মাদ্রাসাছাত্রীকে আগুনে হত্যাচেষ্টা

দুটি সূত্রকে সামনে রেখে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ

ঘটনাস্থল পরিদর্শনে চট্টগ্রাম রেঞ্জের পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মোহাম্মদ আবুল ফয়েজ ও অন্য কর্মকর্তারা চট্টগ্রাম রেঞ্জের পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মোহাম্মদ আবুল ফয়েজ বলেছেন, ‘ফেনীর সোনাগাজী ফাজিল মাদ্রাসা পরীক্ষা কেন্দ্রে আলিম পরীক্ষার্থীকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টায় দুটি বিষয় বা সূত্রকে সামনে রেখে তদন্ত চালানো হচ্ছে। এর একটি হচ্ছে, ছাত্রীর অভিযোগ হিসেবে চার দুর্বৃত্ত দ্বারা তাকে হত্যার চেষ্টা। অন্যটি হচ্ছে, আত্মহত্যার কোনও চেষ্টা ছিল কিনা।’

তিনি রবিবার (৭ এপ্রিল) দিনভর ঘটনাস্থলে সোনাগাজী ফাজিল মাদ্রাসা পরীক্ষা কেন্দ্রসহ ওই এলাকায় অনুসন্ধান শেষে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।

অতিরিক্ত ডিআইজি এ সময় সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইতোমধ্যে মাদ্রাসার ইংরেজির প্রভাষক আবছার উদ্দিন এবং আলিম পরীক্ষার্থী ছাত্র হাফেজ আরিফুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। ওই ছাত্রীর পরিবার যেহেতু ছাত্রীর চিকিৎসার জন্য ঢাকায় অবস্থান করছে তাই তারা লিখিতভাবে অভিযোগ দিলে পরবর্তী সময়ে মামলা রুজু করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আপাতত জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আটককৃত দুজনকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে। যদিও আগুনের ঘটনাটি এখনও রহস্যবৃত। রহস্য উদঘাটনে কিছুটা সময় লাগবে।’

ডিআইজি আরও বলেন,‘আমরা এখনও ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছি। ঘটনার রহস্য উদঘাটনে উপস্থিত সবার সহযোগিতা চাই।’

তিনি এ  বিষয়ে থানা পুলিশকে বিশেষ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন।

এ সময় এএসপি সদর সার্কেল উক্য সিং, এএসপি সোনাগাজী-দাগনভূঞা সার্কেল সাইকুল আহম্মদ ভূঁইয়া, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) মো. কামাল হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সোনাগাজী মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, ‘অধ্যক্ষ সিরাজের বিরুদ্ধে নাশকতা, যৌন হয়রানি ও চেক জালিয়াতিসহ ফেনী এবং সোনাগাজী মডেল থানায় ছয়টি মামলা রয়েছে। অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলাহ জামায়াতের রোকন পদে থাকলেও ২০০৯ সাল থেকে তিনি জামায়াতের রাজনীতি থেকে গা-ডাকা দেন।’

উল্লেখ্য, আগুনে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার শিকার ওই ছাত্রী সোনাগাজী পৌরসভার উত্তর চরছান্দিয়া গ্রামের মাওলানা মুসা মিয়ার মেয়ে। শনিবার (৬ এপ্রিল) সকালে তার আরবি প্রথম পত্রের পরীক্ষা ছিল। তাকে পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে যান তার ভাই নোমান। তবে কেন্দ্রের প্রধান ফটকে নোমানকে আটকে দেন নিরাপত্তাকর্মী মোস্তফা। এরপর ছাত্রীটি একাই হেঁটে কেন্দ্রে প্রবেশ করে। এ সময় নোমান কেন্দ্রে থেকে একটু দূরে চলে আসেন। এর ১৫-২০ মিনিট পরই মোবাইলে বোনের অগ্নিদগ্ধের খবর পান তিনি। ফের কেন্দ্রে ছুটে গিয়ে বোনকে দগ্ধ অবস্থায় দেখতে পান নোমান।

আগুনে দগ্ধ ছাত্রীকে উদ্ধার করে প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে ফেনী সদর হাসপাতালে পাঠান। সেখানে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়।

এর আগে গত ২৭ মার্চ ওই ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় ছাত্রীর মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী থানায় মামলা করেন।

আরও পড়ুন:

মাদ্রাসাছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টায় জড়িতদের গ্রেফতারের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

ফেনীর সেই মাদ্রাসাছাত্রীর চিকিৎসায় ৮ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড

ফেনীর সেই মাদ্রাসাছাত্রী শঙ্কামুক্ত নয়

মাদ্রাসাছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টায় শিক্ষকসহ আটক ২

পরীক্ষার হল থেকে ডেকে নিয়ে মাদ্রাসাছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ

আমি এই ঘটনার বিচার চাই: সেই মাদ্রাসাছাত্রীর বাবা

মাদ্রাসাছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা: ‘অগ্নিসংযোগকারীদের পরনে ছিল বোরকা, হাতমোজা ও কালো চশমা’

ছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টা: সোনাগাজী মাদ্রাসায় পাঠদান স্থগিত, অধ্যক্ষ সাময়িক বরখাস্ত