X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার রেষারেষিতে ডুবছে শেয়ার বাজার

গোলাম মওলা
০৫ নভেম্বর ২০২১, ২০:৩০আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০২১, ১৮:২৭

শেয়ার বাজারের দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার মাঝে বিদ্যমান দূরত্ব সন্দেহ বাড়িয়েছে বিনিয়োগকারীদের। এতে বাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকার মূলধন হারিয়ে যাচ্ছে। গত সপ্তাহেও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বাজার মূলধন হারিয়েছে আরও  ১২ হাজার কোটি টাকা। আগের তিন সপ্তাহে ডিএসই’র বাজার মূলধন কমে ১৮ হাজার কোটি টাকা। এর ফলে টানা চার সপ্তাহের দরপতনে ৩০ হাজার কোটি টাকা মূলধন হারালো ডিএসই।

বাংলাদেশ ব্যাংক শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত বেসরকারি ব্যাংক ওয়ান ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদন সম্প্রতি পরিবর্তনের নির্দেশ দিলে এর সরাসরি বিরোধিতা করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।এছাড়া গত আগস্ট মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি নির্দেশনাকে ঘিরেও দুই সংস্থার মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক শেয়ার বাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ নিয়ে প্রতিদিনের প্রতিবেদন চেয়ে চিঠি দেয়। সেই সঙ্গে শেয়ার বাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ খতিয়ে দেখতে ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউস পরিদর্শন শুরু করে। এতে বিএসইসি’র সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরোধ দেখা দেয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার পর বিএসইসি শেয়ারের বিপরীতে সর্বোচ্চ ঋণসীমার আওতা বাড়িয়ে দেয়। শুধু তাই নয়, দুই সংস্থার মধ্যে সর্বশেষ বিপরীতমুখী অবস্থান দেখা গেছে— শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির অবন্টিত লভ্যাংশের ইস্যুতে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, অদাবিকৃত লভ্যাংশের অর্থ শেয়ার বাজারে স্থিতিশীলতায় গঠিত তহবিলে যাওয়ার কোনও সুযোগ নেই। যেসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে এ ধরনের অর্থ তহবিলে জমা দিয়েছে, তা-ও ফেরত আনতে হবে।

অপরদিকে শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি বলছে, এ টাকা বিনিয়োগকারীর। শেয়ার বাজারের তহবিলেই এ অর্থ স্থানান্তর হবে। এভাবে দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার দূরত্বের কারণে সন্দেহ বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে, যার ফলে প্রায় প্রতিদিনই শেয়ার বাজারে দরপতন হচ্ছে।

এদিকে গেলো সপ্তাহেও শেয়ার বাজার মন্দার মধ্যে দিয়ে পার করেছে। এতে  ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বাজার মূলধন প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা কমেছে। বড় অঙ্কের মূলধন হারানোর পাশপাশি কমেছে সবকটি মূল্য সূচক। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের গতি। আগের তিন সপ্তাহ মন্দার মধ্য দিয়েই পার করে দেশের শেয়ার বাজার। আগের তিন সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছিল ১৮ হাজার কোটি টাকা। ফলে টানা চার সপ্তাহে ৩০ হাজার কোটি টাকা মূলধন হারালো ডিএসই।

গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৫১ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা, যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৫ লাখ ৬৩ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ, গেলো সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১১ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৯০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৭০টির। আর ১৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৫৫ দশমিক ৬৪ পয়েন্ট। আগের তিন সপ্তাহে সূচকটি কমেছিল ২৭৯ পয়েন্ট। অর্থাৎ, টানা চার সপ্তাহের পতনে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক কমেছে ৪৩৪ পয়েন্ট।

প্রধান মূল্য সূচকের পাশাপাশি গেলো সপ্তাহে কমেছে ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচকও। গত সপ্তাহজুড়ে সূচকটি কমেছে ১৭ দশমিক ২১ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমেছিল ৩৮ দশমিক ৭৭ পয়েন্ট। তার আগের দুই সপ্তাহে কমেছিল ৪৯ দশমিক ২৭ পয়েন্ট এবং ২৮ দশমিক ৩৫ পয়েন্ট।

বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচকও টানা পতনের মধ্যে রয়েছে। গত সপ্তাহজুড়ে এই সূচকটি কমেছে ৩৭ দশমিক ৬৩ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমেছিল ৬০ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট। তার আগের দুই সপ্তাহে কমেছিল ১৯ দশমিক ৮০ পয়েন্ট এবং ৪৮ দশমিক ২৫ পয়েন্ট।

বাজারের তথ্য বলছে, গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ২৮৬ কোটি ৮ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৫১০ কোটি ২ লাখ টাকা। অর্থাৎ, প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ২২৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। অবশ্য গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৬ হাজার ৪৩০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৭ হাজার ৫৫০ কোটি ১৩ লাখ টাকা। সেই হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে ১ হাজার ১১৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর আমানতকারীদের স্বার্থ দেখা বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। এই দায়িত্বের অংশ হিসেবে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নির্দেশনা জারি করা হয়, যা ব্যাংকগুলো মেনে চলে। এক্ষেত্রে  সরকারের অন্য কোনও সংস্থা বাধা হয়ে দাঁড়ানোর কথা নয়।’

এ বিষয়ে লন্ডনে অবস্থানরত বিএসইসির মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

 

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
বিদ্যুৎ ও গ্যাস কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র ছাড়া ঋণ মিলবে না
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
সর্বশেষ খবর
নির্দেশের পরও হল ত্যাগ করছেন না চুয়েট শিক্ষার্থীরা, বাসে আগুন
নির্দেশের পরও হল ত্যাগ করছেন না চুয়েট শিক্ষার্থীরা, বাসে আগুন
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা