X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

৫ বিলিয়ন ডলারের সফটওয়্যার রফতানি: ২০২১ সালের বদলে ২০২৪ কেন?

হিটলার এ. হালিম
০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৩:০০আপডেট : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৩:৪৫

সফটওয়্যার ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে সরকারের আইসিটি বিভাগ ঘোষণা দিয়েছিল, ‘২০২১ সালের টার্গেট ৫ বিলিয়ন ডলারের সফটওয়্যার রফতানি’। কিন্তু সেই টার্গেট পূরণ হচ্ছে না। টার্গেটের বছর পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৪ সালকে। দুই বছরের মধ্যে (২০১৯ সালের শুরুতে নতুন করে ভাবা হয়) টার্গেট পূরণ হওয়া সম্ভব হবে না বলে নতুন করে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।  চলতি বছরের করোনা মহামারি টার্গেট পূরণ না করতে পারার অন্যতম কারণ বলে বিবেচিত হওয়ায় খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ বছর করোনা না হলেও টার্গেট পূরণ করা সম্ভব হতো না।

প্রসঙ্গত, পাঁচ বিলিয়ন ডলার রফতানির টার্গেট ঘোষণার সময় আরেকটি ঘোষণাও দেওয়া হয়, ২০১৮ সালের মধ্যে এক বিলিয়ন ডলারের সফটওয়্যার রফতানি। ২০১৯ সালের শুরুতে সেই টার্গেট পূরণ হলেও পাঁচ বিলিয়ন ডলার আয়ের টার্গেট পিছিয়ে যায়। নতুন টার্গেট নির্ধারিত হয়েছে ২০২৪ সাল।

দেশের সফটওয়্যার ও সেবাপণ্য নির্মাতাদের সংগঠন বেসিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর সফটওয়্যার ও সেবাপণ্য রফতানির টার্গেট ছিল এক থেকে দেড় বিলিয়ন ডলার। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট মহামারি সেই লক্ষ্য পূরণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। লক্ষ্যের চেয়ে এবার রফতানি কম হবে। রফতানির প্রবাহ আগের ধারায় ফিরতে দুই বছর লেগে যেতে পারে বলে মনে করে বেসিস।

বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নতুন টার্গেট ২০২৪ হলেও আমরা আশাবাদী ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পাঁচ বিলিয়ন ডলারের টার্গেটে পৌঁছাতে। ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমাদের যেতে হবে না। তার আগেই আমরা পারবো।’ বেসিস সভাপতি বলেন, ‘এ বছর করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে সৃষ্ট লকডাউনের শুরুতে সফটওয়্যার রফতানি বন্ধ ছিল। বর্তমানে অল্প-অল্প করে রফতানি শুরু হয়েছে। রফতানি আগের ধারায় ফিরতে সময় লাগবে। অনেক কিছু আবার নতুন করে শুরু করতে হবে, পরিকল্পনাও করতে হবে।’  তিনি জানান, সফটওয়্যার রফতানিতে আর্থিক প্রণোদনা দেওয়াসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের কারণে সফটওয়্যার রফতানি বাড়ে। ফলে সহজেই ২০১৮ সালের টার্গেট পূরণ হয়েছে। 

বেসিস সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বের ৮০টির বেশি দেশে সফটওয়্যার রফতানি করে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি ইউরোপের অনেক দেশ বাংলাদেশ থেকে সফটওয়্যার ও সেবা পণ্য আমদানি করে। রফতানি হওয়া পণ্য ও সেবার মধ্যে প্রধানতম হচ্ছে—সফটওয়্যার, বিপিও (বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং), ওয়েবসাইট ডিজাইন, অ্যাপস, গেমস, ভিওআইপি অ্যাপ্লিকেশন, ডাটা-এন্ট্রি, গ্রাফিকস ডিজাইন, প্রি-প্রেস, ডিজিটাল ডিজাইন, সাপোর্ট সার্ভিস, কাস্টমাইজড অ্যাপ্লিকেশন তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সফটওয়্যার রফতানি বাড়ানোর জন্য জাপানে বাংলাদেশ ‘জাপান ডেস্ক’ স্থাপন করেছে। জাপানে সাফল্যের পরে যুক্তরাজ্য ও নেদারল্যান্ডসে ডেস্ক খুলেছে বাংলাদেশ। ইউরোপের অনেক দেশ বাংলাদেশ থেকে সফটওয়্যার আমদানি করে থাকে। নেদারল্যান্ডসে ডেস্ক খুলে সেসব দেশে নিজেদের বাজার আরও বড় করতে চায় বেসিস।

বেসিসের সাবেক সভাপতি শামীম আহসান বলেন, ‘সফটওয়্যার রফতানি বাড়ানোর জন্য আকর্ষণীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হয়।’ কিন্তু আমরা পাঁচ বিলিয়ন ডলারের রফতানি আয়ের জন্য কী উদ্যোগ নিয়েছি—প্রশ্ন করেন তিনি। ‘আমাদের কোথাও কোনও রোড শো নেই, কোনও দেশে অফিস নেই। অফিস থাকলে সংশ্লিষ্ট দেশে সেলস কনসালটেন্ট হায়ার করতে হয়, যারা তাদের দেশে আমাদের পণ্য বিক্রি করবে।’ পাঁচ বিলিয়ন ডলারের টার্গেট পূরণ করতে হলে কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে বলে শামীম আহসান পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘অন্তত বিশ্বের পাঁচটি দেশে আমাদের অফিস খুলতে হবে এবং ওইসব দেশের সেলস কনসালটেন্টদের হায়ার (নিয়োগ) করতে হবে, যারা আমাদের পণ্য তাদের দেশে বিক্রি করবে।’  

এদিকে নাম ও পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বেসিসের একজন সাবেক নেতা জানান, ২০১৮ সালের মধ্যে এক বিলিয়ন ডলারের সফটওয়্যার রফতানির টার্গেটই ছিল বিশাল। সেটা অর্জন করতেই ২০১৯ সালে চলে আসতে হয়েছে। সেখান থেকে মাত্র তিন বছরে (২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে) আরও চার বিলিয়ন ডলারের সফটওয়্যার রফতানি করা কোনোভাবেই সম্ভব হতো না। এটা বুঝতে পেরেই সংশ্লিষ্টরা টার্গেট নতুন করে নির্ধারণ করেছেন। সফটওয়্যার আন্তর্জাতিক বাজারে বিপণনের জন্য তিনি কোনও দৃশ্যমান উদ্যোগ দেখতে পান না বলে জানান। তিনি মনে করেন, পাঁচ বিলিয়ন ডলার আয় করতে হলে অন্তত ৫০ শতাংশ বিনিয়োগ করতে হবে। সেই হিসাবে আড়াই বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার কোনও আয়োজন দেখি না। এটা করতে হবে। বিভিন্ন পর্যায়ে বিনিয়োগ করা না হলে এ অর্জন কঠিন হয়ে যাবে। তিনি মনে করেন, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোরও (ইপিবি) এ ব্যাপারে অনেক দায়িত্ব রয়েছে। ইপিবি এ বিষয়ে সক্রিয় হলে কাজটা অনেকাংশে সহজ হয়ে যায়। তিনি বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেন, দূতাবাসগুলোর বাণিজ্যিক বিভাগ সফটওয়্যার রফতানির জন্য কাজ করতে পারে। এমনকি যেসব দেশে বাংলাদেশের সফটওয়্যার রফতানি হয় না, সেসব দেশে অবস্থিত দূতাবাসগুলোর মাধ্যমে উদ্যোগ নিলে সফটওয়্যার রফতানির কাজটা সহজ হয়ে যাবে।

/এপিএইচ/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
নাটোরে উপজেলা নির্বাচনরুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া