X
বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫
১৮ আষাঢ় ১৪৩২

স্বাভাবিক হয়ে আসছে ডলারের বাজার

গোলাম মওলা
১৮ আগস্ট ২০২২, ২৩:৫৯আপডেট : ১৮ আগস্ট ২০২২, ২৩:৫৯

কিছুদিন আগেও ডলারের যে সংকট ছিল, তা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসছে। রেমিট্যান্স বাড়ার পাশাপাশি আমদানি ব্যয় কমে যাওয়ার কারণে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে। শুধু তাই নয়, ডলারের বাজার ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নানামুখী উদ্যোগের সুফল দৃশ্যমান হচ্ছে।  হু হু করে বাড়তে থাকা মার্কিন ডলার এখন উল্টো পথে হাঁটছে। খোলা বাজারে প্রতি দিনই কমছে ডলারের দাম, বিপরীতে বাড়ছে টাকার মান।

গত সপ্তাহে কার্ব মার্কেট বা খোলা বাজারে নগদ ডলার ১২০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। গতকাল বুধবার ও আজ  বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) ডলার বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১১ টাকায়। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা বাজারে ডলারের দাম কমেছে ১০ টাকা।

রাজধানীর মতিঝিল, দিলকুশা ও গুলশান এলাকার একাধিক মানি চেঞ্জারের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা ১১০ টাকায় ডলার কিনে ১১২ টাকায় বিক্রি করছেন।

যদিও আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার কিনতে বর্তমানে খরচ করতে হচ্ছে ৯৫ টাকা। তবে বা‌ণি‌জ্যিক ব্যাংকগু‌লো‌তেও এখন ১০৬ থে‌কে ১০৮ টাকায় নগদ ডলার বি‌ক্রি হচ্ছে।

ধারণা করা হচ্ছে, আগামী সপ্তাহ থেকে আরও কমবে ডলারের চাহিদা। এতে করে খোলা বাজারে ডলারের দাম আরও  কমে আসবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি, বাজার স্বাভাবিক করতে। বাজারে ডলার ছাড়ার পাশাপাশি তদারকি বাড়ানো হয়েছে। যারা অনিয়ম করছে তাদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া আমদানি কমতে শুরু করেছে। রফতানির পাশাপাশি রেমিট্যান্সও বাড়ছে। যার ফলে ইতোমধ্যে বাজার স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।’ তিনি মনে করেন, শিগগিরই ডলারের সংকট কেটে যাবে।

চলতি মাসের শুরুতে খোলা বাজার থেকে অনেকেই ১২০ টাকা দরে ডলার কিনেছিলেন।

একাধিক মানি চেঞ্জারের কর্মকর্তা বলেছেন, ডলারের বাজারের চাঙ্গাভাব শেষ হয়ে গেছে। আগের তুলনায় চাহিদা কমে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার বেচাকেনায় লাভ বা মুনাফা করার সীমা বেঁধে দেওয়ায় অনেকেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। বিশেষ করে যারা ডলার মজুত করেছেন, তারা পড়বেন বিপাকে।

মতিঝিল, দিলকুশা এলাকার একজন ডলার ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গত বুধবার সকালে প্রতি ডলার ১০৯ টাকায় কিনে ১১০ টাকায় বিক্রি করেছেন। মঙ্গলাবার প্রতি ডলার ১১১ টাকায় কিনে ১১৩ টাকা থেকে ১১৪ টাকা বিক্রি করেছেন। রবিবার প্রতি ডলার ১১২ টাকায় কিনে ১১৫ টাকা বিক্রি করেছেন।

প্রসঙ্গত,  দেশে ডলারের সংকট কাটাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। আমদানিতে দেওয়া হয়েছে নানা শর্ত। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে দেওয়া হয়েছে নীতিগত ছাড়। এছাড়া ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ডলার কারসাজির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ধরতে চালাচ্ছে অভিযান। অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ছয়টি ব্যাংকের ট্রেজারি-প্রধানদের অপসারণ সংক্রান্ত নির্দেশনার পর ওই ছয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর এমডিদের বুধবার এ চিঠি দেওয়া হয়। এছাড়া ডলার বিক্রির অতিরিক্ত মুনাফা ব্যাংকের আয় খাতে নেওয়া যাবে না বলে সব ব্যাংককে নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম। ওই ছয় ব্যাংক হলো— ডাচ-বাংলা, সাউথইস্ট, প্রাইম, সিটি, ব্র্যাক ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। এদিকে ২০২১ সালের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে ডলারে অস্বাভাবিক মুনাফা করেছে— এমন আরও অন্তত ১০টি ব্যাংকের বিষয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এর বাইরে ব্যাংকগুলোর মতো মানি চেঞ্জারদের ক্ষেত্রেও ডলার বেচা-কেনায় ব্যবধান (স্প্রেড) নির্ধারণ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এক্ষেত্রে ব্যাংকের সঙ্গে মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবধান হবে সর্বোচ্চ ১ টাকা ৫০ পয়সা। ব্যাংক ডলার কিনে ১ টাকা লাভে বিক্রি করতে পারবে। বুধবার (১৭ আগস্ট) খোলা বাজারে বিদেশি মুদ্রা কেনাবেচার প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এর আগে গত ১০ মে’র নির্দেশনায় ডলারের সরবরাহ বাড়াতে ব্যাংক ও রফতানিকারকের ডলার ধারণের ক্ষমতা কমানো হয়েছে। রফতানি আয় আসার এক দিনের মধ্যে ডলার নগদায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, ডলারের দর নিয়ন্ত্রণের জন্য এক ব্যাংকের রফতানি আয় অন্য ব্যাংকে ভাঙানোর ওপর বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের দেড় মাসে (১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রায় ২০০ কোটি (২ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর মনিটরিং ও তদারকের সুফল দৃশ্যমান হচ্ছে।

ব্যাংকেও ডলারের মূল্য কমছে

বেসরকারি সিটি ব্যাংক মঙ্গলবার প্রতি ডলারের জন্য নিয়েছিল ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। বুধবার নিয়েছে ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা।

রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক গত কয়েক দিনের মতো বুধবারও ১০৪ টাকা দরে নগদ ডলার বিক্রি করেছে। জনতা ব্যাংক থেকে প্রতি ডলার কিনতে লেগেছে ১০৪ টাকা ২৫ পয়সা। বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংক বিক্রি করেছে ১০৭ টাকায়। এসআইবিএল নিয়েছে ১০৫ টাকা।

খোলা বাজারে গত সপ্তাহে ডলারের দর ১২০ টাকায় উঠেছিল। গত বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) তা কমে বিক্রি হয় ১১৯ টাকায়। এর পর থেকে টাকার বিপরীতে প্রতিদিনই কমছে ডলারের দর।

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
অবশেষে রিজার্ভে আইএমএফের লক্ষ্য পূরণ হলো
আরও ১১ ব্যাংকের সম্পদ যাচাই করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
আজ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ব্যাংক খোলা
সর্বশেষ খবর
নীরবে কাঁদেন আবু সাঈদের বাবা-মা, দেখতে চান ছেলে হত্যার বিচার
নীরবে কাঁদেন আবু সাঈদের বাবা-মা, দেখতে চান ছেলে হত্যার বিচার
ফিরে দেখা: ২ জুলাই ২০২৪
ফিরে দেখা: ২ জুলাই ২০২৪
টিভিতে আজকের খেলা (২ জুলাই, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (২ জুলাই, ২০২৫)
ক্লাব বিশ্বকাপে এমবাপ্পের অভিষেক, জুভেন্টাসকে হারিয়ে শেষ আটে রিয়াল
ক্লাব বিশ্বকাপে এমবাপ্পের অভিষেক, জুভেন্টাসকে হারিয়ে শেষ আটে রিয়াল
সর্বাধিক পঠিত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটি
যারা ফেসবুক লাল করেছিল, তাদের জীবন লাল করে দেবে আ.লীগ: পার্থ
যারা ফেসবুক লাল করেছিল, তাদের জীবন লাল করে দেবে আ.লীগ: পার্থ
বেসরকারি শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা যোগদানের দিন থেকে শুরু করতে হাইকোর্টের রুল
বেসরকারি শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা যোগদানের দিন থেকে শুরু করতে হাইকোর্টের রুল
যশোরে নির্মাণাধীন ভবনের বারান্দা ভেঙে দুই প্রকৌশলীসহ ৩ জনের মৃত্যু
যশোরে নির্মাণাধীন ভবনের বারান্দা ভেঙে দুই প্রকৌশলীসহ ৩ জনের মৃত্যু
এনবিআরের আরও ৫ শীর্ষ কর্মকর্তার দুর্নীতি অনুসন্ধান করছে দুদক
এনবিআরের আরও ৫ শীর্ষ কর্মকর্তার দুর্নীতি অনুসন্ধান করছে দুদক