X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

লজ্জিত দিহানের পরিবার, দেয়নি আইনজীবীও

শাহরিয়ার হাসান
০৯ জানুয়ারি ২০২১, ২২:০৫আপডেট : ০৯ জানুয়ারি ২০২১, ২২:৪৪

রাজধানীর মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেলের পড়া শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত তানভীর ইফতেখার দিহান ঘটনার পরই মেঝো ভাই নিলয়ের সঙ্গে তিনবার ফোনে কথা বলেছিল। সেটাই দিহানের সঙ্গে তার পরিবারের শেষ কথা। এরপর থানা, আদালত কোথাও যাননি তার পরিবারের সদস্যরা। দিহানের পক্ষে ছিল না কোনও আইনজীবীও। পরিবারের সদস্যরা বলছেন, এ ঘটনায় তারা সবাই লজ্জিত। বিচারে যদি প্রমাণ হয় দিহান অপরাধী, যা শাস্তি হবে তারা মেনে নেবেন। শনিবার (৯ জানুয়ারি) দুপুরে বাংলা ট্রিবিউনকে এসব কথা বলেন ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত ফারদিন দিহানের পরিবার।

কলাবাগানের লেক সার্কাস এলাকার ৬ তলা ওই বাড়িটির দিকে অনেকেরই কৌতূহলী চোখ। বাড়িটির দ্বিতীয় তলায় বসবাস করেন আবদুল রউফ সরকার। ২০০৮ সালে জেলা রেজিস্টার থেকে অবসর নিয়ে ৩০ লাখ টাকা দিয়ে এই বাসা কেনেন। গ্রামের বাড়ি রাজশাহীতে হলেও তিন ছেলে নিয়ে এখানেই বসবাস করেন তিনি।

লজ্জিত দিহানের পরিবার, দেয়নি আইনজীবীও

বড় ছেলে আরিফ ইফতেখার সুপ্ত রাজশাহীতে ব্যবসা করেন। পরিবার নিয়ে সেখানেই থাকেন তিনি। মেঝো ছেলে ঢাকাতেই একটি বেসরকারি ব্যাংকে কাজ করেন। আর ছোট ছেলে এই দিহান। ম্যাপল লিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থেকে 'ও' এবং  'এ' লেভেল শেষ করে জিইডি’র প্রস্তুতি নিচ্ছিল সে। করোনার প্রকোপ শুরুর পর থেকে রাজশাহীতেই থাকেন আব্দুর রউফ। চার বেডরুমের এই বাসাতে দুই ছেলেকে নিয়ে নিয়মিত থাকেন মা সানজিদা।  দিহানকে নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন ছিল তাদের। করোনা না হলে গত বছরই দেশের বাইরে চলে যেতো দুই ভাই। পরিবারের পক্ষ থেকেও  চলছিল এমন প্রস্তুতি।

ধর্ষণে অভিযুক্ত দিহানের পরিবার বলছে, আইন আছে, মেডিকেলের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট আছে, যদি দিহান দোষ করে থাকে তার বিচার হোক। সে যদি অপরাধী হয় তার ফাঁসি হোক, সেটা আমরাও চাই। আমরা ধরেই নিয়েছি সে অপরাধী, তাই আসামিপক্ষ থেকে কোনও আইনজীবীও রাখিনি। আমরা আসলে লজ্জিত। লজ্জিত কারণ আমরা এ ঘটনার কিছুই জানি না।

দিহানের ভাই নিলয় সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ও যে মেয়েটার সঙ্গে প্রেম করতো গত দুদিনে আমরা তার বন্ধু-বান্ধবীদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি। এর আগে শুধু জানতাম, ও প্রেম করে। তবে কার সঙ্গে করে সে বিষয়টা জানতাম না।

ঘটনার দিনের বর্ণনায় পরিবার যা বলছে

দিহানের মেঝো ভাই নিলয় সরকার বলেন, সকালে উঠে অফিসে চলে গিয়েছি। বগুড়াতে আমার নানা অসুস্থ, মা সেদিন সকালে নানাকে দেখতে বাড়ি থেকে বের হয়েছেন। আমার এক চাচা আবার ওইদিনই মারা যান। রাজশাহীতে জানাজা হয়েছে। আমার বাবা সেখানে ছিলেন। বাসা সেদিন একদম ফাঁকা ছিল। হঠাৎ দুপুর ১টা ২৫ মিনিটের দিকে দিহান আমাকে ফোন দিয়ে কাঁদো কাঁদো স্বরে কথা বলে। জীবনে ওকে আমি কখনও কান্না করতে দেখিনি। ফোন দিয়ে বলে, ‘ভাইয়া বাসায় বান্ধবীকে নিয়ে এসেছিলাম। অজ্ঞান হয়ে গেছে। হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি। তুমি আসো, তুমি ছাড়া আমাকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।’

দিহানের ভাই বলেন, আমি ভয় পেয়ে যাই। তখনই আমার কর্মস্থল থেকে বের হয়ে এসেছি।  দিহান বারবার ফোন দিচ্ছে ‘ভাইয়া তুমি দ্রুত আসো।’ পরে দুপুর ১টা ৫০-এর দিকে আবার ফোন করে। তখন বলে, ‘ভাইয়া ও তো মারা গেছে’। তখন আমি বলি, ‘কে মারা গেল ঠিকঠাক মতো বলো’। দিহান বলে, ‘তুমি হাসপাতালে চলে আসো দ্রুত।’

নিলয় বলেন, আমি আইন অনুযায়ী বিচার চাই। আমরা যতটুকু মনে করি, এটা ধর্ষণ না। যদি আমার ভাই ধর্ষণ করতো, সে কখনও আমাকে ডাকতো না।

দিহানের মা সানজিদা সরকার বলেন, বিচারে যদি প্রমাণ হয় দিহান আসামি, যা শাস্তি হবে আমরা মেনে নেবো। কিন্তু আপনারা আমাদের পরিবারকে এভাবে অপমান করতে পারেন না। আমার নিজের সম্পর্কেও অনেক পত্রপত্রিকা বাজে মন্তব্য করছে। এভাবে বলা ঠিক না। আমাদের সঙ্গে একটা মানুষ দেখা করতে আসেনি। আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তারাও কথা বলছেন না। কেউ দেখাও করছে না। মিডিয়া আমাদের পুরো পরিবারকে দোষ দিচ্ছে। এখানে আমাদের পরিবার কিভাবে অপরাধ করলো?

লজ্জিত দিহানের পরিবার, দেয়নি আইনজীবীও

ভিকটিমের পরিবার কী বলছে

ভিকটিমের মা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমার দুই মেয়ে। বড় মেয়ে ধানমন্ডি মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’লেভেলে পড়াশোনা করতো। তবে কোচিং করে লালমাটিয়াতে। সেদিন আমি সকালে অফিসে যাই। বেলা ১১টায় দিকে সে ফোন করে জানায়, কিছু নোট আনতে বাসার বাইরে যাবে। তারপর দুপুর ১টা ১৮ মিনিটে আমার মেয়ের ফোন থেকে একটা কল আসে। দিহান পরিচয় দিয়ে এক ছেলে বলে, ‘আন্টি আপনার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি। পরে হাসপাতালে গিয়ে দেখি চার ছেলে বসে আছে।’

নির্যাতিত কিশোরীর বাসার গার্ড সোলায়মান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ওইদিন আমার ডিউটি ছিল। ঠিক ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে মেয়েটা বের হয়। আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম বাহিরে। দেখি সে হাঁটতে হাঁটতে চলে যাচ্ছে।

কিশোরীর চাচাতো ভাই নাজমুল বলেন, আমি যতটুকু শুনেছি কোচিংয়ের কারো মাধ্যমে পরিচয় হয়েছে ছেলেটার সঙ্গে। পরে ফেসবুকে তাদের কথা হতো। তারপর সম্পর্ক। তবে মেয়েটা ছোট তাকে ফুঁসলিয়ে বাড়িতে নিয়ে গেছে ছেলেটা। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।

আরও পড়ুন

কে এই ফারদিন দিহান?

কলাবাগানে কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যা: দিহানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

ধর্ষণের কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই মেয়েটির মৃত্যু হয়েছে

ধর্ষণকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে মেয়েটিকে হাসপাতালে নেয় দিহান

কলাবাগানে ধর্ষণের পর হত্যা মামলার আসামি দিহান আদালতে

কলাবাগানে কিশোরী হত্যা, গ্রেফতার ৩

রাজধানীতে জন্মদিনে ডেকে কিশোরীকে নির্যাতনের পর হত্যার অভিযোগ

/এমআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!