X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

রমেক হাসপাতালের সংক্রামক ব্যাধি বিভাগ নিজেই ‘সংক্রমিত’

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর
০৯ এপ্রিল ২০১৯, ২০:১৬আপডেট : ১১ এপ্রিল ২০১৯, ১৩:৪৬

রমেক হাসপাতালের সংক্রামক ব্যাধি বিভাগ (ছবি– প্রতিনিধি)

ভবনের সামনে-পেছনে ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। একমাত্র টিউবওয়েল দীর্ঘদিন ধরে বিকল। শৌচাগার থাকলেও নেই দরজা। সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্তদের আলাদা রাখার কথা থাকলেও রাখা হয়েছে একসাথে। এমনকি, নারী-পুরুষের জন্য আলাদা ওয়ার্ডও নেই। চিকিৎসকেরা আসেন-যান নিজেদের খেয়াল-খুশি মতো।

এই বেহাল দশা রংপুর মেডিক্যাল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের অধীন সংক্রামক ব্যাধি বিভাগের। এটি এখন নিজেই যেন সংক্রমিত।

রংপুর নগরীর সিটি বাজারের উল্টো দিকে পুরাতন সদর হাসপাতালে দুটি ছোট ঘরে রমেক হাসপাতালের সংক্রামক ব্যাধি বিভাগের কাজ চলছে। এটি রমেক হাসপাতালের একটি আলাদা ওয়ার্ড হলেও মূল হাসপাতাল ক্যাম্পাস থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরে।

সংক্রামক ব্যাধি বিভাগের পাশে ময়লা-আবর্জনার স্তুপ (ছবি– প্রতিনিধি)

সরেজমিনে দেখা যায়, পুরাতন সদর হাসপাতালের বেশিরভাগ ভবন দখল করে বসবাস করে আসছেন বহিরাগতরা। আর দু’টি ছোট ঘরে চলছে সংক্রামক ব্যাধি বিভাগের কার্যক্রম। ২০ ফুট বাই ১০ ফুট আয়তনের একটি ঘরে চলছে ডায়রিয়া ও কলেরায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা। পুরুষ ও নারীদের জন্য আলাদা কোনও ওয়ার্ড না থাকায় একটি ঘরেই নারী ও পুরুষ রোগীদের চিকিৎসা চলছে।

গত বৃহস্পতিবার সংক্রামক ব্যাধি বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, একজন করে ওয়ার্ড বয় আর নার্স আছেন; কোনও চিকিৎসক নেই।

কর্তব্যরত নার্স আলেয়া বেগম বলেন, ‘এটাকে হাসপাতাল না বলে গোডাউন বলা যায়। এখানে পানির কোনও ব্যবস্থা নেই। একমাত্র টিউবওয়েল দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। রোগী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অনেক দূর থেকে পানি আনতে হয়। ল্যাট্রিন আছে দুটি, কিন্তু দরজা নাই; ভেঙে পড়ে আছে। সেখানেও পানির ব্যবস্থা নেই। ডায়রিয়া রোগীদের জন্য ১২টি বেড থাকলেও ১০টি বেডে গাদাগাদি করে রোগী আছেন।’

সংক্রামক ব্যাধি বিভাগের পেছনে ময়লা-আবর্জনার স্তুপ (ছবি– প্রতিনিধি)

ওয়ার্ডবয় সালাম বলেন, ‘বিভিন্ন জটিল সংক্রামক রোগে আক্রান্ত রোগীদের আলাদা আলাদা রাখার নিয়ম। কিন্তু জায়গা না থাকায় সবাইকে একসঙ্গে রাখা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতালের সব ঘরে বৃষ্টি হলে পানি পড়ে। তখন রোগীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ভবনের অনেক জায়গায় টাইলস ভেঙে গেছে। পলেস্টার খসে পড়ছে। সেদিকে কারও দৃষ্টি নেই।’ এ ব্যাপারে অনেকবার রমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলেও জানান তিনি।

একটিমাত্র নলকূপও বিকল (ছবি– প্রতিনিধি)

চিকিৎসা নিতে পঞ্চগড় থেকে সংক্রামক ব্যাধি বিভাগে আসা আলী বলেন, ‘পঞ্চগড় হাসপাতালে গেলে আমাদের রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গেলে টিকেট দিয়ে আমাদের এখানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখানে বুধবার (৩ এপ্রিল) রাত ১২টার দিকে ভর্তি হয়েছি। সকালে একজন ডাক্তার এসেছিলেন। আর কোনও ডাক্তার দেখতে আসেনি। নার্স ও আয়ারা আমাদের দেখভাল করেন।’ একই কথা জানান আরও বেশ কয়েকজন রোগী।

বৃষ্টি হলে পানি পড়ে বারান্দায় (ছবি– প্রতিনিধি)

রংপুরের পীরগাছা উপজেলার তাম্বুল পুরের সাহানা বেগম জানান, খাবার স্যালাইন ছাড়া বাকি সব ওষুধ তাদের বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়। পানির ব্যবস্থা না থাকায় অনেক কষ্টে আছেন তারা। হাসপাতালের পেছনের ময়লার দুর্গন্ধে এখানে থাকাটাই দুঃসহ তাদের জন্য।

পুরাতন সদর হাসপাতালের যারা পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকেন, তারা জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই তাদের এখানে থাকার অনুমতি দিয়েছে। তবে তারা কোনও অনুমতিপত্র তারা দেখাতে পারেননি।

পুরাতন সদর হাসপাতালের বেশিরভাগ ভবন দখল করে বসবাস করছেন বহিরাগতরা (ছবি– প্রতিনিধি)

যোগাযোগ করা হলে এসব সমস্যার কথা স্বীকার করেন রামেক হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা, সুলতান আহাম্মেদ। তিনি বলেন, ‘এটি (সংক্রামক ব্যাধি বিভাগে) মূল ক্যাম্পাসের বাইরে হওয়ায় আমরা নজরদারি করতে পারি না। তবে একটি দশতলা ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। সে কাজ শেষ হলে বিভাগটি হাসপাতাল ক্যাম্পাসেই নিয়ে আসা হবে।’

 

/এমএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আরও ২-৩ দিন পর্যবেক্ষণে থাকবে সুন্দরবনের আগুন লাগা এলাকা
আরও ২-৩ দিন পর্যবেক্ষণে থাকবে সুন্দরবনের আগুন লাগা এলাকা
রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলা চালাতে ওআইসির সহযোগিতা চাইলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলা চালাতে ওআইসির সহযোগিতা চাইলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
লাপাতা লেডিস: বিস্ময় জাগানো কে এই তরুণ
লাপাতা লেডিস: বিস্ময় জাগানো কে এই তরুণ
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রেখে পুরস্কার পেলো সানশাইন ব্রিকস
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রেখে পুরস্কার পেলো সানশাইন ব্রিকস
সর্বাধিক পঠিত
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?