X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় বাড়ছে

গোলাম মওলা
২১ জুন ২০১৭, ২১:২৩আপডেট : ২২ জুন ২০১৭, ১৭:৩১

শপিং কমপ্লেক্সে লাগানো দোকান মালিক সমিতির ব্যানার নতুন ভ্যাট আইন আগামী অর্থবছর থেকে বাস্তবায়ন হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে আগামী ২৮ জুনের আগে নিশ্চিত করে কোনও কিছুই বলা যাচ্ছে না। কারণ এই আইন বাস্তবায়নের বিষয়টি একদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে নেওয়া একশ কোটি ডলার ঋণের অন্যতম শর্ত। অন্যদিকে, এই আইন নিয়ে অসন্তুষ্ট ব্যবসায়ীরা। এই আইন বাস্তবায়ন হলে তাই এর বিরূপ প্রভাব আগামী নির্বাচনেও পড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। এমন অবস্থায় ব্যবসায়ীদের দেওয়া বেশ কিছু প্রস্তাব যুক্ত করে আইনটিতে সংশোধনী এনে পাস করার কথা ভাবা হচ্ছে। যদিও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ব্যবসায়ীদের দেওয়া সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নতুন ভ্যাট আইনে অন্তর্ভুক্ত করার কোনও সুযোগ নেই।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তাড়াহুড়ো করে, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সমঝোতা করে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করা ঠিক হবে না। সরকারের উচিত হবে, হয় নতুন আইনটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করুক, তা না হলে আগের পুরনো আইনই বলবৎ থাকুক।’ তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের দেওয়া সুপারিশগুলো মেনে নিলে তা হবে নতুন আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ফলে যে ধারণা ও উদ্দেশ্য নিয়ে নতুন আইন করা হয়েছে তা সফল হবে না।’
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘সংসদে হয়তো এটা নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে। তবে আগামী অর্থবছর থেকে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করা ঠিক হবে না। কারণ, এই আইন বাস্তবায়নের সে ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার মতো সক্ষমতা এখনও নেই।’ নতুন ভ্যাট আইন সংশোধনের জন্য ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে দেওয়া প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই প্রস্তাবগুলো মেনে নেওয়া হলে সরকারের জন্য এই আইন বাস্তবায়ন করা সহজ হতো।’
প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে মার্কেটে ঝোলানো ব্যানারে ২০১৯ সালে নতুন ভ্যাট আইনের বাস্তবায়নের দাবি করা হয়েছে জানা গেছে, নতুন ভ্যাট আইন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফের) পরামর্শে প্রণীত। সহজ শর্তে একশ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার অন্যতম শর্ত হিসেবে এ আইন তৈরি করা হয়। এরই মধ্যে ওই ঋণের পুরো টাকা পেয়েছে সরকার। এছাড়া, নতুন আইন বাস্তবায়নে সারাদেশের ভ্যাট অফিস অটোমেশনের জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকেও সাড়ে পাঁচশ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। এখন আইনটি বাস্তবায়ন না করতে পারলে দাতাদের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে সরকারকে।
এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন আইন বাস্তবায়ন হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে। অবশ্য ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে আইনের যেসব সংশোধনীর প্রস্তাব করেছে, সেসব প্রস্তাব এখন তারা পর্যালোচনা করছেন। নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করা না গেলে রাজস্ব আদায়ে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে, তা নিয়েও বিশ্লেষণ শুরু করেছেন এনবিআরের সদস্যরা।
নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন না করার দাবি জানিয়ে দোকান মালিক সমিতির ব্যানার এদিকে, দীর্ঘদিন ধরেই নতুন ভ্যাট আইনের হার ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যবসায়ীরা আপত্তি জানিয়ে আসছেন। তাদের দাবি, নতুন আইন অনেক নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেবে। এতে মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়বে। বাজেট ঘোষণার আগে ভ্যাট আইন সংশোধনে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ দিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। এছাড়া, এ আইন বাস্তবায়নের প্রতিবাদে এর মধ্যে সারাদেশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আন্দোলনের হুমকিও দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, রাজধানীর বিভিন্ন শপিং মলগুলোতে এই আইন যেন বাস্তবায়ন করা না হয়, তার দাবিতে মার্কেটে মার্কেটে ব্যানারও ঝুলিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির পক্ষ থেকে এই ব্যানারের প্রচার করেছে ঢাকা মহানগর দোকান মালিক সমিতি। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে এই ব্যানারে লেখা হয়েছে, ‘নতুন ভ্যাট আইন ভোক্তা ও ব্যবসাবান্ধব করে ২০১৯ সালে বাস্তবায়ন চাই। ব্যাংক হিসাবের ওপর অাবগারি শুল্ক প্রত্যাহার চাই।’
ব্যবসায়ীদের প্রবল আপত্তির মধ্যেও আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১ জুলাই ২০১৭ থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকরের ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী। তার ঘোষণা অনুযায়ী, নতুন আইনে নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মধ্যে গ্যাস-বিদ্যুৎ, রেস্তোরাঁর খাবার, আসবাব, রড, বোতলজাত পানি, সাবান, টুথপেস্ট, দেশি পোশাক, ফ্ল্যাটসহ বিভিন্ন পণ্য ও সেবার ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট বসবে। শুধু তাই নয়,নতুন আইনে ছোট-মাঝারি-বড় সব ক্ষেত্রে একই হারে (১৫%) ভ্যাট দিতে হবে। যদিও বিদ্যমান আইনে একাধিক স্তরে এর চেয়েও কম হারে ভ্যাট নেওয়া হয়। চলমান এসব সুবিধা বহাল রেখেই নতুন ভ্যাট আইন সংশোধন চান ব্যবসায়ীরা।
গত ১ জুন বাজেট ঘোষণায় অর্থমন্ত্রী নতুন ভ্যাট আইনের বাস্তবায়নের কথা বললে এ নিয়ে সারাদেশে সমালোচনার ঝড় বইছে। খোদ সরকারদলীয় প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপিরাও এই আইনের বিরোধিতা করছেন। কেউ কেউ অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করেছেন। দলের মধ্যেই পূর্ণ সমর্থন না থাকায় নির্বাচনের আগে এ আইন বাস্তবায়নের বিষয়ে ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না সরকার। আর অর্থমন্ত্রীও বলেছেন, ভ্যাট আইন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ছবি: নাসিরুল ইসলাম

আরও পড়ুন-

জনগণের করের টাকায় ঋণখেলাপিদের পুনর্বাসন!

ডিএনসিসির ২ হাজার ৩৮৪ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা

অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য জানাতে হবে আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগকে

/টিআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মাড় ফেলে ভাত রান্না হলে ‘১৫ ভাগ অপচয় হয়’
মাড় ফেলে ভাত রান্না হলে ‘১৫ ভাগ অপচয় হয়’
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ