X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রমিক ছাঁটাই নয়, প্রয়োজনে লে অফ

মিতি সানজানা
০১ মে ২০২০, ১৪:৩২আপডেট : ০১ মে ২০২০, ১৪:৩৪

মিতি সানজানা সমগ্র বাংলাদেশে চলছে অঘোষিত লকডাউন। জীবনের ঝুঁকি এড়াতে পৃথিবীব্যাপী সকলকে ঘরের ভেতরে অবস্থান করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ঘরে থাকার এবং তা কার্যকর করতে রাস্তায় মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ ও সেনা সদস্যদের। বিশ্বের আক্রান্ত প্রায় সব দেশ এখন করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে পুরো দেশ লকডাউন রেখে চেষ্টা করে যাচ্ছে। বিভিন্ন মেয়াদে এই লকডাউন বর্ধিত করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে শ্রমজীবী মানুষেরা নিদারুণ কষ্ট আর নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন। এতে করে যেমন বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্যই ক্ষতির মুখে পড়ছে তাই নয়, প্রায় অর্ধকোটি পোশাক শ্রমিকের পথে বসার উপক্রম হয়েছে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে শ্রমিকদের অধিকার সংরক্ষণে দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করা হয়েছে। সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদে এ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট বর্ণনা প্রদান করা হয়েছে। বাংলাদেশ সংবিধান অনুচ্ছেদ ১৪ অনুযায়ী রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হবে মেহনতী মানুষকে অর্থাৎ কৃষক ও শ্রমিকের এবং জনগণের অনগ্রসর অংশগুলোকে সকল প্রকার শোষণ থেকে মুক্তিদান করা। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা দেখতে পারছি অনেক প্রতিষ্ঠান শ্রমিক ছাঁটাই করছে।

এই অমানবিক সিদ্ধান্তে অসহায় শ্রমিকরা নিজের পেটের দায়ে রুটি রুজি হারানোর ভয়ে পথে নেমে আসছেন প্রতিবাদ করতে। সমগ্র জাতি যখন ঘরের ভেতর অবস্থান করছে, সে সময় এসব অসহায় মানুষকে পেটের দায়ে পথে নামতে হচ্ছে। শতভাগ রফতানিমুখী গার্মেন্টগুলো অনেক সময় দু’ধরনের রেজিস্ট্রার মেইনটেন করে থাকে। বিদেশি বায়ারদের দেখানোর জন্য সেখানে শ্রমিকদের বেতনভাতা, ক্ষতিপূরণ ইত্যাদি আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী পরিশোধিত দেখানো হয়। শ্রমিকরা যখনই নিজেদের ন্যায্য পাওনা বুঝে নিতে চান, তখনই মালিকপক্ষের পেটোয়া বাহিনীর আক্রমণ, রক্তচক্ষুর শাসানি এমনকি ছাঁটাই করা শুরু হয়ে যায়। আমাদের পোশাক শিল্প বিকাশে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে সস্তা শ্রমবাজার। বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি পোশাক শিল্প শ্রমিকরা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে অসামান্য অবদান রেখে আসছেন।  




এই বিধ্বংসী মহামারির সময়ে সমগ্র জাতি আজ দিশাহারা ও দিশাহীন। অনেক কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই করা হচ্ছে কোনও ধরনের ক্ষতিপূরণ ছাড়া। অনেক প্রতিষ্ঠান আইনের ধারা প্রয়োগ করে অমানবিকভাবে শ্রমিক ছাঁটাই করছে। নিজেদের সুবিধামতো আইনের প্রয়োগ করছে। এই চরম দুঃসময়ে খেটে খাওয়া মানুষের প্রতি মানবিক দায়িত্ববোধটুকু থাকা প্রয়োজন।
এরকম একটা ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে আমাদের শ্রমিকদের ছাঁটাই করে তাদের জীবন ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেওয়াটা অত্যন্ত অমানবিক। সরকার থেকে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করতে বলা হয়েছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। কিন্তু এখন পর্যন্ত অনেক শ্রমিকের বেতন পরিশোধ করা হয়নি বরং অনেক প্রতিষ্ঠান এই বৈশ্বিক সংকটকালে খেটে খাওয়া দরিদ্র শ্রমিকদের ছাঁটাই করে তাদের এক নির্মম পরিস্থিতির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী কোনও শ্রমিককে প্রয়োজন অতিরিক্তের কারণে কোনও প্রতিষ্ঠান থেকে ছাঁটাই করতে পারবে, তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই আইনের বিধান মেনে চলতে হবে। বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ১২ এবং ২০-এ লে অফ করার বিধান রয়েছে। ১২(১) অগ্নিকাণ্ড, আকস্মিক বিপত্তি, যন্ত্রপাতি বিকল, বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ, মহামারি, ব্যাপক দাঙ্গা-হাঙ্গামা অথবা মালিকের নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত অন্য কোনও কারণে প্রয়োজন হলে কোনও মালিক যেকোনও সময় তাহার প্রতিষ্ঠানের কোনও শাখা বা শাখাসমূহ আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে পারবেন এবং যে কারণে কারখানা বন্ধের আদেশ দেওয়া হবে তা বিদ্যমান থাকা পর্যন্ত এই বন্ধের আদেশ বহাল রাখতে পারবেন এবং এই ক্ষেত্রে শ্রমিকরা তাদের বেসিক বেতনের অর্ধেক এবং বাড়িভাড়া পাবেন।
এই অন্ধকার সময় হয়তো কেটে যাবে, আবার আলো আসবে, কিন্তু এই চরম দুর্যোগে খেটে খাওয়া শ্রমিকদের অস্তিত্ব বাঁচাতে তাদের ছাঁটাই না করে অন্তত লে অফ অর্থাৎ বেসিক বেতনের অর্ধেক এবং সম্পূর্ণ বাড়ি ভাড়া প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করা প্রয়োজন। তা না হলে ইতিহাস আপনাদের ক্ষমা করবে না।  

লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

 

 

/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ডুবন্ত শিশুকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ গেলো আরেক শিশুরও
ডুবন্ত শিশুকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ গেলো আরেক শিশুরও
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ