৭টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষার আরটি-পিসিআর ল্যাব বসাতে অনুমোদন দিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। বিমানবন্দরের উত্তর পাশের বহুতল কারপার্কিং ভবনের ছাদে ল্যাব স্থাপনের জন্য জায়গা নির্ধারণ করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। তবে অনুমোদন পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, খোলা ছাদ ল্যাব স্থাপনের জন্য উপযুক্ত নয়। অন্যদিকে এসব প্রতিষ্ঠানের স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) মানসম্মত কী না তা যাচাই করতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পাঠাতে হবে। ফলে কবে নাগাদ বিমানবন্দরে ল্যাব চালু হবে তার নির্ধারিত সময় জানাতে পারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন: বিমানবন্দরে পিসিআর ল্যাব স্থাপনের অনুমোদন পেয়েছে বিতর্কিতরাও
সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার বিকেলে ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত বেবিচক প্রধান কার্যালয় ৭টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বেবিচক চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে এ সভায় ল্যাব স্থাপনের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ল্যাব স্থাপনের সময়, জনবলসহ বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য জানতে চায় বেবিচক। বর্তমানে বহুতল পার্কিং ভবনটি একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা দেওয়া রয়েছে। ল্যাবগুলোকে ছাদ ব্যবহারের জন্য দৈনিক ৮০ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হবে। এছাড়া বিদ্যুৎসহ অন্যান্য ইউটিলিটি খরচগুলো সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে বহন করতে হবে।
সূত্র জানায়, ৭টি প্রতিষ্ঠানের স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) মানসম্মত কী না তা যাচাই করতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পাঠাতে হবে। আরব আমিরাত সেসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আপত্তি না জানালে কাজ দেওয়া হবে। কোনও প্রতিষ্ঠানের এসওপি নিয়ে আপত্তি আসলে তাদের কাজ দেওয়া হবে না।
এদিকে বৈঠকে খোলা ছাদে ল্যাব স্থাপন নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে ৭টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা। খোলা ছাদে তাপমাত্রা, বাতাস ল্যাবের পরীক্ষায় বিঘ্ন ঘটাবে। প্রতিষ্ঠানগুলো বেবিচকের কাছে, কার পার্কিং ভবনের ২য় তলায় ল্যাব স্থাপনের জন্য জায়গা বরাদ্দ দিতে অনুরোধ জানিয়েছে। এ বিষয়ে জয়নুল হক সিকদার ওমেন্স মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের চিফ মেডিক্যাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটর সুব্রত সাহা বলেন, খোলা জায়গা বলে প্রতিবন্ধকতা আছে। তাঁবু বা ভ্রাম্যমাণ শেড বসিয়ে সম্ভব হবে না। সেখানে এমনিতেই অনেক বাতাস, ঝড় বৃষ্টি হলে আরও সমস্যা। পার্কিংয়ের ভবনের দ্বিতীয় তলায় হলে ল্যাব স্থাপন করা যাবে।
তবে বেবিচকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ল্যাব স্থাপনের জন্য ছাদেই জায়গা দেওয়া হবে তা আগে থেকেই জানানো হয়েছে। যারা কাজ করবে তাদের নিজেদের খরচেই ল্যাব স্থাপনের পরিবেশ তৈরি করে নিতে হবে। কোনও প্রতিষ্ঠান চাইলে এখনও সরে যেতে পারে। কার্যাদেশ পাওয়ার পর নির্ধারিত সময় ল্যাব স্থাপন না করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষার জন্য ৭টি প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমোদন পেয়েছে। এখন তারা বিমানবন্দর এবং যে দেশে যাত্রী যাবে তাদের স্ট্যান্ডার্ড মিট করে কীনা তা যাচাই করা হবে। ইউএইতে বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন বিমানবন্দরে যে প্রতিষ্ঠানগুলো ল্যাব স্থাপন করবে, তাদের এসওপি ইউএই'র সম্মতি লাগবে। এজন্য ৭টি প্রতিষ্ঠানকে শুক্রবার ১২ টার মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) জমা দিতে বলা হয়েছে। এগুলো সংযুক্ত আরব আমিরাতের পাঠানো হবে, তার আপত্তি না জানালে কাজের অনুমতি দেওয়া হবে।
পরীক্ষার ফি প্রসঙ্গে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, একেক প্রতিষ্ঠান একেক রকমের ফি নির্ধারণ করেছে। আমরা তাদের প্রস্তাবিত ফি এর মধ্যে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন এর মাঝামাঝি একটা ফি নির্ধারণ করতে বলেছি।
আবেদনের উল্লেখিত সময়ে ল্যাব স্থাপনে ব্যর্থ হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান বেবিচক চেয়ারম্যান।
গত বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ৭টি প্রতিষ্ঠানকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষার আরটি-পিসিআর ল্যাব বসাতে অনুমোদন দেয় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়।স্টেমজ হেলথ কেয়ার (বিডি) লিমিটেড ঢাকা, সিএসবিএফ হেলথ সেন্টার, এএমজেড হাসপাতাল লিমিটেড, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, জয়নুল হক সিকদার ওমেন্স মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল, গুলশান ক্লিনিক লিমিটেড ও ডিএমএফআর মলিকুলার ল্যাব অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক- এই সাতটি প্রতিষ্ঠানের নাম প্রস্তাব করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
এই সাতটি নির্বাচিত ল্যাবকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড অপারেশন প্রসিডিউর-এর আলোকে ল্যাব স্থাপনের প্রয়োজনীয় স্থান বরাদ্দসহ আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বেবিচক চেয়ারম্যানকে অনুরোধ জানায় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজ করার নির্দেশ জারি করতে স্বাস্থ্য অধিদফতরকে অনুরোধ করা হয়।
জানা গেছে, এই সাতটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে স্টেমজ হেলথ কেয়ার তিন দিনের মধ্যে ল্যাব স্থাপন করতে পারবে বলে জানিয়েছে। তারা নমুনা পরীক্ষার মূল্য নির্ধারণ করেছে দুই হাজার টাকা। সিএসবিএফ হেলথ সেন্টারের ল্যাব স্থাপনে সময় লাগবে পাঁচ দিন, নমুনা পরীক্ষার খরচ নেবে এক হাজার ৮৫০ টাকা।
এছাড়া, এএমজেড হাসপাতাল পাঁচ দিনে ল্যাব স্থাপন করতে পারবে, নমুনা পরীক্ষায় খরচ নেবে এক হাজার ৮০০ টাকা। আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চার দিনে ল্যাব স্থাপন করতে পারবে বলে জানিয়েছে। তারা নমুনা পরীক্ষার খরচ দেখিয়েছে ২ হাজার টাকা। জয়নুল হক সিকদার ওমেন্স মেডিক্যাল কলেজ ল্যাব স্থাপনে ছয় দিন চেয়েছে এবং খরচ চেয়েছে ১ হাজার ৭০০ টাকা। পাঁচ দিনে ল্যাব স্থাপন করতে পারবে বলে জানিয়েছে গুলশান ক্লিনিক, যাদের নমুনা পরীক্ষার খরচ এক হাজার ৭৫০ টাকা আর ডিএমএফআর ল্যাব স্থাপন করতে সময় চেয়েছে চার দিন, যেখানে নমুনা পরীক্ষার খরচ দুই হাজার ৩০০ টাকা।