X
মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
৩০ বৈশাখ ১৪৩২

‘ভালো’ শেয়ার কিনে আটকে গেছেন অনেকে

গোলাম মওলা
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৩:২৫আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৫:৩৫

শেয়ার বাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, এসিআই বা স্কয়ার ফার্মা সবচেয়ে ভালো কোম্পানি। কিন্তু দামি এই কোম্পানিগুলোর শেয়ার এখন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধারাবাহিকভাবে কমতে কমতে এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম এখন সর্বনিম্ন মূল্যে। ফ্লোর প্রাইসের কারণে এর নিচে কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম কমার সুযোগ নেই। ফলে অধিকাংশ বিনিয়োগকারী শেয়ার আর বিক্রি করতে পারছেন না।

মূল সমস্যা ফ্লোর প্রাইস

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকে ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করার কারণে ফেঁসে গেছেন অনেক বিনিয়োগকারী।

কেন ভালো শেয়ারগুলোর লেনদেন হচ্ছে না?

সাধারণত যে শেয়ারের দাম কমে বিনিয়োগকারীরা সেটি কেনে। শেয়ারের দাম বাড়লে বা লাভ হলে বিক্রি করে দেয়। কিন্তু বৈশ্বিক পরিস্থিতি এবং ডলার সংকটের কারণে কয়েক মাস ধরে এই কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম বাড়ছে না। আবার ফ্লোর প্রাইসের কারণে দাম কমাও সম্ভব নয়।

ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বা এসিআই’র মতো বেশি দামের শেয়ার ফ্লোর প্রাইসের আওতায় আসায় এই বিপত্তি দেখা দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আহমেদ রশীদ লালী বলেন, ‘ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বা এসিআই বা স্কয়ার ফার্মা দামি শেয়ারগুলোর অন্যতম। ফ্লোর প্রাইসের কারণে দামি এসব শেয়ার কিনে বিপুল পরিমাণ টাকা আটকিয়ে রাখার মতো ক্রেতা নেই।’

তিনি উল্লেখ করেন, ‘এখন যদি কেউ দামি এই শেয়ারগুলো কেনে, আগামী এক মাসেও বিক্রি করতে পারবে না। তাহলে কেন কিনবে।’

তাহলে ফ্লোর প্রাইস কেন তুলে দেওয়া হচ্ছে না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখন বাজার ডাউন। ফলে ফ্লোর প্রাইস তুলে নিলে ফোর্স সেল বাড়বে। সেটা আরেকটা বিপদের কারণ। এ কারণে ফ্লোর প্রাইস তোলা সম্ভব হচ্ছে না।’

এদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ফোর্স সেল সামাল দেওয়ার জন্যই ফ্লোর প্রাইস রাখা হয়েছে। অর্থাৎ শেয়ার বাজারের স্বাস্থ্য ভালো হলে তবেই ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হবে। ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেওয়ার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হতাশ বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। ফ্লোর প্রাইস নিশ্চয়তা দেয়, শেয়ার দর এর নিচে আর নামবে না। এটি দৃশ্যত বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য। ফলে সূচকও একটি নির্দিষ্ট জায়গায় আটকে যায়।

যদিও শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট ও বিশ্লেষকরা বলছেন, ফ্লোর প্রাইসের কারণে একদিকে শেয়ার বাজারের স্বাভাবিকতা নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে কারসজি চক্র এর সুবিধা নিচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে কারসাজিচক্রের বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) শক্ত কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

ডিএসই’র এক সদস্য জানান, বৈশ্বিক পরিস্থিতি এবং ডলার সংকটও শেয়ার বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ফ্লোর প্রাইসের কারণে অধিকাংশ বিনিয়োগকারীর টাকা আটকে গেছে। শেয়ার বিক্রি করতে না পারায় তারা এখন নতুন বিনিয়োগ করতে পারছেন না। দামি শেয়ারগুলোর দাম কমে ফ্লোর প্রাইসে চলে এসেছে। পরে আর ফ্লোর প্রাইসের ওপরে ওঠেনি। ফ্লোর প্রাইসে প্রতিদিন লাখ লাখ শেয়ার বিক্রির আদেশ আসলেও ক্রেতা নেই।

বাজারে চিত্র বলছে, অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের লেনদেন হচ্ছে না। তথ্যমতে, এই বাজারের লেনদেন একেবারেই তলানিতে নেমে এসেছে, সূচক পড়ছেই। এতে সবার মধ্যে ক্ষোভ-হতাশা বাড়ছে।

বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে মানুষ পুঁজিবাজার থেকে একেবারেই মুখ ফিরিয়ে নেবে।

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বুধবার লেনদেন হয়েছে মাত্র ২৫৭ কোটি টাকার শেয়ার। ২০০৭ সালেও দেশের পুঁজিবাজারে গড়ে ২০০ কোটি টাকা লেনদেন হতো। লেনদেনের হিসাব করলে বাজার ফিরে গেছে ১৬ বছর আগের অবস্থানে।

এ প্রসঙ্গে ডিএসই’র সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, ‘এভাবে চলতে থাকলে বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজার বিমুখ হবেন।’

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘কমিশন ভালো কিছু করতে পারে না অথচ মার্কেটে ইন্টারফেয়ার করছে। তারা কেন ফ্লোর প্রাইস দিয়েছে? সূচক পড়ে গেলে তার জন্য কমিশন দায়ী নয়, সেটা ডিমান্ড-সাপ্লাইয়ের বিষয়। সূচকের পড়তির বিষয়ে কমিশনের এত দুশ্চিন্তা কেন? এখন তো বাজার অচল।’

তার কথায়, ‘ফ্লোর প্রাইস তুলে দিলে সব ঠিক হয়ে যাবে। টার্নওভার বেড়ে যাবে। অনেকে লোকসান দিয়েও শেয়ার বেচতে রাজি আছে। অনেক কোম্পানির আয় খারাপ হয়েছে। সেগুলোর দর নিচে যাবে না? কিন্তু ফ্লোর প্রাইসের জন্য আটকে আছে। কেনার লোক নেই।’

বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বিষয়গুলোর ওপর নজর রাখছি।’ তার ধারণা এখন ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দিলে অনেক ফোর্সড সেল হয়ে যাবে। ফোর্সড সেল কোনোভাবে বন্ধ করার রাস্তা খুঁজছেন বলেও জানান তিনি।

/আরকে/আরআইজে/
সম্পর্কিত
আগামী দুই শনিবার খোলা থাকবে ডিএসই, ১০ দিনের ছুটি পুঁজিবাজারে
শেয়ার মার্কেট সংস্কারে বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ আনার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
সালমান এফ রহমানের শেয়ার অবরুদ্ধ
সর্বশেষ খবর
নটর ডেম কলেজের আরেক শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার
নটর ডেম কলেজের আরেক শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার
নৌ পথে ঈদযাত্রা ও পশুবাহী নৌযান নিরাপত্তায় কাজ করছে পুলিশ: অতিরিক্ত আইজিপি
নৌ পথে ঈদযাত্রা ও পশুবাহী নৌযান নিরাপত্তায় কাজ করছে পুলিশ: অতিরিক্ত আইজিপি
থাইল্যান্ডে গেছেন মির্জা ফখরুল
থাইল্যান্ডে গেছেন মির্জা ফখরুল
যুক্তরাজ্যের নতুন অভিবাসন নীতির তীব্র সমালোচনা: নার্স, বিশ্ববিদ্যালয় ও এমপিদের শঙ্কা
যুক্তরাজ্যের নতুন অভিবাসন নীতির তীব্র সমালোচনা: নার্স, বিশ্ববিদ্যালয় ও এমপিদের শঙ্কা
সর্বাধিক পঠিত
পররাষ্ট্র সচিবের অফিসার্স ক্লাবের সদস্য পদ স্থগিত
পররাষ্ট্র সচিবের অফিসার্স ক্লাবের সদস্য পদ স্থগিত
আসন্ন বাজেটে নতুন কী থাকছে
আসন্ন বাজেটে নতুন কী থাকছে
আ.লীগ-ছাত্রলীগের ২৬ নেতার আত্মসমর্পণ
আ.লীগ-ছাত্রলীগের ২৬ নেতার আত্মসমর্পণ
রংপুরের হাসপাতাল নেপাল ও ভুটানের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে: প্রধান উপদেষ্টা
রংপুরের হাসপাতাল নেপাল ও ভুটানের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে: প্রধান উপদেষ্টা
পাকিস্তানে ভারত হামলা করলে সহায়তা করবে বালুচ লিবারেশন আর্মি
পাকিস্তানে ভারত হামলা করলে সহায়তা করবে বালুচ লিবারেশন আর্মি