X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ই-ক্যাবের সঙ্গে বাড়িওয়ালাদের কী সম্পর্ক

আতিক হাসান শুভ
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২৩:৫৯আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২৩:৫৯

সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) অনুষ্ঠিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় বাড়িওয়ালাদের আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ সংগ্রহের প্রয়োজনীয়তা বাতিলের প্রস্তাব দেয় ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)। কিন্তু ই-ক্যাবের এমন প্রস্তাবের সরাসরি  বিরোধিতা করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাড়িওয়ালাদের আয়কর রিটার্ন দেওয়ার আইনটি দুই বছর আগে করা হয়েছে। সরকার এখন আর চুপ করে বসে থাকবে না। মহানগরী এলাকার বাড়ির মালিকদের তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। এখন যেসব বাড়িওয়ালা আয়কর রিটার্ন দেন না, তাদের খুঁজে বের করতে বিশেষ অভিযান চালানো হবে। রিটার্ন দেওয়া এখন সহজ হয়েছে। অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। এরপর বাড়িওয়ালাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি। এত কিছুর পরেও বাড়ির মালিকদের রিটার্ন জমা না দেওয়ার কোনও কারণ নেই।’

বাড়িওয়ালাদের আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ সংগ্রহের প্রয়োজনীয়তা বাতিল হলে ই-ক্যাবের লাভ কী?  ই-ক্যাব এনবিআরকে কেন এই প্রস্তাব দিয়েছে? ই-ক্যাবের সঙ্গে বাড়িওয়ালাদের কী সম্পর্ক? এমন অসংখ্য প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সাধারণ মানুষের মনে। এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে কথা হয় ই-ক্যাবের দায়িত্বশীল বেশ কয়েকজনের সঙ্গে। একইসঙ্গে কথা হয় ই-কমার্সের উদ্যোক্তাদের সঙ্গেও। জানা যায়, এই প্রস্তাবের মূল কারণ।

বাড়িওয়ালাদের আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ সংগ্রহের প্রয়োজনীয়তা বাতিলের প্রস্তাব দেওয়া কারণ কী— জানতে চাইলে ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আবদুল ওয়াহেদ তমাল এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসিমা আক্তার নিশা দুজনেই প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালকের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। এ বিষয়ে নির্বাহী পরিচালক সবচেয়ে ভালো বলতে পারবেন বলেও জানান নাসিমা আক্তার নিশা।

পরে ই–ক্যাবের নির্বাহী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম শোভন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাজস্ব বোর্ড নিয়ম করেছে— বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের বাড়িওয়ালার আয়কর রিটার্ন দাখিলের কপি সংগ্রহ করে এনবিআরে জমা দিতে হবে। কিন্তু ৮০ শতাংশ স্থাপনার মালিক এ বিষয়ে সহযোগিতা করেন না। অনেক অনুরোধ করে ৩০ শতাংশের কাছ থেকে রিটার্ন দাখিলের কপি সংগ্রহ করা গেলেও বাকি ৭০ ভাগ মালিক সরাসরি বলে দেন যে, তারা আয়কর রিটার্নের কপি দেবেন না। বারবার চাইলে মালিকরা তাদের স্থাপনা ছেড়ে দিতে বলেন। রাজস্ব বোর্ডের নিয়মটি ব্যবসাকে আরও কঠিন করেছে। এসব কারণে আমরা নিয়মটি বাতিলের প্রস্তাব করছি।’

জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, ‘অনেক বাড়িওয়ালা আয়কর রিটার্ন দেন। কিন্তু সেই তথ্য অন্যকে দিতে চান না। আবার অনেক বাড়িওয়ালা আয়কর রিটার্ন দেন না। ফলে বাড়িওয়ালাদের কাছে রিটার্ন দাখিলের কাগজ চাইলে তারা অস্বস্তিতে ভোগেন। কারণ, তারা ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করতে চান না। এমনকি অনেকে বাসা ভাড়া দিতে চান না। এজন্য ই-ক্যাব থেকে প্রস্তাব করা হয়েছে— বাড়িওয়ালার আয়কর রিটার্ন দাখিলের কপি সংগ্রহ করার দায়বদ্ধতা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ওপর না দিয়ে এনবিআর নিজে করুক। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনে বাড়িওয়ালার নাম ও ঠিকানা এনবিআরকে সরবরাহ করবে।’

আদতে একাজে ই-ক্যাবের কোনও লাভ আছে কিনা, বা বাড়িওয়ালাদের সুবিধার্থে ই-ক্যাব এ ধরনের প্রস্তাব দিয়েছে কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে বিটুবি ই-কমার্সের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও আশিকুল আলম খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো সবসময় যে কমার্শিয়াল প্লেসে হবে, তা তো না। অনেক ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান আছে, ফেসবুক-কেন্দ্রিক, তারা হয়তো বাসা থেকেই পরিচালনা করছে। তারা যেখানে ভাড়া থাকে, সেই বাড়িওয়ালার কাছে আয়কর রিটার্নের কপি যদি চায়, বাস্তবিক অর্থে পাবে না। আপনি স্বাভাবিকভাবে চিন্তা করেন, আপনি যে বাসায় ভাড়া থাকেন, সে বাসার বাড়ির মালিককে যদি বলেন— আপনার (বাড়িওয়ালা) আয়কর রিটার্নটা আমাকে দিতে হবে। তাহলে সে কিন্তু কমফোর্ট জোনে থাকবে না। বলবে যে, না-ভাই, আপনার এখানে থাকার দরকার নেই। আপনি অন্য কোথাও চলে যান।’

আশিকুল আলম আরও বলেন, ‘এছাড়া বাড়িওয়ালারা কী করে না করে ভাড়াটিয়াদের পক্ষে সে ব্যাপারে খুব বেশি তদারকি করার সুযোগ নেই। ফলে যদি কোনও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কোনও একটা জায়গা ভাড়া নিতে চায় ‌ এবং ভাড়া নেওয়ার পর সে বাড়িওয়ালাকে বলে— কমপ্লায়েন্সের জন্য আপনার আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। তারপর দাখিলের কপিটি আমাকে দিতে হবে। তাহলে তারা কিন্তু সেটা দিতে চাইবে না, বা কমফোর্ট জোনে থাকবে না। কারণ, অনেক সময় তারাও ঠিকভাবে আয়কর জমা দিচ্ছে না।’

এই ই-কমার্স উদ্যোক্তা  আরও বলেন, ‘এখানে সরকারের ইনটেশন খুবই পরিষ্কার। তারা স্বচ্ছতা তৈরি করতে চাচ্ছে। কিন্তু একটা উদীয়মান প্রতিষ্ঠানের কথা যদি ভাবেন, তাহলে এটা বিজনেসের জন্য একটা প্রতিবন্ধকতা। যেহেতু সে বাসা ভাড়া নেবে, আর তখন যদি তাকে বাধ্যতামূলক বাড়িওয়ালার আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ সংগ্রহ করতে হয়, সেটা সম্ভব না।’

তিনি জানান,  তবে আয়করের টিন (টিআইএন) সার্টিফিকেট ভাড়াটিয়ার পক্ষে সংগ্রহ সম্ভব হতে পারে। যে কমপ্লায়েন্সের জন্য আপনার এনআইডি এবং টিন সার্টিফিকেট লাগবে। টিন সার্টিফিকেট যদি থাকে, তাহলে ওই টিন-ধারী রিটার্ন দিয়েছে নাকি দেয়নি— সে ডকুমেন্টস আয়কর বিভাগের কাছে আগে থেকে থাকার কথা। ফলে রিটার্ন জমা দেওয়ার বিষয়টি জানতে চাওয়া ভাড়াটিয়ার জন্য শুভকর নয়। বরং বাড়িওয়ালা এটা ভাড়াটিয়ার কাছে চাইতে পারে।

 

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
ভ্যাটেই মিলবে রাজস্ব, অথচ ভ্যাট বাড়াতে অনীহা
তামাক কর বাস্তবায়নে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ তরুণের অকালমৃত্যু প্রতিরোধ সম্ভব
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
সর্বশেষ খবর
বংশালে ছাদ থেকে পড়ে শিশুর মৃত্যু
বংশালে ছাদ থেকে পড়ে শিশুর মৃত্যু
প্রেসিডেনশিয়াল ডিবেটে মুখোমুখি হবেন বাইডেন-ট্রাম্প, যা জানা গেলো
প্রেসিডেনশিয়াল ডিবেটে মুখোমুখি হবেন বাইডেন-ট্রাম্প, যা জানা গেলো
পুঁজিবাজার নিয়ে গুজব ছড়িয়ে যেভাবে চলতো কারসাজি
পুঁজিবাজার নিয়ে গুজব ছড়িয়ে যেভাবে চলতো কারসাজি
পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি অভিযানে গ্রেফতার ২০
পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি অভিযানে গ্রেফতার ২০
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
তাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম