দৃক গ্যালারির কর্মকর্তা ইরফানুল ইসলাম (৪২) হত্যার ঘটনা তদন্তে সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজের উপর জোর দিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু কলাবাগান থানা পুলিশ সেই ফুটেজ দেখে হতাশ। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ধানমণ্ডির ডাচ বাংলা ব্যাংক ও মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে কিছুই পায়নি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। ঢাকার ভেতরে থাকতেই বন্ধ করা হয় ইরফানুলের মোবাইল। তাই কোন পথ দিয়ে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাও নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। তবে সন্দেহ ঘনীভূত হচ্ছে দৃকের গাড়ি চালক নাসির হোসেনকে নিয়ে।
কলাবাগান থানা পুলিশ ও দৃক সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে এসব তথ্য জানিয়েছে।
কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইকবাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা এখনও অন্ধকারে আছি। বলার মত কোনও কিছু অগ্রগতি নেই। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।’
কলাবাগান থানার তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ধানমণ্ডির ৮ নম্বরের ডাচ বাংলা ব্যাংকের ভেতরের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, ইরফানুল ইসলাম ১১টা ২৬ মিনিটে তিন লাখ আট হাজার টাকা উত্তোলন করেন। এরপরই তাকে ব্যাংক থেকে বের হতে দেখা যায়। ব্যাংকের সামনের রাস্তায় থাকা সিসি ক্যামেরাটি বন্ধ থাকায় বাইরের আর কোনও চিত্র ধরা পড়েনি। ১১টা ৪৮ মিনিটে তিনি তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি দিয়ে চালক নাসির হোসেনের সঙ্গে কথা বলেন। ব্যাংক থেকে তিনি বের হয়ে কোন দিকে গেলেন তাও নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। তাই ব্যাংকের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে তেমন কোনও তথ্য পায়নি পুলিশ।’
তিনি আরও বলেন, ‘এরপর হানিফ ফ্লাইওভারের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ। তবে তা দেখে পুলিশ আরও বেশি হতাশ। কারণ ওই সিসি ক্যামেরার ফুটেজে গাড়ির নম্বরই বোঝা যায় না। পুলিশের ধারণা ছিল, ফ্লাইওভারের ধারণকৃত ফুটেজ দিয়ে গাড়ির ভেতরের মানুষও শনাক্ত করা যাবে। তবে সেই ভিডিও ফুটেজ এতোই অস্পষ্ট যে তা দেখে পুলিশ হতাশ হয়েছে।’
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘ইরফানুল ইসলামকে নিয়ে ঢাকা থেকে বের হওয়ার আগেই তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ধারণা করা হচ্ছে, তাকে অপহরণের পরই তার ফোনটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।’
তবে দৃকের গাড়িচালক নাসির হোসেনকে ঘিরে সন্দেহ ঘনীভূত হচ্ছে পুলিশের। নিখোঁজ হওয়ার পর তিনি কি করেছিলেন? তিনি কাকে আগে বিষয়টি জানিয়েছিলেন? ব্যাংক থেকে কতদূরে গাড়ি রাখা হয়েখেছিল? এসব প্রশ্নের জবাবে চালক নাসির বলেন, ব্যাংক থেকে একটু দূরে তিনি গাড়ি পার্ক করে রাখেন। ১১টা ৪৮ মিনিটে তার সঙ্গে ইরফানুলের শেষ কথা হয়। এরপর দীর্ঘক্ষণ খোঁজ না পেয়ে আবারও ফোন করলে তিনি ইরফানুলের মোবাইল ফোন বন্ধ পান। এরপর তিনি অফিসে ফোন করে বিষয়টি জানান।
তবে নাসিরের কথাবার্তা অসংলগ্ন বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় তাকে আটক করা না হলেও এ পর্যন্ত দুই দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
শনিবার (২ এপ্রিল) দুপুরে ডাচ বাংলা ব্যাংক থেকে টাকা তোলার পরই নিখোঁজ হন ইরফানুল ইসলাম। ওই দিন তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি পরিবারের সদস্যদের জানায় দৃক কর্তৃপক্ষ। এরপর দৃকের মহাব্যবস্থাপক এসএম রেজাউর রহমান কলাবাগান থানায় জিডি করেন।
দৃকের মার্কেটিং ম্যানেজার তাইমুর রশিদ জানান, ইরফানুল ইসলাম ছিলেন দৃকের প্রশাসনিক কর্মকর্তা। অ্যাকাউন্টও দেখতেন তিন। শনিবার দুপুর টাকা উত্তোলন করে চালকের সঙ্গে কথা হয় তার। এরপর নিখোঁজ হন তিনি। তিনি অফিসের গাড়িতে করেই ব্যাংকে গিয়েছিলেন।
রবিবার নারায়ণগঞ্জ থেকে ইরফানুলের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় কলাবাগান থানায় নিহতের ভাই এমদাদুল ইসলাম একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি কলাবাগান থানা পুলিশ তদন্ত করছে।
/এসটি/