X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাধ্য হয়েই স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা, বলছেন অভিভাবকরা

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৫:২৮আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৫:২৮

চলতি বছরের জানুয়ারিতে স্কুলে ভর্তি হয়েছিল তাসফিয়া তাহসীন সুয়া। আর আজ (১৪ সেপ্টেম্বর) প্রথম বারের মতো সশরীরে স্কুলে এসেছে।

৯ মাস পর স্কুলে আসার উত্তেজনায় আগের রাতে তাসফিয়া ঘুমায়নি একটুও। কয়েকবার স্কুল ড্রেস আর জুতো পরে বাসায় দেখেছে সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা। বন্ধুদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছে কে কে আসবে জানার জন্য।

তাসফিয়াকে স্কুলের ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়ে মা মৌসুমি আক্তার দাঁড়িয়ে ছিলেন রাস্তার ওপরে।

মেয়ের স্কুলের প্রতি আগ্রহের কথা জানিয়ে বলেন, আসলে বাসায় পড়াশোনা হয় না। স্কুল খোলার দরকার ছিল। কারণ স্কুলের পরিবেশ, শিক্ষক-বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হওয়া, স্কুলের মাঠে খেলা - এসব কিছু বন্ধ ছিল পুরো দেড়টা বছর। স্কুল বন্ধ হবার প্রথম কয়েকদিন প্রভাবটা অতো বোঝা যায়নি, কিন্তু দিন যতো গেল সমস্যা বাড়তে লাগলো। সারাক্ষণ জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকতো, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাচ্ছিল। ছোট বোনটা কাঁদলে তাকে ধরার বদলে চুপচাপ বসে থাকতো-কেমন অদ্ভুত একটা জীবন।

মেয়েকে নিয়ে সকাল ১০টা বিশ মিনিটে স্কুলে পৌঁছেছেন দুই সন্তানের মা মৌসুমি। মেয়ে ফার্মগেটে অবস্থিত বটমলী হোম বালিক উচ্চ বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। স্কুল ছুটি হবে সাড়ে ১২টায়। ততক্ষণ পর্যন্ত এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবেন তিনি।

এতক্ষণ পর্যন্ত এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবেন- প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কিচ্ছু করার নেই তো।

মৌসুমি জানালেন, নাখালপাড়ার বনফুল এলাকাতে বাসা। বাসায় রয়েছে বৃদ্ধ শ্বশুড়। দুপুরে রান্নার আয়োজন এখনও বাকি। মেয়েকে স্কুলে দিয়ে তিনি ফোনেই বাসায় সহযোগীকে বলে দিচ্ছিলেন কী কী রান্না হবে আজ।

দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া আরেক শিক্ষার্থী প্রান্তির মা লিপি আক্তার। তার বাসাও নাখালপাড়ায়। তিনিও মেয়েকে নিয়ে এসে দাঁড়িয়ে আছেন।

কখন এসেছেন জানতে চাইলে লিপি জানালেন, ১০টা ১০ এর দিকে এসেছেন, যেতে হবে স্কুল ছুটি হলে সাড়ে ১২টার পর।

এতোটা সময় এখানে দাঁড়িয়ে থাকবেন প্রশ্নে তিনি বলেন, আর কিছু করার নেই, কোনও উপায়ও নেই।

দীর্ঘ ১৭ মাস শেষে খুলেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। স্কুলগুলোর সামনে বেড়েছে অভিভাবকদের জটলা। অভিভাবকদের এ জটলা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর শঙ্কা প্রকাশ করেছে। বর্তমানে সংক্রমণের নিম্নগতিকে প্রভাবিত করবে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। আর একাধিক স্কুল কর্তৃপক্ষও স্কুলের সামনে অভিভাবকদের জটলা না করার অনুরোধ জানিয়েছে।

আর অভিভাবকরাও এ নিয়ে কথা বলছেন। তারা বলছেন, দেড় থেকে দুই ঘণ্টার জন্য সপ্তাহে একদিন স্কুল খোলা। তারা করোনা সংক্রমণের ভয়ের কারণে স্কুল ভ্যানে সন্তানকে যেমন একা ছাড়তে এখনও ভরসা পাচ্ছেন না, তেমনি সন্তানকে একবার স্কুলে দিয়ে বাসায় ফেরত গিয়ে আবার তাকে নিতে আসার মতো পরিস্থিতি নেই ঢাকা শহরে।

একাধিক অভিভাবক এ প্রতিবেদককে বলেন,  আপনারা সাংবাদিকরা সমালোচনা করে লিখছেন, অভিভাবকরা দাঁড়িয়ে থাকছেন। কিন্তু কেন দাঁড়িয়ে থাকি আমরা‑ সে কথা জানতে চান না। এভাবে রোদে পুড়ে, গরম আর ধুলার ভেতরে, বৃষ্টিতে ভিজে, মাস্ক পড়ে রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে থাকতে আমাদের কি ভালো লাগে বলে কারও মনে হয়? নিশ্চয় না, সেই সঙ্গে থাকে বাসায় রান্নাসহ নানা কাজ।

কিন্তু কেউ ভেবে দেখেন, মহাখালী থেকে সকালে একবার এসে সন্তানকে স্কুলে দিয়ে আবার ফেরত যাওয়া। এরপর আবার আসা এবং আবার যাওয়া। এটা কি সম্ভব? সেই সঙ্গে বাড়িতে সবারই বৃদ্ধ সদস্য রয়েছেন। এতবার যাতায়াতের কারণে আমরাদের কারণে তারাও সংক্রমিত হচ্ছেন কিনা বা হবেন কিনা-সে ভাবনটাও মাথায় থাকে।

তাই অপেক্ষা করে হলেও একবারে সন্তানকে নিয়ে বাসায় ফেরার চেষ্টাই করছেন সব অভিভাবক।

মেট্রোপলিটন হাসপাতালের কর্মকর্তা রত্না রেবেলের মেয়ে ঘুমি মার্থা সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। মেয়ের স্কুলের জন্য ছুটি নিয়েছেন তিনি। শিফটিং ডিউটি থাকাতে তিনি ছুটি নিতে পেরেছেন সহকর্মীর সঙ্গে মিলিয়ে।

তিনি জানালেন, করোনার আগে সন্তান ভ্যানে যাতায়াত করতো, কিন্তু করোনার কারণে ভ্যানেও দেওয়া হচ্ছে না। সপ্তাহে একদিন ক্লাস হবার পাশাপাশি করোনার সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে।

কিন্তু অন্যদের মতো ছুটি নেবার বা সহকর্মীর সঙ্গে ডিউটি টাইম এক্সচেঞ্জ করার সুবিধা নেই, তার জন্য স্কুলে সন্তানকে আনা-নেওয়া অবশ্যই অনেক বড় সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৯-৫টা অফিস হলে এটা সম্ভব নয়।

তবে করোনার এই সময়ে যেহেতু সপ্তাহে একদিন করে ক্লাস হবে, তাই এটুকু ঝুঁকি নিতেই হবে।

মেয়ের ক্লাস এক ঘণ্টা ২০ মিনিটের। মিরপুর থেকে এইটুকু সময়ের জন্য দুইবার যাতায়াত করা সম্ভব নয়। রাস্তায় তো আরও বেশি ঝুঁকি বলে জানালেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক অভিভাবক।

প্রসঙ্গত, গত বছর ৮ মার্চ দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ওই বছর ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। দফায় দফায় ছুটি বাড়িয়ে শেষ পর্যন্ত গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল-কলেজ খুলে দেয় সরকার।

/জেএ/এমএস/
সম্পর্কিত
প্রতি শ্রেণিতে ৫৫ শিক্ষার্থী ভর্তির নির্দেশ প্রতিমন্ত্রীর
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় বেড়েছে
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!