X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

মিরসরাইয়ের পাহাড়ে গোলমরিচ, ২১ লাখ টাকায় বিক্রির সম্ভাবনা

মোহাম্মদ ইউসুফ, মিরসরাই (চট্টগ্রাম)
১১ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯:৪৩আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯:৪৩

পাহাড়বেষ্টিত মিরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের কয়লা গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দার প্রধান পেশা ছিল কাঠ ও বাঁশ। এতে উজাড় হতো বনাঞ্চল। পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পুরুষরা চোলাই মদ তৈরিতেও জড়িত ছিল। তবে গত তিন বছরে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে তাদের জীবনে। পরিবর্তনটা এনে দিয়েছে দামি মসলা গোলমরিচ। গত বছর ২০টি প্লট থেকে পাওয়া গেছে ৭০ কেজি গোলমরিচ। যা বিক্রি হয়েছিল ৪২ হাজার টাকায়। এবছর ফলন সাড়ে তিন হাজার কেজি ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ২১ লাখ টাকা।

জানা গেছে, ২০১৭ সালের জুলাইতে ২০ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ দিয়ে সমাজ উন্নয়ন সংস্থা অপকা’র সহযোগিতায় ও দাতা সংস্থা পিকেএসএফের আর্থিক সহায়তায় কয়লা গ্রামের ১১টি প্লট ও ফটিকছড়ি উপজেলার দাঁতমারা ইউনিয়নে ৯টি প্লটে বাণিজ্যিকভাবে গোলমরিচ চাষ শুরু হয়। অপকা’র পক্ষ থেকে চারা, খুঁটি ও প্রয়োজনীয় কীটনাশক দেওয়া হয় কৃষকদের। ২০টি প্লটেই গোলমরিচের ফল এসেছে। পুঁতির মালার মতো ধরেছে ফল। স্থানীয় বাজারেই প্রতিকেজি বিক্রি হবে ৫০০-৬০০ টাকায়। এবছর প্রায় ১০ হাজার কেজি কাঁচা গোলমরিচ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। শুকানোর পর যা হবে সাড়ে তিন হাজার কেজি।

২৫ শতক জায়গা নিয়ে একটি করে প্লট প্রস্তুত করা হয় কৃষি কর্মকর্তা ও চাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গোলমরিচ সাধারণত পাহাড়ের ঢালু ও আধো ছায়াযুক্ত মাটিতে বেশি হয়। ২৫ শতক জায়গা নিয়ে একটি করে প্লট প্রস্তুত করা হয়। যেখানে প্রতি খুঁটিতে ৪টি করে ১২৫টি খুঁটিতে ৫০০ চারা লাগানো হয়। রোপণের ২ বছর পর ফল আসতে শুরু করে। সঠিক পরিচর্যা পেলে ২০ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া সম্ভব। প্রতি ৪টি গাছ থেকে বছরে ৭-৮ কেজি কাঁচা গোলমরিচ পাওয়া যায়। পরে যা সেদ্ধ করে শুকানো হয়। ফল আসার পর পরিপক্ক হতে লাগে ছয় মাস। গাছের বয়স দুই বছর হওয়ার পর লতা কেটে কাটিং করা যায়। সেই কাটিং-চারা আবার ২০-২৫ টাকায় বিক্রি করা যায়। ২৫ শতকের একটি প্লট থেকে প্রতি বছর ১০ হাজার চারাও বানানো সম্ভব।

স্থানীয় চাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাণিজ্যিকভাবে গোলমরিচ চাষে সফল হলেও তারা সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। স্থানীয় কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তারা মাঝে মাঝে বাগান পরিদর্শনে গেলেও প্রশিক্ষণ কিংবা কীটনাশক পান না বলে দাবি করেন চাষীরা।

করেরহাট ইউনিয়ন ও দাঁতমারা ইউনিয়ন দু’টির বেশিরভাগ অংশ পাহাড়বেষ্টিত হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে পানির লেয়ার শুকিয়ে যায়। এতে সেচ সংকটে পড়ে অনেক গাছ মারা যায়। এজন্য গভীর নলকূপ স্থাপন করা প্রয়োজন বলে জানান মসলা চাষীরা।

পুঁতির মালার মতো ধরেছে ফল গোলমরিচ পাকার পর তা সেদ্ধ করে আবার শুকাতে সময় লেগে যায়। সরকারিভাবে বয়লার মেশিন বসানো গেলে দ্রুত গোলমরিচ বিক্রির উপযোগী করা সম্ভব। এ ছাড়া চারা বিক্রির জন্য একটি নার্সারি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সরকারিভাবে চারা কেনা হলেও স্থানীয় চাষীদের জীবনমান উন্নত হবে বলে জানান তারা।

কৃষক রুহুল আমিন বলেন, ‘গোলমরিচ চাষের প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর ২৫ শতক জমিতে চাষ করি। সাথী ফসল হিসেবে আদা, হলুদ, শাক ও মুলার চাষ করি। গোলমরিচের চারা রোপণের ২ বছর পর ফল আসে। আষাঢ়-জৈষ্ঠ্য মাসে ফুল ধরে। মাঘ মাসে ফল পাকে। গত বছর ৫০০ টাকা কেজিতে ১০ কেজি শুকনো গোলমরিচ বিক্রি করেছি। ঝাঁজ বেশি হওয়ায় স্থানীয় বাজারে এর অনেক চাহিদা। অন্য ফসলের চেয়ে রোগবালাইও কম। অবশ্য বর্ষায় মাটি অতিরিক্ত ভেজা থাকলে ছত্রাক ধরে গাছের গোড়া পচে যায়। এ ছাড়া শুকনো মৌসুমে নিয়মিত পানি দিতে না পারলে পাতা হলুদ হয়েও গাছ মরে যায়।

গোলমরিচ চাষী শ্রীকান্ত ত্রিপুরা বলেন, পাহাড়ের ঢালুতে ফলন বেশি হলেও শুষ্ক মৌসুমে পানি সংকটে গাছ মরে যায়। এজন্য দরকার গভীর নলকূপ। এ ছাড়া বয়লার মেশিন বসালেও চাষীদের উপকার হবে।

অপকা’র নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, মিরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউনিয়ন ও ফটিকছড়ি উপজেলার দাঁতমারা ইউনিয়নটি পাহাড়বেষ্টিত। অনেক জায়গা অনাবাদি ছিল। পাহাড়ের ঢালুতে গোলমরিচ চাষের জন্য পিকেএসএফের অর্থায়নে প্রথমে ২০ জন কৃষককে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করা হয়। বাণিজ্যিকভাবে গোলমরিচ চাষে সফল হওয়ায় পরে আরও ১২শ’ কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এখন করেরহাট ইউনিয়নে প্রায় ৩০০ কৃষক ব্যক্তিগতভাবে গোলমরিচ চাষ করছেন। পাশাপাশি এর চারা বিক্রি করেও লক্ষাধিক টাকা আয় করা সম্ভব বলে জানান তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা বলেন, পাহাড়ের ঢালুতে গোলমরিচ ভালো হয়। বিচ্ছিন্নভাবে পঞ্চগড়, শ্রীমঙ্গলে চাষ করা হলেও বাণিজ্যিকভাবে মিরসরাইতে প্রথম গোলমরিচ চাষ হচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

কৃষকদের জন্য বয়লার মেশিন ও গভীর নলকূপ বসানোর বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন বলে জানান তিনি।

 

 

 
 
/এফএ/
সম্পর্কিত
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ফসলের মাঠে সোনারঙ, তীব্র গরমেও কৃষকের মুখে হাসি
রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম বাগানতীব্র গরমে ঝরছে আমের গুটি, উৎপাদন নিয়ে চাষিদের শঙ্কা
সর্বশেষ খবর
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা