সংস্করণের খবরে বলা হয়েছে, পুরখারাম রাজস্থানের নাগৌর জেলার ভড়বা এলাকার বাসিন্দা। ২৩ বছর আগে এই বিরল রোগ দেখা দেয় তার শরীরে। তখন থেকেই তার স্বাভাবিক জীবন প্রায় হারিয়ে গেছে। ঘুম পেলে যেখানে সেখানেই শুয়ে পড়েন। এই ঘুম চলে তার টানা ২০-২৫ দিন। ঘুমের মধ্যেই তাকে গোসল, খাওয়ানোসহ সবকিছু বাড়ির লোকজনকে করে দিতে হয়।
চিকিৎসকরা জানান, এই রোগটি মূলত স্নায়ুর রোগ। মস্তিষ্কে টিএনএফ-আলফা নামে এক প্রকার প্রোটিনের মাত্রা ওঠানামার কারণে এই রোগ হয়। তাদের কথায়, প্রথম দিকে একটানা ৫ থেকে ৭ দিন ঘুমাতেন পুরখারাম। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে দিন। এখন তো একবার ঘুমালে ২০ থেকে ২৫ দিনের আগে ভাঙানো যায় না সে ঘুম।
ঘুম রোগের জ্বালায় রোজগারও শিকেয় উঠেছে পুরখারামের। মাসের মধ্যে পাঁচ-ছয়দিন মুদির দোকানটা খোলা রাখতে পারেন তিনি। অনেক সময় দোকানে এসেও খদ্দেররা দেখেন পুরখারাম ঘুমিয়ে পড়েছেন। তখন আবার বাড়ির লোকের আর এক ঝক্কি।
পুরখারাম জানান, দীর্ঘদিন একটানা বন্ধ থাকার পরে দোকান খুলে দেখেন দরজার বাইরে খবরের কাগজের পাহাড় জমেছে। সেই কাগজ গুনে গুনে টের পান মাসের সিংহভাগই ঘুমিয়ে পার করে ফেলেছেন তিনি। রোগ নিরাময়ের জন্য ওষুধ খেয়েছেন অনেক, তবে লাভ হয়নি। ঘুমিয়ে উঠেও ফের ঘুমঘুম ভাব, দিনভর ক্লান্তি আর মাথাব্যথা।
চিকিৎসকেরা বলছেন, পুরখারামের এই রোগ খুবই বিরল। মাথায় আঘাত লাগলে বা অতীতে মাথায় টিউমার থাকলেও অনেক সময় পরে এরকম অবস্থা হতে পারে। চিকিৎসাশাস্ত্রে একে মানসিক সমস্যা বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। একেবারে গোড়ায় ধরা পড়লে অনেক সময় চিকিৎসায় সারতে পারে রোগটি। তবে পুরখারামের ক্ষেত্রে সে সম্ভাবনা কতটা তা নিশ্চিত করতে পারছেন না চিকিৎসকেরা।